হিসাব দেয়নি বহু স্কুল, সর্বশিক্ষায় বরাদ্দ বন্ধ
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য লক্ষ-লক্ষ টাকা দিয়েছিল সর্বশিক্ষা মিশন। কিন্তু বহু স্কুলই টাকা খরচ করতে না পারায় হিসাব দিতে পারেনি। কেউ আবার খরচে অনিয়ম করায় এখন হিসাব মেলাতে পারছে না। একটি বা দু’টি নয়পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৪৮১টি স্কুল ৫০ কোটি টাকার হিসাব দেয়নি এখনও। এই অবস্থায় ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এই খাতে জেলার কোনও বিদ্যালয়কেই টাকা বরাদ্দ করেনি সর্বশিক্ষা মিশন।
পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল বলেন, “বিদ্যালয়গুলির অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য গত ২০০৫-০৬ আর্থিক বছর থেকে সর্বশিক্ষা মিশন বেশ কয়েক দফায় বিভিন্ন স্কুলকে টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা খরচের হিসেব জমা দেননি জেলার বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ভাবে হিসেব জমা না দেওয়া টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। বিদ্যালয়গুলিকে সতর্ক করার পর গত দু’মাসে প্রায় ১১০ কোটি টাকা খরচের হিসেব পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এখনও জেলার প্রায় ৪৮১টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচের হিসাব জমা পড়েনি।”
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠনের জন্য নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি, বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন সংস্কার প্রভৃতি কাজের জন্য গত বেশ কয়েক বছর ধরে অর্থ বরাদ্দ করছে জাতীয় সর্বশিক্ষা মিশন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৩২৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রায় সাড়ে ৬০০টি মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য আবেদনের ভিত্তিতে গত ২০০৫-০৬ আর্থিক বছর থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়কে এক বা একাধিকবার অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ খরচের হিসাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হয় জেলা সর্বশিক্ষা মিশনকে। হিসাব জমা পড়লে পরবর্তী আর্থিক বছরে ফের জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
হিসাব মেলেনি
সাল স্কুল
২০০৫-১০ ২৫
২০১০-১১ ২৪
২০১১-১২ ৫৩
২০১২-১৩ ৩৭৯
নিয়ম আছে নিয়মের জায়গায়। বাস্তবে টাকা নিলেও খরচের হিসাব দেয়নি বহু স্কুল। সেই ২০০৫-০৬ আর্থিক বছর থেকেই এমনটা চলছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। ফলে পরবর্তী আর্থিক বছরে জেলার জন্য বরাদ্দ পেতে সমস্যা হচ্ছিল। এমনকী যারা হিসেব জমা দিয়েছে, তারাও বরাদ্দ পাচ্ছিল না। এই প্রেক্ষিতে স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে গত নভেম্বর মাসে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসাব জমার নির্দেশ দেওয়া হয়। না দিলে ওই সব স্কুলগুলিকে আর অর্থ সাহায্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তারপরেও প্রায় ৬০০টি স্কুলের টাকা খরচের হিসাব পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে কিছু স্কুল টাকা ফেরত দিয়েছে। টাকা ফেরতও দেয়নি, হিসাবও দেয়নি, এমন স্কুলের সংখ্যা এখন ৪৮১।
স্কুলগুলো হিসাব দিতে পারছে না কেন?
অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, নানা ঝামেলায় অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজ করতে না পারায় টাকা পড়ে রয়েছে অ্যাকাউন্টে। খরচ না হওয়ার কারণেই হিসাব দেওয়া যাচ্ছে না। এই নানা ঝামেলার মধ্যে যেমন রয়েছে স্কুলের পরিচালন সমিতির নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল, তেমনই রয়েছে জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা। কোথাও আবার আইনি জটিলতায় কাজ আটকে আছে মাঝপথে। ফলে খরচের হিসাব দেওয়া যাচ্ছে না। খেজুরির বারাতলা হাইস্কুলে যেমন একটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য কয়েক বছর আগেই ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এখনও সেই শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রশাসক প্রকৃতি দত্তরায় জানান, “গত পাচ বছর ধরে বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি নেই। এই নিয়ে মামলা চলায় বরাদ্দ টাকা খরচের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রশাসক নিয়োগ হলেও এখন আর ওই টাকা দিয়ে একটি নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ সম্ভব নয়। আমরা আরও কিছু টাকা চেয়ে জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে আবেদন করেছি।”
বরাদ্দ টাকা বেহিসেবির মতো খরচ করার জন্যও অনেক স্কুল বিপাকে পড়ছে। বিভিন্ন খাতের টাকা এদিক-ওদিক করে ফেলায় এখন আর তারা হিসাব মেলাতে পারছে না।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অসুবিধা থাকলেও মূলত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গড়িমসিতেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয় বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসেব দিয়েছে। আবার বেশ কিছু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ টাকা ফেরতও দিয়েছেন। যারা হিসাবও দেয়নি, টাকাও দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.