প্রায় দেড়শো বছর প্রাচীন, স্বাধীনোত্তর ভারতে এই রাজ্যে তিনটি বিভাগীয় শহরের অন্যতম জলপাইগুড়ি। উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’-এর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গেছে এই শহরকে ছুঁয়ে। উত্তরবঙ্গের অঘোষিত রাজধানী শিলিগুড়ি ও অন্য শহরের সঙ্গে এই শহরের রেল-সড়ক যোগাযোগ এখনও অনুন্নত। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ক’টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন থামে, তা বলতেও লজ্জা হয়। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মাথাভাঙা থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস শহরকে এড়িয়ে আসানসোল, দুর্গাপুর, কলকাতা বা ফরাক্কা চলে যায়। শিলিগুড়ি থেকেও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, অসমগামী সরকারি ও বেসরকারি বাস চলে যায় শহরের বাইরে দিয়েই, ধুলো উড়িয়ে। সন্ধ্যার পর শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির বাস পাওয়া ডুমুরের ফুল দেখার মতো। যদিও একটি দুটি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস পাওয়া যায়। শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ডিপো থেকে বাসে ওঠাও বেশ কষ্টকর। জলপাইগুড়ি (টাউন) স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম সন্ধ্যার পর চলে যায় কুকুরের দখলে। কারণ, তার পর ট্রেন চলে না। উত্তরবঙ্গের অন্য শহরের সঙ্গে এর যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনও তুলনা করা যায় না। অথচ জলপাইগুড়ি শহর উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক রাজধানী।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্তাব্যক্তিদের কাছে আবেদন, একটু নজর দিন শতাব্দীপ্রাচীন এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে। শহরে লোকসানে হলেও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার সিটি বাস চলছে, ধূপগুড়িগামী সরকারি বাস চলছে। কিন্তু এই শহরের যোগাযোগকে অন্য্য স্থানের সঙ্গে আরও মসৃণ করতে হলে কিছু কি করা যায় না? উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার যত বাস এই শহরের বাইরে গোশালা মোড় দিয়ে যাতায়াত করে, সেগুলিকে শান্তি পাড়ার সরকারি বাস ডিপোর সামনে দিয়ে চালানোর চিন্তা করুন। কোচবিহার-আসানসোল, মাথাভাঙা থেকে ফরাক্কা, বহরমপুর থেকে কোচবিহার, গঙ্গারামপুর-ধুবড়ি, কোচবিহার-কলকাতা-সহ যত সরকারি বাস জলপাইগুড়ি শহরকে এড়িয়ে যাতায়াত করে, সেগুলোকে শহরের সরকারি বাস ডিপো হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। গোশালা মোড় থেকে শান্তিপাড়া-মাসকলাইবাড়ি-শিরীষ তলা-অসম মোড় হয়ে সব দূরপাল্লার সরকারি বাস যাতায়াত করলে এই শহরের জনগণ যে উপকৃত হবেন, তা বলা বাহুল্য। সরকারি বাসগুলোকে বাড়তি ১ কিমি পথ যাতায়াত করতে হবে না। কিছু দিন পরে যাত্রিসংখ্যা বাড়বে ও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের আয় বাড়বে এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। রায়গঞ্জ শহরের ক্ষেত্রে যদি এ রকম নির্দেশ জারি করা যায়, এ শহরের জন্য কেন যাবে না?
জলপাইগুড়ি শহরের শান্তিপাড়ায় নেতাজি মডার্ন ক্লাবের পাশে পড়ে-থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ফাঁকা জায়গায় যদি পৃথক সরকারি একটি বাস টার্মিনাস তৈরি করা যায়, তবে তা জলপাইগুড়ি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে। সেই বাস টামির্র্নাসের উপর শপিং প্লাজা হবে বলে শোনা গিয়েছিল। যদি তাই হয়, তা যে ধুঁকতে থাকা রাজ্যের বিস্তৃততম উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের পক্ষে লাভজনক হবে, তা অনস্বীকার্য। বিগত কয়েক বছর থেকে এ বিষয়ে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও লালফিতের ফাঁসেই এখনও তা বন্দি। উত্তরবঙ্গের দুয়োরানি এই শহর বলেই কি এই হাল?
জলপাইগুড়ি শহর থেকে নিয়মিত উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের কলকাতা সুপার বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। চালু করতে হবে অসম, সিকিম ও বিহারগামী বাস সার্ভিস। আগে যদিও জলপাইগুড়ি থেকে নিয়মিত বঙ্গাইগাঁও ও বিহারের সিওয়ানে বাস সার্ভিস চালু ছিল। লাভজনক এ সব বন্ধ হওয়া রুটগুলোকে কি আর চালু করা যায় না? গ্যাংটক, দার্জিলিঙ, কালিম্পং বাস সার্ভিস চালু হোক। এ শহর থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ শিলিগুড়ি হয়ে ওই সব জায়গায় যান। জলপাইগুড়ি থেকে সরকারি বাস পরিষেবা চালু হলে পর্যটকরাও উপকৃত হবেন।
লাভের তত্ত্ব ঘেঁটে খাতায়-কলমে পরিকল্পনা করলে তা লাভজনক হয় না। যতক্ষণ না তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ, ক্ষতির বহর তো ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দু’বছর ধরে কর্মীরা নিয়মিত ও পুরো বেতন, অবসরপ্রাপ্তরা পুরো পেনশন পাচ্ছেন না। রাস্তা থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস তো স্রেফ কর্পূরে মতো উবে যাচ্ছে। কিছুই কি করা যায় না?
সন্দীপন রাহা। জলপাইগুড়ি
|
জলপাইগুড়িতে রাজার আমলে এসি এবং পিডি কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। এখন সদর থানা এলাকার বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত এবং শহরাঞ্চলেও বহু মাধ্যমিক বিদ্যালয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কলেজ হয়নি। প্রতি বছর কলেজে নাম ভর্তির সময় বাগ্বিতণ্ডা, মারামারি তাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এ বৎসর শহরাঞ্চলের এবং গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থী এগারো ক্লাসে নাম ভর্তি করাতে গিয়ে বঞ্চিত হয়েছে। দ্রুত একটি কলেজ চালু না-হলে আগামী বৎসর পরিস্থিতি অতি ভয়ঙ্কর হবে। যোগাযোগ যাতায়াতের সুবিধার্থে পান্ডাপাড়া চেক পোস্টের পূর্ব পাশে অথবা পশ্চিম পার্শ্বে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন পষর্র্দ মন্ত্রী, সদর ব্লকের বিধায়ক এবং শহরের পুরসভা বিদ্বজ্জনের দৃষ্টি আকর্ষণে স্থান হিসেবে কলেজটি অতি দ্রুত স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থী অত্যন্ত উপকৃত হবে।
পরেশচন্দ্র রায়। জলপাইগুড়ি |