বড় শখ ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরীক্ষায় গাল ভরা নম্বর পেয়ে পাশ করে ডাক্তারি পড়া যে বেশ কঠিন অচিরেই বুঝে গিয়েছিল সে। তাই সময় নষ্ট না করে স্বপ্ন পূরণের সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিল চাপড়ার ছাত্রটি।
পাড়ার ডাক্তারখানার ‘কম্পাউন্ডার’ কাকুর কাছে কিছু চিকিৎসা-বিদ্যাও রপ্ত করেছিল সে। তবে তা নিছকই হাল্কা জ্বর-সর্দি-কাশির ওষুধ, পেটে ব্যাথার বড়ি, হাত-পা কেটে-ছিঁড়ে গেলে ব্যান্ডেজ বাঁধার পদ্ধতি ইত্যদি।
এলাকায় বিশেষ সুযোগ নেই বুঝে রমাপ্রসাদ মল্লিক পাড়ি দিয়েছিল সুদূর গো-বলয়ে। বিহার, উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত গঞ্জ গাঁয়ে বিদ্যে ফলিয়ে কিঞ্চিৎ বল ভরসাও পেয়েছিল। তার পরেই স্ত্রী-পুত্র, পরিবার ছেড়ে সটান পাড়ি দিয়েছিল রাজস্থানের দৌসা জেলার প্রান্তিক গ্রাম কেশরায়।
সেই গ্রামে জমিয়ে বসে রমাপ্রসাদ। তবে পরিচয় দেয় অরুণ চৌহান। সুদূর সেই গ্রামে ‘ডাক্তার চৌহান’ হয়ে উঠতে বিশেষ সময় লাগেনি তার। তবে দিন কয়েক আগে আচমকাই তার ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্রটি গ্রামবাসীদের নজরে পড়ে যায়। ফাঁস হয়ে যায় গোপন পরিচয়। তাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে মুখিয়া নির্দেশ দেন। রমাপ্রসাদ সঙ্গে করে নিয়ে যায় মুখিয়া-কন্যা দশম শ্রেণির পড়ুয়া কিরণকে।
প্রায় আট দিন ধরে রমাপ্রসাদ ও কিরণের মোবাইল ট্র্যাক করে শেষতক নবদ্বীপ স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে রাজস্থান পুলিশ গ্রেফতার করল রমাপ্রসাদকে। এ দিন দুপুরে নবদ্বীপের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধৃতিমান মণ্ডলের এজলাসে দু’জনকে হাজির করানো হয়। রাজস্থান পুলিশ তাকে চার দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানালে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। ওই কিশোরীকে তার বাড়ির লোক ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ১২ তারিখ দু’জনকেই রাজস্থানের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
নবদ্বীপ থানার আইসি তপন কুমার মিশ্র বলেন, “রাজস্থান পুলিশের তরফ থেকে বুধবার সন্ধে নাগাদ বিষয়টি জানানো হয়। সেই থেকে দু’জনের মোবাইল ট্র্যাক করা শুরু হয়। গভীর রাতে বোঝা যায় ওরা রয়েছে নবদ্বীপ শহরের কুড়ি কিলোমিটারের মধ্যেই। আমাদের অফিসারেরা রাজস্থানের পুলিশ কর্মী ও কিরণের পরিবারের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন খুঁজতে।”
কিরণের কাকা রাম অবতার বলেন, “হঠাৎ দেখি নবদ্বীপ স্টেশনে বসে ওরা। চিনিয়ে দিতেই পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে তার আগে দিল্লি, ইনদওর, উজ্জয়িনী, কাটনি, বিলাসপুর, বর্ধমান, নাদনঘাট, হয়ে নবদ্বীপে আসি। রমাপ্রসাদের দৌলতে আমাদের গোটা ভারত দর্শন হয়ে গেল!” |