|
|
|
|
বিনোদন |
জয়দেবে ফিল্ম সিটি গড়তে রাজ্যকে প্রস্তাব
অরুণ মুখোপাধ্যায় • সিউড়ি |
|
|
পর্দার ফ্রেম জুড়ে উজ্জ্বল সূর্য। ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙে যেন উঠছে। গ্রামের আনকোরা যুবক তখন উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরেছে— ‘দেখো রে, নয়ন মেলে জগতের বাহার...’।
পরিচালক সত্যজিত্ রায় তাঁর বিখ্যাত সিনেমা ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সূর্যোদয়ের ওই দৃশ্যটি তুলতে ছুটে এসেছিলেন বীরভূমেই। হেতমপুর রাজবাড়ির ছাদ থেকে সেই দৃশ্যগ্রহণ করেছিলেন চিত্রগ্রাহক সৌমেন্দু রায়। চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের একটি বিরাট ঐতিহ্য আগেই ছিল। এ বার জেলায় আস্ত একটি ফিল্ম সিটি গড়তে উদ্যোগ শুরু করেছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই জয়দেব এলাকায় অজয় নদের ধারে ১০০ একর জমি চিহ্নিত করে রাজ্য তথ্য সংস্কৃতি দফতরকে এ নিয়ে প্রস্তাবও পাঠানো হয়ে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অজয় নদের পাড় ঘেঁষা জেলা পরিষদের হাতে থাকা ১০০ একর জমিটিই চিহ্নিত করা হয়েছে। জয়দেবের রাধাবিনোদ মন্দির থেকে ওই জায়গাটির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ওই জমির একটা অংশে রয়েছে ফলের বাগান। ফাঁকা জায়গার খানিকটা অংশে আবার ইউক্যালিপ্টাস ও সোনাঝুরিও লাগানো হয়েছে। বাগানের মধ্যে আছে একটি পার্কও। বাদ বাকি জমি ফাঁকাই পড়ে আছে। বাগানটি আগে লিজে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে জেলা পরিষদ নিজেই তার দেখভাল করে। ওই বাগান অক্ষত রেখে পুরো জায়গাটিকে নিয়েই তাঁরা ফিল্ম সিটি গড়ে তুলতে চান বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায়। গোটা বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মত্স্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলছেন, “রাজ্যের অন্যত্র ফিল্ম সিটি গড়ার ব্যাপারে কিছু সমস্যা থাকলেও আমাদের ওই জায়গাটিতে এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। জেলা পরিষদের ওই জমিটি প্রায় পড়েই রয়েছে। ওখানে ফিল্মসিটি গড়া গেলে বীরভূমের আর্থ-সামাজিক চিত্রই পাল্টে যাবে।” |
|
ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব পঞ্চায়েত এলাকার ১০০ একরের এই
জমিতেই গড়ে ওঠার কথা প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটির। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
চলচ্চিত্রের শুটিং লোকেশন হিসেবে বহু আগে থেকেই পরিচালকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে লালমাটির এই দেশ। এখন তো টেলিভিশনের বহু সিরিয়ালের শুটিংও এখানে হচ্ছে। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার তাঁর প্রথম ছবির শুটিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ইলামবাজারের পলাশি গ্রাম। ওই গ্রামে শুটিং হওয়া ‘বালিকা বধূ’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ‘গণদেবতা’, ‘আলো’, ‘ভালবাসার অনেক নাম’ প্রভৃতি ছবির শুটিংও তরুণবাবু বীরভূমেই করেছিলেন। অন্য পরিচালকদের মধ্যে বিজয় বসুর ‘বাঘিনী’, সত্যজিত্ রায়ের ‘অভিযান’, উত্পলেন্দু চক্রবর্তী পরিচালিত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘দেব শিশু’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’র মতো বহু চর্চিত ছবির শুটিং বীরভূমে হয়েছে। পরিচালকেরা কখনও বেছে নিয়েছেন দুবরাজপুরের মামা ভাগ্নে পাহাড়, কখনও মহম্মদবাজারের দ্বারবাসিনীর প্রাচীন জঙ্গল। কখনও বা বোলপুরের কালিকাপুর কলোনি। শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের সোনাঝুরি জঙ্গলেও সাম্প্রতিক বহু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিয়ালের শুটিং হচ্ছে। চন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “জয়দেবের যে জায়গাটি বাছা হয়েছে, তাতে আমাদের এই লালমাটির দেশের সব রকমের সৌন্দর্যই মজুদ রয়েছে। তাকে ঘিরে একটা ফিল্ম সিটি সহজেই বানিয়ে নেওয়া যায়। আমার আশা, ভবিষ্যতে টলিউড, এমনকী বলিউডের প্রযোজক-পরিচালকেরাও বীরভূমের এই ফিল্মসিটিতে নিজেদের ছবির শুটিং করাতে আগ্রহ দেখাবেন।”
ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক কী রকম?
