|
|
|
|
কাজের লোভ দেখিয়ে দুবাই নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ তরুণীকে
সংবাদ সংস্থা • দুবাই
১৩ জানুয়ারি |
বছর সাতাশের মেয়েটিকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল অনেক। কাজে উন্নতির আর ভাল মাইনের। মুম্বই থেকে তাই মেয়েটি উড়ে গিয়েছিল দুবাই। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি। বিদেশে জোর করে যৌন পেশায় নিয়োগ করা হয়। তার পর আরও যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা। ২৫ দিন ধরে ১৩ জনের কাছে একাধিক বার ধর্ষণের শিকার হতে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বইয়ের খার অঞ্চলের একটি পোশাক বিপণির মালকিন মেয়েটিকে কাজের লোভনীয় প্রস্তাব দেয়। পরে সে-ই তাঁকে নিয়োগ করে যৌন পেশায়।
অঞ্জলি অগ্রবাল নামে ওই মহিলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে খার পুলিশ। ৪০৬ ধারা (বিশ্বাসভঙ্গ) এবং ৪২০ ধারায় (ঠকানো) অভিযোগ আনা হয়েছে অঞ্জলির বিরুদ্ধে। তবে ওই তরুণীর আইনজীবী অবিনাশ দুবে বলছেন, তিনি পুলিশের কাজে সন্তুষ্ট নন। শীঘ্রই আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
গুড়গাঁওয়ের বাসিন্দা ওই তরুণী পেশায় একটি জমিবাড়ি বিক্রি সংস্থায় কর্মরত। ফ্যাশন ডিজাইনে ডিপ্লোমা রয়েছে তাঁর। স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন দুনিয়ায় কিছু করে দেখানো। গত বছর মে মাসে এক বন্ধুর মাধ্যমে পঞ্চাশের অঞ্জলির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। খারে পোশাক বিপণি রয়েছে অঞ্জলির। প্রথম সাক্ষাতেই অঞ্জলি ওই তরুণীকে বলে, দুবাইয়েও তার একটি পোশাক বিপণি রয়েছে। সেই দোকান দেখাশোনা করার জন্য এবং দুবাইয়ে নানা প্রদর্শনী করতে অভিজ্ঞ কাউকে নিয়োগ করা প্রয়োজন। তরুণীকেই প্রস্তাব দেয় অঞ্জলি। জানায় মাসে ৪ লক্ষ টাকা বেতন পাবে সে। লোভনীয় এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান ওই তরুণী।
এর পরেই গণ্ডগোলের শুরু। প্রথমেই ভিসা, বিমানের টিকিট এবং থাকার বন্দোবস্তের জন্য তরুণীর কাছে ১০ লক্ষ টাকা চান অঞ্জলি। টাকার পরিমাণ নিয়ে কিছুটা চিন্তা হলেও বড় কাজ পাওয়ার আনন্দে রাজি হয়ে যান তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, “নিজের কাকার কাছে টাকা ধার করেছিলাম।” তার পর গত বছর জুন মাসে পাড়ি দুবাইয়ে। কিন্তু সেখানকার বিমানবন্দরে নামতেই তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে নেন অঞ্জলি। তাঁকে বলেন, “যে হোটেলে তুমি থাকবে, সেখানেই পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে।” মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ১৭ তলা একটি বাড়িতে। তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, “৩ জুন অঞ্জলি আর তিন মহিলা আমার ঘরে নানা ধরনের পোশাক আর মদ রেখে যান। সেই সন্ধ্যাতেই চার জন লোক ঘরে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় মদ খাওয়া। অঞ্জলি বলেন, ওই চার জন তার বন্ধু।” কিন্তু তরুণীর সন্দেহ হতে শুরু করে তখনই। তাঁর দাবি, “রাত দশটা নাগাদ ছবিটা বদলে যায়। “অঞ্জলি হঠাৎ বলল ওর বন্ধুদের এক জনের আমাকে পছন্দ হয়েছে। তাঁকে ‘খুশি’ করতে পারলে তিন হাজার দিরহাম (৫০ হাজার টাকা) পাওয়া যাবে।” এই কথায় ভয়ঙ্কর রেগে যান তরুণী। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। এর মধ্যে অঞ্জলি তাঁকে মারধরও করেন।
শেষমেশ সত্যি কথাটা জানিয়েই দেন অঞ্জলি। তরুণী বলেন, “অঞ্জলি বলল ২৫ বছর ধরে যৌন পেশা চালাচ্ছেন তিনি। মুম্বই এবং দুবাই পুলিশের বড় কর্তাদের চেনেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তাই ওর বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ জানালে আমাকেই মরতে হবে।” ওই রাতেই আরও তিন জন ধর্ষণ করে তরুণীকে। জুন মাসের শেষ দিকে অন্তত আরও ১১ জন তাঁর উপরে যৌন নির্যাতন চালায়। এই সময়ে সৌভাগ্যক্রমে তাঁকে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেন অঞ্জলি। তরুণী ফিরে আসেন নিজের শহরে।
যথেষ্ট ভেঙে পড়েছিলেন তরুণী। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেন, এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনা উচিত। ফোন করেন আইনজীবীকে। তাঁর অভিযোগ থানায় জানান আইনজীবী অবিনাশ দুবে। দুবের বক্তব্য, “দুবাই পুলিশের সদর দফতরেও ঘটনাটি জানানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ওই হোটেলে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, অঞ্জলির কাছে দু’টি পাসপোর্ট রয়েছে। একটিতে তার নাম অঞ্জলি অগ্রবাল, এবং অন্যটিতে অঞ্জলি বিনোদকুমার দে। পুলিশ একটি পাসপোর্ট আটক করেছে।
অভিযুক্ত অঞ্জলি অবশ্য বলেছেন, “পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে আমি জানি। কিন্তু এফআইআর হয়নি। সব অভিযোগ মিথ্যে। ওই মেয়েটি আমার থেকে টাকা চায়।” |
|
|
|
|
|