|
|
|
|
কেন চুপ ছিলেন রাজকুমার, চাপ কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৪ জানুয়ারি |
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর্দা আরও চড়িয়ে তাঁকে সরাসরি ‘অযোগ্য’ বললেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি তুলল বিজেপি। আর কংগ্রেস পাল্টা বলল, এ সব কথা আগে কেন বলেননি রাজকুমার? শিন্দে বেআইনি কাজ করছেন দেখেও তিনি কেন ক্যাবিনেট সচিব বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাননি? এ তো তাঁর নিজের পদের প্রতি অবিচার!
রাজকুমার সিংহ
|
সুশীলকুমার শিন্দে
|
অবসরের পর বিজেপিতে দিয়েছেন রাজকুমার। সেই ইস্তক শিন্দেকে নিয়মিত আক্রমণ জারি রেখেছেন। গত সপ্তাহে শিন্দে বলেছিলেন, দাউদ ইব্রাহিমকে ভারতে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে কথা হচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর সঙ্গে। আজ সেই দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন রাজকুমার। তাঁর দাবি, এফবিআই এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি। উল্টে দাউদ-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে শিন্দে পুলিশি জেরার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে আজ ফের অভিযোগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, দিল্লি পুলিশের তদন্ত ও নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শিন্দে নাক গলাতেন বলেও এক আগে দাবি করেছিলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব। সে প্রসঙ্গেও আজ সুর এক ধাপ চড়িয়ে তিনি বলেছেন, দিল্লি পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিন্দে যে সব সুপারিশ করতেন, সেখানে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। রাজকুমারের দাবি, শিন্দের বাড়ি থেকে নিয়মিত দিল্লি পুলিশের কমিশনারের কাছে নিয়োগের সুপারিশ করে চিরকুট পাঠানো হত। তাঁকে নাকি এক বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, একটি-দু’টি ক্ষেত্রে তাঁর কাছে অনুরোধ এলে তিনি তা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের থেকে তিনি জেনেছেন, এই ধরনের চিরকুট নিয়মিতই আসত।
শিন্দে অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগের কোনও জবাব দেননি। তবে রাজকুমারের সঙ্গে তাঁর যে বনিবনা তেমন ছিল না, সে কথা আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দিন কয়েক আগে রাজকুমার দাবি করেন, আইপিএল-ক্রিকেট জুয়ার তদন্তে দিল্লি পুলিশ মহারাষ্ট্রের এক ব্যবসায়ীকে জেরা করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে বাদ সাধেন। ওই ব্যবসায়ী টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতেও জড়িত ছিলেন। সেখানেও তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন শিন্দে। আজ রাজকুমার বলেছেন, “ওই ব্যবসায়ী দাউদ-ঘনিষ্ঠ বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট ছিল। ক্রিকেট-জুয়াতেও যে দাউদ ইব্রাহিমের ভূমিকা রয়েছে, তা সবাই জানে।” প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব নাম না করলেও তাঁর ইঙ্গিত যে ব্যবসায়ীর দিকে, সেই শাহিদ বালয়াকে খোলাখুলি ‘দাউদের এজেন্ট’ বলেই উল্লেখ করেছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি বলেন, “মুম্বইয়ে সবাই এ কথা জানে। শাহিদ বালয়াকে দিল্লি পুলিশ জেরা করতে চেয়েছিল।” আর এক বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “এই অভিযোগ সত্যি হলে শিন্দের এক মুহূর্তও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকার অধিকার নেই।”
দাউদকে ভারতে আনার তোড়জোড়ের ব্যাপারেও শিন্দের দাবি উড়িয়ে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, “দাউদ পাকিস্তানে রয়েছে। আইএসআই সুরক্ষা দিচ্ছে। দাউদকে গ্রেফতার করতে হলে পাকিস্তানে ঢুকতে হবে। এফবিআই তাতে সাহায্য করবে, এটা বলাটাই হাস্যকর।” রাজকুমারের বক্তব্য, তিনি যত দিন স্বরাষ্ট্রসচিব পদে ছিলেন, তত দিন এফবিআই এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আর যদি বিদেশের কোনও সংস্থা ভারতকে তৃতীয় একটি দেশে অভিযান চালাতে সাহায্য করবে বলে রাজি হয়েও থাকে, তা প্রকাশ্যে বলা উচিত নয়।
এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক কংগ্রেসও। দলের তরফে বলা হচ্ছে, রাজকুমার সিংহের এই সব অভিযোগই আসলে নিজের রাজনৈতিক জমি তৈরির জন্য। লোকসভা ভোটে বিহার থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন তিনি। তার আগে প্রচারের আলোয় থাকতেই তিনি এমন মন্তব্য করে চলেছেন। দিগ্বিজয় সিংহের প্রশ্ন, “এ কথা কি সত্যি নয় যে, রাজকুমার ইউপিএ সরকারের কাছে তাঁকে অবসরের পরে কোনও পদে বসানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন? এটা কি সত্যি নয় যে, তিনি নীতীশ কুমারের কাছেও একই অনুরোধ করেছিলেন?” তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “চাকরিরত অবস্থাতেই উনি কেন সরকারি ভাবে এই অভিযোগ তুললেন না? কেন ক্যাবিনেট সচিব বা প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন না?” কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রাক্তন আইপিএস-অফিসার তথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেত্রী কিরণ বেদী। তাঁর মতে, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেআইনি নির্দেশ দিলে তা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হয়। না জানানোটাও অপরাধ। অবসরের পরে এ সব বলা উচিত নয়।” |
|
|
|
|
|