রাজ্য প্রশাসন থেকে দলীয় নেতাদের অনুশাসনই সার। অটোর ভাড়া বেড়েই চলেছে। অনেক রুটে সরকারি ভাবে ইউনিয়নগুলি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক জায়গায় সরকারি ভাবে ভাড়া বাড়েনি। কিন্তু অটোচালকেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো এক টাকা কিংবা দু’টাকা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।
রাজ্য সরকার পরিবহণে ভাড়া বাড়ানোর বিরোধী। সেই কারণে, অর্থনীতির সহজ অঙ্ক মেনে জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া বাড়ানোয় এখনও নারাজ সরকার। কিন্তু অটোর ভাড়া বাড়া-কমার উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে, জ্বালানির দাম বাড়লেই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ছে অটোর। যা দেখে বাসমালিকেরা বলছেন, “আমাদের জন্যই সরকারের যত কড়াকড়ি। এর থেকে সরকার আমাদের জন্যও পৃথক কমিটি তৈরি করে দিক। তারা ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে। না হলে এ বার অটোর মতো আমরাও নিজেরাই ভাড়া বাড়িয়ে দেব।”
শাসক এবং বিরোধী কোনও শ্রমিক সংগঠনের নেতারাই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করছেন না। সিটু-র অটো ইউনিয়ন এই দায় চাপাচ্ছে শাসক দলের ইউনিয়নের উপরে। এক সিটু নেতার বক্তব্য, “এখন তো কোনও রুটেই আমরা ক্ষমতায় নেই। ভাড়া বাড়া-কমা ঠিক করা আমাদের হাতেই নেই।”
শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতারা অবশ্য ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বিচ্ছিন্ন ভাবে কেউ কেউ ভাড়া বেশি নিলেও সার্বিক ভাবে ভাড়া বাড়েনি। নতুন বছরের শুরুতেই অটোর গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় ১১ টাকারও বেশি বেড়েছে। আইএনটিটিইউসি-র এক নেতা বলেন, “আমরা যারা গাড়ি চালাই, গ্যাসের দাম বাড়ায় কমবেশি সকলেরই ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের মন্ত্রীর প্রতি আস্থা আছে। আমরাও সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা বাড়ানোর পক্ষপাতী নই।” তবে ওই নেতার বক্তব্য, “বিকল্প পথে অটোচালকদের কী ভাবে রোজগার বাড়বে, তার ভাবনা চলছে।”
নেতারা যাই-ই বলুন, ভাড়া বেড়েছে শহর জুড়েই। যাদবপুর-রানিকুঠি বা যাদবপুর-টালিগঞ্জ রুটে ১-২ টাকা ভাড়া বেড়েছে। ভাড়া বেড়েছে রানিকুঠি-বাঘা যতীন রুটেও। একই চিত্র উত্তরেও।
কী বলছেন বাসমালিকেরা? তাঁদের মতে, অটো যা খুশি করলেও সরকার তা ফিরে দেখে না। বাসের বেলায় যত কড়াকড়ি। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্স’-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অটোচালকেরা নিজেরা ভাড়া বাড়ালেও শাসক-বিরোধী, সব ইউনিয়নই সায় দেয়। অথচ, আমাদের ভাড়া বাড়াতে আন্দোলন করতে হয়। সরকার ভুলে যাচ্ছে, গণ-পরিবহণের ব্যবস্থা আমরাই করি। এ ভাবে চললে রাজ্যে সেই ব্যবস্থাটাই উঠে যাবে।” একই বক্তব্য ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’-এর নেতা দীপক সরকারের। তাঁর দাবি, “অটো কিছু করলে পরিবহণমন্ত্রী দেখতে পান না। আমাদের ক্ষেত্রেই যত মুশকিল। আমাদেরই ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব দিক সরকার। তবে আর অসুবিধে থাকে না।”
দীপকবাবুর অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সোমবার তিনি বলেন, “অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধার চেষ্টা সব সময়েই চালাচ্ছি। কালও আমি অটো ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করব।” |