পর্দায় তখন টানটান উত্তেজনা। বিঘ্ন ঘটালেন বছর তেতাল্লিশের লোকটি। ক্রমাগত মেসেজ করেই যাচ্ছেন। উষ্মা প্রকাশ করছিলেন আশপাশের অনেকেই। সীমা ছাড়ালেন পিছনে বসে থাকা এক দর্শক। বাগযুদ্ধ থেকে হাতাহাতি। ক্রমে পর্দার উত্তেজনা ছাপিয়ে গেল বাস্তবের ঘটনাক্রম। জামার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল বন্দুক। এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল মোবাইল-মালিকের দেহ।
ঘটনাস্থল ফ্লোরিডার ওয়েসলি চ্যাপেল প্রেক্ষাগৃহ। দুপুর ১টা বেজে ২০ মিনিট হবে। সেখানে তখন চলছে, শীঘ্র মুক্তি পাবে এমন একটি ছবির প্রাক্-প্রদর্শনী। অন্ধকার থিয়েটারে মাঝেমধ্যেই জ্বলে উঠছিল চ্যাড আউলসনের মোবাইল। সেই সঙ্গে আবার কি-প্যাডের আওয়াজ, খানখান করছিল ছবিতে বুঁদ প্রেক্ষাগৃহের নিস্তব্ধতা। পর্দায় তখন টানটান উত্তেজনা। সে দিকে চোখ নেই চ্যাডের। তিনি মোবাইলে মগ্ন। চোখে আলো পড়ছিল পিছনে বসে থাকা কার্টিস রিভসের। ৭১ বছর বয়সি প্রাক্তন পুলিশ অফিসারটি উষ্মা প্রকাশ করেন। ফোন সরিয়ে রাখতে বলেন চ্যাডকে।
কিন্তু কথায় কাজ না হওয়ায় আসন ছেড়ে উঠে পড়েন কার্টিস। নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে অভিযোগ জানাতে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, তাতেও সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কাউকে না পেয়ে একাই গজগজ করতে করতে ফিরে আসেন কার্টিস।
এ বার দুঃখপ্রকাশ করতে এগিয়ে যান চ্যাড। বলেন, “ছোট মেয়েটাকে একটু মেসেজ করছিলাম।” আগুনে ঘি পড়ে চ্যাডের কথায়। হাতে পপকর্নটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিত্কার করতে শুরু করেন কার্টিস। আর তার পরেই সেই চরম মুহূর্ত। জামার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে বন্দুক। গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় চ্যাডের শরীর। লুটিয়ে পড়েন তিনি।
দু’টো আসন পরেই বসে ছিলেন চার্লস কামিং। গোটা পর্বটাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষটা যে এমন হতে পারে, কল্পনাও করেননি। চার্লসের গায়ের উপর লুটিয়ে পড়ল চ্যাডের রক্তাক্ত দেহটা। কোলের উপর বন্দুকটা রেখে ধপ করে বসে পড়েন কার্টিসও। আর্তনাদ করে উঠলেন দর্শকরা। পর্দায় তখনও নিজের মতো চলছে ফিল্মের মারপ্যাঁচ। দর্শক থেকেও নেই।
দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন এক পুলিশকর্তা। বন্দুকবাজকে নিরস্ত করতে ছুটে আসেন তিনি। হাজির ছিলেন দু’জন নার্সও। প্রাথমিক শুশ্রূষা শুরু করে দেন তাঁরা। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মারা যান তিনি। স্বামীকে দু’হাত দিয়ে আগলাতে গিয়েছিলেন নিকোল। জখম হয়েছেন তিনিও। তবে মৃত্যুভয় নেই। সব শুনে বিস্মিত চ্যাড কিংবা কার্টিসের পরিচিতরা। পুলিশে থাকার সময় অনেক বড় বড় অভিযান চালিয়ে ছিলেন কার্টিস। আর চ্যাডের কথা উঠতেই বন্ধু-প্রতিবেশী-পরিজনরা বললেন, “ওঁকে কখনও রাগতেই দেখিনি। মাথাতেই ঢুকছে না, এ কী হল!” শিউরে উঠেছেন দর্শকরাও“ফিল্ম দেখতে এসে জামার ভিতরে বন্দুক!” পরিণতি দর্শকভর্তি প্রেক্ষাগৃহে খুন। হাজতে প্রাক্তন পুলিশকর্তা। |