অজয় নদের এক পাড়ে জয়দেবের ওই চিহ্নিত জমি। অন্য পাড়ে শুরু হচ্ছে বর্ধমান। সড়ক পথে বোলপুর, ইলামবাজার, সিউড়ি, দুর্গাপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার সঙ্গে জয়দেব ভাল ভাবেই যুক্ত। বোলপুর-জয়দেব এই ৩০ কিমি রাস্তায় বাস চলে। ৫০ কিলোমিটার দূরের সিউড়ি থেকে জয়দেব আসার বাস রুট রয়েছে। প্রত্যকটি সড়কই আবার পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। এমনকী, দুবরাজপুরে ঢুকে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কেও পৌঁছে যাওয়া যায়। কলকাতার সঙ্গে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক ধরে ওই প্রস্তাবিত ফিল্মসিটিতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। তা ছাড়া বর্ষা বাদে অন্য সময় অজয় নদের মাঝখান দিয়ে সহজেই দুর্গাপুর যাওয়ার রাস্তা পড়ে। কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন বোলপুর। পানাগড় স্টেশনে নেমেও জয়দেবে আসা যায়। বিধানবাবুর দাবি, “সড়ক ও রেলপথের সঙ্গে ওই জায়গাটি খুব ভাল করেই যুক্ত। ফিল্মসিটিতে আসা নিয়ে কাউকেই কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।”
ওই ফিল্ম সিটি হলে গোটা এলাকার আর্থ-সামাজিক চেহারাই বদলে যাবে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। আশাবাদী স্থানীয় বাসিন্দারাও। সাংস্কৃতিক কর্মী সুভাষ কবিরাজ বলছেন, “ফিল্ম সিটি গড়ে উঠলে এলাকার মানুষের রুটি রুজি উপার্জন নিয়ে ভাবতে হবে না। অনেক নতুন নতুন উর্পাজনের রাস্তা তৈরি হবে। এলাকাটাই পাল্টে যাবে!” একই ভাবে ওই ফিল্ম সিটিকে নিয়ে যথেষ্টই আশাবাদী জয়দেবের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী উত্তম দাস, নিকটতম গ্রাম বালারপুরের শ্যামাপদ ঘোষরা। তাঁদের দাবি, জয়দেব-কেঁদুলির মেলার পরে জয়দেবের ফিল্মসিটি দেখতেও নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করবেন। তাতে এলাকার মানুষের পসরা বাড়বে। অন্য দিকে, স্থানীয় জনুবাজারের ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শমীক কর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া রিয়া দে বললেন, “ফিল্ম সিটি হলে গোটা এলাকার উন্নয়ন হবে। কাজের সুযোগ বাড়বে।”
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশিষ্ট চিত্রকর যোগেন চৌধুরীও বলছেন, “খুব ভাল আইডিয়া। ওখানে ফিল্ম সিটি হলে অজয় নদকে চলচ্চিত্রে ভাল ভাবে ব্যবহার করা যাবে। তা ছাড়া কাছেই শান্তিনিকেতন। সব মিলিয়ে লোকেশন হিসেবে খুবই ভাল।” অন্য দিকে, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী বললেন, “বীরভূম আমার প্রিয় জায়গা। বীরভূমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ওখানে শুটিং করতে অনেক সুবিধা হয়। তবে, কলকাতা থেকে অনেক দূরে হচ্ছে বলে একটা সমস্যা। যদি সেখানে থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তা হলে তো খুবই ভাল প্রস্তাব।”
প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে শুক্রবারই রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের একটি প্রতিনিধি দলের এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষ সমস্যায় তাঁরা আসেননি। এ দিন ফোনে রাজ্য তথ্য সংস্কৃতি দফতরের উপ-অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, জয়দেব-কেঁদুলির মেলা শেষ হলে, তাঁরা ওই জমি পরদর্শনে আসবেন।
|
সহ-প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত |
একান্তে জন্মদিন
সংবাদ সংস্থা • মুম্বই |
শুক্রবার চল্লিশে পা দিলেন হৃতিক রোশন। গত বার একটি প্রমোদতরীতে জন্মদিনটা পালন করেছিলেন। তবে এ বার দিনটা একটু অন্য ভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন বলিউডের এই অভিনেতা। সদ্য স্ত্রী-র সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। তাই দুই ছেলে আর পরিবারের কয়েক জনের সঙ্গে একান্তে থাকতে চান তিনি। অন্য বারের মতো জন্মদিনের দিন সাংবাদিক বৈঠকও করবেন না বলে জানান হৃতিক। |
|
|
|
|
|