ভ্যানরিকশার স্বপ্নেই দম্পতির নব বিবাহ
ত বড় ঘটনাটা চেপে রাখতে পারেনি ছ’বছরের মেয়েটা। গাঁয়ে কথাটা পাঁচ কান করে সে-ই। তার পর থেকে ‘নব’বিবাহিত শিবুপদ দাসের ধরণী-দ্বিধা-হও দশা। বাড়িমুখোই হচ্ছেন না ক’দিন ধরে।
শিবুর দোষ বলতে, দশ বছরের পুরনো বউকে ফের বিয়ে করা। গণবিবাহের আসরে পরিচয় দিয়েছেন অবিবাহিত হিসেবে। তিন সন্তানের পিতামাতার মনে হঠাৎ এমন ইচ্ছে কেন জাগল? শুনেছিলেন, বিয়ে করলে নাকি উপহার দিচ্ছেন গণবিবাহের উদ্যোক্তারা। আস্ত একটা ভ্যানরিকশা, একটা সেলাই মেশিন...। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে একটু স্বচ্ছলতার লোভ বই তো নয়! সামলাতে পারেননি।
বারাসতের কদম্বগাছি দাসপাড়ার বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের শিবু এমনিতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। সংসারে নুন আনার আগেই পান্তা ফুরোয়। তার মধ্যে মা ষষ্ঠীর কৃপায় তিন-তিনটি সন্তান। দুই মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। দিন জেগে রাত জেগে স্বপ্ন দেখতেন, একটা ভ্যানরিকশা কিনবেন। তা হলে হয়তো ফিরবে সংসারের হাল। কিন্তু ভ্যান কেনা তো মুখের কথা নয়। হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও পয়সা জমাতে পারেননি। শুধু স্বপ্ন দেখতেন, একটা ভ্যান হলে...!
এর মধ্যেই খবরটা এল। শিবুর শ্বশুরমশাই বললেন বসিরহাটের প্রান্তিকে গণবিবাহের আসর বসবে। পাত্র-পাত্রীকে দেওয়া হবে ভ্যান, সেলাই মেশিন। কোনও এক চাঁদের হাসির বাঁধ ভাঙা রাতে স্ত্রী সাগরিকা পাড়লেন প্রস্তাবটা। শুনে শিবুর মাথার চুল খাড়া। এত বড় অধর্ম? এয়োস্ত্রী হয়ে সিঁদুর মুছে ফের বিয়ের অভিনয়?
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
সাগরিকা বোঝালেন, “আমরা তো অন্যায় লোভ করছি না। অন্য কাউকেও বিয়ে করছি না। নিজেরাই নিজেদের বিয়ে করছি, ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে।” ধর্মভীরু গাঁয়ের বধূ আরও এক উপায় বাতলালেন। “ভগবানের কাছে না হয় মাথা কুটে ক্ষমা চেয়ে নেব। বলব, সিঁদুর তোলার পাপ নিও না ঠাকুর।” এ কথা-সে কথার পরে স্ত্রীর যুক্তি গৃহকর্তার মনে ধরল।
পাড়া ছেড়ে দাস দম্পতি ক’দিনের জন্য গিয়ে উঠলেন হাড়োয়ার বুড়িপুকুরে সাগরিকার বাপের বাড়িতে। সেখান থেকেই গত মঙ্গলবার শাখা-সিঁদুর মুছে সাগরিকা-শিবু পৌঁছে যান বসিরহাটে গণবিবাহের আসরে। বছর আঠাশের সাগরিকাকে দেখে তখন কে বলবে, তিন বাচ্চার মা। এত বছরের পুরনো বউকে অপাঙ্গে দেখে মনে মনে খুশিই হন শিবু। গণবিবাহের আয়োজকদের মুচলেকা দেন দু’জনে। জানান, তাঁরা বিবাহিত নন। কিন্তু বিয়ে করতে চান। জমা দিতে হয় দু’জনের বিপিএল কার্ড এবং আরও কিছু নথি। মেয়ের বাবা জানিয়ে দেন, এই বিয়েতে তাঁর আপত্তি নেই। বেয়াল্লিশ জোড়া পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে একাসনে বসে মন্ত্র পড়ে বিয়ে হয়ে যায় শিবু-সাগরিকার।
বুধবার বিকেলে লালচেলির শাড়ি, কপালে লম্বা সিঁদুর, কানে সোনার দুল পড়ে নতুন বউয়ের সাজে নতুন পাওয়া ভ্যানে বসেই শ্বশুরবাড়ি ফেরেন সাগরিকা। ভ্যান চালিয়ে আনেন শিবুই। তাঁরও নতুন পোশাক। তা দেখে বছর আটেকের বড় মেয়ে ঝুমা, ছ’বছরের মেজো মেয়ে সোমার ফুর্তি ধরে না। ছোট ছেলে শুভ বছর তিনেকের। সে অবশ্য ঠাহর করতে পারেনি কিছু। বাবা-মায়ের নতুন বিয়ে দেখার উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেনি সোমা। পাড়ার মেয়ে-বউদের কাছে ‘ব্রত ছিল, পুজো দিয়ে এলাম, বাপের বাড়ির কিছু সম্পত্তি পেলাম’ এ রকম কিছু যুক্তি সাজাতে চেয়েছিলেন সাগরিকা। কিন্তু গাঁ-গঞ্জে কথা ছড়িয়ে পড়তে কবেই বা ঢেঁড়া পেটাতে হয়েছে। তারপর থেকে কারও কটাক্ষ, কারও অভিনন্দনবার্তা, কারও মুচকি হাসি, কারও “খাওয়াতে হবে কিন্তু শিবুদা” গোছের মন্তব্যে জেরবার দাস দম্পতি। দু’দিন ধরে বাড়িতেই ফিরছেন না শিবু। গণবিবাহের আয়োজক সংগঠনটি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, আগে কেউ অভিযোগ করেনি বলে এ ব্যাপারে এখন তাদের আর কিছু করার নেই। আর কী বলছেন আইনরক্ষক পুলিশ? উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা এক গাল হেসে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, “স্বামী-স্ত্রী যত বার ইচ্ছে বিয়ে করবে। এতে আমাদের কী করার আছে বলুন তো?”
সম্পত্তির লোভে বিয়ের অভিনয় করছে নায়ক-নায়িকা, এমন দেখা যায় সিনেমায়। তারকারা বিয়ে ভেঙেছেন, পরে পুরনো স্বামীকে বিয়ে করেছেন, এমনও কাহিনি আছে। শিবু-সাগরিকার ‘নতুন’ বিয়ের গল্পে এ সব কিছুই নেই, শুধু একটা ভ্যানরিকশার স্বপ্ন ছাড়া।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.