প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ও বিধবার উপর অত্যাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা, অথচ পুলিশ তাকে ধরছে না, এমনই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন ওই যুবকের মা হাসেনা বেগম। তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে পুলিশ এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আদালতেও তোলা হয়েছে। এমনকী শনিবার অভিযুক্ত ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পু নামে ওই তৃণমূল নেতার আগাম জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও প্রকাশ্যে ওই নেতা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে ধরছে না বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান হাসেনা বেগম। পাপ্পুর এক অনুগামী, মনসুর রহমান মল্লিক ওরফে মানুও ওই ঘটনায় অভিযুক্ত। সেও এখনও অধরা।
বর্ধমানের দুবরাজদিঘি কেঁদুলিপুকুরের বাসিন্দা হাসেনা বেগম জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর ছেলে শেখ সাজেদ মিলে বর্ধমান রেলওয়ে ওভার ব্রিজের কাছে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। শেখ সাজেদ ছিলেন স্থানীয় রেল ওভার ব্রিজ দোকানদার সমিতির আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এলাকার কিছু তৃণমূল মদতপুষ্ট দুষ্কৃতী সাজেদকে দোকানটি বন্ধ করে দিতে চাপ দেয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে সাজেদ ও তাঁর মাকে মারধর করা হয়, দোকানটিও জোর করে বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, পরে সাজেদ দোকান ঘর খুলতে গেলে নগদ দু’লক্ষ টাকা দিতে হবে ও আইএইটিটিইউসি-র সম্পাদকের পদ ছাড়তে হবে বলে জানায় ওই দুষ্কৃতীরা। একমাত্র রোজগারের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনটনে পড়ে গত ৯ নভেম্বর সাজেদ গলায় চাদরের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানেই ১৫ নভেম্বর মারা যান সাজেদ। এরপরে পুলিশ অভিযুক্ত চার জন, ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পু, মনসুর রহমান মল্লিক ওরফে মানু, শেখ আলো ও শেখ স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে হাসেনা বেগমের দাবি। বাধ্য হয়ে তাঁরা আদালতে ওই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে তাঁরা বর্ধমানের এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার কাছে গেলে এসপি-র নির্দেশে পুলিশ শেখ আলো ও শেখ স্বপনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করায়।
হাসেনা বেগমের আরও অভিযোগ, পাপ্পু ও মানুকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা তো করছেই, এমনকী তাঁদের সপরিবারে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। মৃত সাজেদের দাদা শেখ মাজেদকে দুবরাজদিঘিতে ঘিরে ধরে মারধর করা হয় বলেও তাঁর অভিযোগ। হাসেনা বেগম জানান, এই ঘটনার কথা বর্ধমান থানায় জানানো হলে পুলিশ পরের দিন একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ওই দুই নেতা গ্রেফতার না হওয়ায় প্রাণহানির আশঙ্কার ভেতর দিন কাটাচ্ছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন হাসেমা বেগম। তিনি বলেন, “বাড়িতে চড়াও হয়ে ওই দুই নেতা আমাদের প্রায় প্রতিদিনই প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ কেন ওদের ধরছে না, বুঝতে পারছি না।”
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আমরা ওই দুই নেতাকে খুঁজছি। ওরা এলাকায় নেই। পাপ্পুর বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল ওকে পায়নি। আমি নির্দেশ দিয়েছি, অবিলম্বে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করতে হবে। আইনের চোখে সকলেই সমান। ওই দু’জন কোনও মতেই ছাড় পাবেন না।”
তৃণমূলের রাজ্য নেতা তথা বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে দলের কেউ অপরাধ করলে তাকে ছাড়া হবে না। পুলিশ কেন ওই দু’জনকে গ্রেফতার করছে না, বুঝতে পারছি না। আইন তো আইনের পথেই চলবে।” |