তাঁর সম্পর্ক নাকি ছিল দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। তাঁর সম্পর্ক নাকি ছিল প্রেসিডেন্টের ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি কখনও বিয়ে করছেন বিশ্বখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলার-কে, কখনও খ্যাতিমান বাস্কেটবল তারকাকে। ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’ সিনেমায় তাঁর সাদা পোশাক যখন সাবওয়ে ভেন্ট-এর হাওয়ায় ফুলেফেঁপে উড়ে যাচ্ছে আর তিনি হাত দিয়ে ঢাকছেন লজ্জা ও পুলক, সেই দৃশ্য যৌন আবেদনের ‘আইকনিক’ প্রকাশ হিসেবে থেকে যাচ্ছে সিনেমার ইতিহাসে। সেই দৃশ্যই ধরা আছে পাম স্প্রিংস-এর ২৬ ফুট উঁচু স্ট্যাচুতে, প্রণয়ীযুগল থেকে বৃষ্টিপালানে-দর্শক যার তলায় খঁুজে নেয় আড়াল, আশ্রয়। ২০১৪-র সমীক্ষায় সেই পোশাকটি পাচ্ছে বিশ্ব চলচ্চিত্রে ‘সেরা আইকনিক পোশাক’-এর সম্মান। তিনি মেরিলিন মনরো। মার্লন ব্র্যান্ডো তাঁর আত্মজীবনীতে গর্ব করছেন, ‘আমারও ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল’!
১৯৫২-৫৩ সালের এক ক্যালেন্ডারে মার্কিন মুলুক দেখে ফেলল অজ্ঞাতনামা এক মডেলের ছবি সুতোবিহীন! মন দিয়ে দেখে সংবাদমাধ্যম বিস্ময় প্রকাশ করল কী আশ্চজ্যো, এ এক্কেবারে মনরোর মতোই দেখতে যে! মনরো হয়তো তখনও হলিউডে ঝড়-তোলা কোনও নাম নন, তাই বলে কেউই তাঁকে চেনেন না, এমনটাও তো নয়। ভরপুর কেলেংকারির আশংকায় মনরোর ঘনিষ্ঠরা ভাবছেন ক্যালেন্ডারের ব্যাপারটা গ্যাটিস দেওয়া যায় কী করে, কিন্তু মনরো সাক্ষাত্কারে সাফ জানালেন, এ ছবি তাঁরই, বছর তিনেক আগে তোলা। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পয়সা ছিল না, তাই ন্যুড পোজ দিয়েছিলেন। এক সাংবাদিক নাকি শুনেটুনে বিরাট হাঁ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ইউ হ্যাড নাথিং অন!’ উত্তরে মেরিলিন স্মিত হেসে, ‘আই হ্যাড দ্য রেডিয়ো অন!’
তবে মেরিলিনের যৌন দীপ্তির সবচেয়ে বড় ‘স্বীকৃতি’ এল যাঁর কাছ থেকে, সে ভদ্রলোক জন এফ কেনেডি। মার্কিন রাষ্ট্রপতি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলানকে যিনি গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্সের মাঝে নির্দ্বিধায় বলে বসতে পারেন একটানা বেশি ক্ষণ নারীসঙ্গ ছাড়া কাটালে তাঁর বড্ড মাথা ধরে যায়! অতঃপর তাঁর দুই মহিলা কর্মীকে নিয়ে বেরিয়ে যান এবং ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এসে আলোচনায় যোগ দেন ‘রিফ্রেশ্ড’ কেনেডি! এঁর সঙ্গে মনরোর আলাপ এক ডিনার পার্টিতে। পর দিনই মনরোর কাছে ফোন যায় অধৈর্য কেনেডির। আসছে মাসে যে তিনি পাম স্প্রিংস-এ যাচ্ছেন, সেখানে মনরোকেও সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেন। ফুটনোটে যোগ করেন, কাবাব মে হাড্ডি হতে সেখানে থাকছেন না কেনেডির স্ত্রীর জ্যাকি! কাট টু পাম স্প্রিংস... লস অ্যাঞ্জেলেসের এক প্রাক্তন আধিকারিক লিখেছেন, মেরিলিনকে দেখে সে দিন খুব রিল্যাক্সড লেগেছিল, পুলের ধারে অত মানুষের সামনে তিনি জাস্ট একটা বাথরোব গোছের ড্রেস পরে ছিলেন।
|
মনরো-কেনেডি সম্পর্ক যখন আন্তর্জাতিক কানাঘুষোর ইস্যু নাম্বার ওয়ান, তখন কেনেডির পঁয়তাল্লিশতম জন্মদিনের পার্টিতে ‘হ্যাপি বার্থডে মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ গেয়ে উঠছেন মনরো, এমন টাইট একটা পোশাক পরে, বলা হয়, মনরোর শরীরেই কাপড়টা ফেলে সেলাই করা হয়েছিল। মোটে ছত্রিশ বছরের জীবনে তিন-তিন বার ডিভোর্সের পাতায় সই করা মনরো নাকি ভালবেসেছিলেন কেনেডিকে। কিন্তু কেনেডির বোধহয় অমন কোমল ব্যাপার স্যাপার জাগেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বইয়ে বলা হয়েছে, কেনেডি যখন এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁকে, মনরো নাকি সরাসরিই মার্কিন ফার্স্ট লেডি-র কাছে গিয়ে সব ফাঁস করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট তাঁকেই বিয়ে করবেন। একটুও বিচলিত না হয়ে কেনেডির স্ত্রী বলেন, ‘খাসা, বিয়ে করো ওকে! চলে এসো হোয়াইট হাউসে। ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব নাও। সব হ্যাপা গিয়ে পড়বে তোমার কাঁধেই।’
হয়তো এ সব কারণেই, বিষাদ থেকেই, ক্রমশ চড়া নেশার ভিতর ডুবে গিয়েছিলেন মনরো। ১৯৬২-র ৫ অগস্ট তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আত্মহত্যা, না হত্যা? সত্যিই ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন, সত্যিই কি তখন নগ্ন ছিলেন? পর দিন নিউইয়র্ক ডেলি মিরর-এর ফ্রন্ট পেজ বলছে: মেরিলিন মনরো কিল্স সেল্ফ... ফাউন্ড ন্যুড ইন বেড... হ্যান্ড অন ফোন... টুক ফর্টি পিল্স... হ্যান্ড অন ফোন? কার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন? সে দিনই তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন না কেনেডির ভাই? কেনেডি ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্কের টেপ রেকর্ডিং কি সত্যিই করেছিলেন এক গোয়েন্দা?
থরথরে খ্যাতিময় জীবন। রগরগে থ্রিলারের শেষ লাইনের মতোই আত্মহত্যা। অপরিমেয় আবেদন-ভরা শরীর, চিরবিরহী হৃদয়। চেষ্টা করলেও এমন চিত্রনাট্য হয়? |