সম্পাদকীয় ২...
রাস্তার রাজনীতি
তাইল্যান্ডে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করিতে বিরোধীরা একজোট হইয়া যাবতীয় সংসদীয় মঞ্চ পরিহার করিয়াছেন, সংসদ হইতে ইস্তফা দিয়াছেন এবং অচলাবস্থা সৃষ্টির আন্দোলনে জনসাধারণকে সমাবেশিত করিতেছেন। তাঁহারা যখন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাবাত্রা’র নূতন করিয়া জনাদেশ লওয়ার ঘোষণাকেও প্রত্যাখ্যান করেন এবং একটি অনির্বাচিত ‘জন-পরিষদ’-এর হস্তে ক্ষমতা অর্পণের দাবি তোলেন, তখন স্পষ্ট হইয়া যায় যে, জনাদেশের উপর তাঁহাদের বিশেষ ভরসা নাই, কেননা তাঁহাদের সন্দেহ, নির্বাচন হইলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন সিনাবাত্রার দিকেই যাইবে। সে জন্যই বিরোধী নেতা সুথেপ থাউগসুবান-এর নেতৃত্বে তাঁহারা নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত লইয়া জনজীবন অচল করার, অবরোধ-ধর্মঘটের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে অবতীর্ণ। পরিস্থিতি অতএব জটিল।
রাজধানী ব্যাঙ্কক শহর কার্যত দিনের পর দিন অবরুদ্ধ। অবরুদ্ধ একের পর এক সরকারি মন্ত্রক, দফতর, সচিবালয়। অবরোধকারীরা ‘আরব বসন্ত’র অনুকরণে পথেই তাঁবু খাটাইয়া রাত্রিবাস পর্যন্ত করিতেছেন। সমগ্র অবরোধ কর্মসূচিকে একটা উৎসবের চেহারা দিবার চেষ্টাও নজরে পড়ে। পরিণামে প্রশাসন স্তব্ধ। স্তব্ধ দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড। কাস্টম্স, শেয়ার-বাজার, রকমারি আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান গায়ের জোরে বন্ধ রাখায় তাইল্যান্ডের প্রভূত অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হইতেছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং পর্যটন মার খাইতেছে। বিক্ষোভকারীরা বেশির ভাগই মধ্যশ্রেণির চাকুরিজীবী, ব্যাঙ্ককেই বসবাস করেন, নাগরিক চেতনায় সমৃদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। সিনাবাত্রা ও তাঁহার দলের বিরুদ্ধে তাঁহাদের প্রধান অভিযোগ, এই দল সমগ্র দেশকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করিয়াছে। তাই ইহাকে রাজনীতির মঞ্চ হইতেই বিতাড়িত, নিষিদ্ধ করিতে হইবে। কিন্তু তাইল্যান্ডের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ, বিশেষত শ্রমজীবী মানুষ, গ্রামাঞ্চলের কৃষক ও কারিগর শ্রেণি সিনাবাত্রার সমর্থক। ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী যে নির্বাচন ডাকিয়াছেন, তাহাতেও তাই তাঁহার দলেরই পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই কারণেই দেশের বিরোধী পক্ষ এই ভোটগ্রহণ বয়কট করিতেছে।
তাইল্যান্ডের পরিস্থিতির সহিত অনেকেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অচলাবস্থার সাদৃশ্য খুঁজিয়া পাইবেন। সেখানেও সংসদীয় মঞ্চ, নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বয়কট করিয়া বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া রাস্তায় অবরোধ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ধ্বংসাত্মক রাজনীতি অনুশীলনে নিয়োজিত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ হইতে বিরত থাকিয়া সেই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিবার মধ্যে হাস্যকর স্ববিরোধ আছে। বেগম জিয়াও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে ভোটগ্রহণের অবাস্তব দাবি তুলিয়াছিলেন। পাশ্চাত্যের যে-সব গণতন্ত্র আজ তাঁহার সমর্থনে দাঁড়াইয়াছে, তাহাদের কি নির্বাচিত সরকারের ইস্তফা ও নির্দলীয় তদারকি সরকার কায়েমের পরিষদীয় ঐতিহ্য আছে? তাইল্যান্ডের ক্ষেত্রেও ওই পাশ্চাত্য গণতন্ত্রগুলি অচিরেই প্রধানমন্ত্রী সিনাবাত্রাকে বিরোধীদের অগণতান্ত্রিক দাবির সহিত আপস করিতে চাপ দিতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলিতে থাকিলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কোনও দিনই বৈধতা বা স্থায়িত্ব পাইবে না। কারণ সিনাবাত্রাও এক দিন বিরোধী পক্ষে যাইতে পারেন, যেমন পারেন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। তখন একই কৌশল অবলম্বন করিয়া তাঁহারা গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস তুলিয়া দিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.