প্রাণ বাঁচাতেই ঘর ছেড়ে পালাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মহিলা ও শিশু-সহ দক্ষিণ সুদানের প্রায় ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা ডুবে গেলেন নীল নদের শাখানদী হোয়াইট নাইল-এ। সরকারি সূত্রে খবর, লাগোয়া মালাকাল শহরে রবিবার থেকে সরকার ও বিরোধী পক্ষের ফের তুমুল গুলিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তা থেকে বাঁচতেই তড়িঘড়ি নৌকায় চেপে নদী পেরোনোর চেষ্টা করছিলেন বাসিন্দারা।
তবে তথ্য বলছে, মালাকালে এ হেন সংঘর্ষ এই প্রথম নয়। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত দু’বার শহরটির ‘মালিকানা’ বদলেছে। প্রথম দিকে এর দখল ছিল সরকার-বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে। পরে অভিযান চালিয়ে শহরের দখল নেয় প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের অনুগত সেনাবাহিনী। গত কাল থেকে ফের শহরের দখল নিতে হামলা শুরু করেছে প্রাক্তন ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাছারের অনুগত গোষ্ঠী। আসলে হোয়াইট নাইলের কাছে অবস্থিত মালাকাল শহর ভৌগোলিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের কাছে এ শহর তেলসমৃদ্ধ ‘আপার নাইল’ রাজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। স্বাভাবিক ভাবেই মালাকালের দখল পেলে আপার নাইল-এ ঢুকে পড়াটা আরও সহজ হয়ে যাবে। আর তাই মালাকালের উপর শ্যেনদৃষ্টি বিরোধীদের। একই কারণে শহরের দখল কোনও মতেই ছাড়তে চায় না সেনাবাহিনী।
কিন্তু কেন এই যুদ্ধ? আসলে ক্ষমতায় আসার পর গত জুলাই মাসে রিয়েক মাছার এবং তাঁর গোটা মন্ত্রিপরিষদকে বাতিল করে দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালভা কির। তার পর থেকেই দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ। যা ভয়াবহ চেহারা নিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সুদানে এ যুদ্ধের জেরে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০০০ জন। শুধু মালাকালেই রাষ্ট্রপুঞ্জের ছাউনিতে অন্তত দশ হাজার জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পর সংখ্যাটা রাতারাতি উনিশ হাজারে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। দক্ষিণ সুদানের এক সরকারি আধিকারিকের বয়ানে, “গোটা দেশে হাতে গোনা এমন জায়গা রয়েছে যেখানে সত্যিই বাসিন্দারা নিরাপদ।” তড়িঘড়ি হোয়াইট নাইল পেরিয়ে সে রকমই কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মালাকালের ওই বাসিন্দারা। কিন্তু তা আর হল না। যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে সলিলসমাধি হল তাঁদের। |