একের পর এক তৈরি হচ্ছে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)। ঠিকাদার চেয়ে ডাকা হচ্ছে টেন্ডার। কিন্তু সেতু নির্মাণ শুরুই হয়নি। চিত্রটি হাওড়ার জয়পুরের কুলিয়া ঘাটের।
হাওড়ার জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্নান এবং ভাটোরা এই দু’টি পঞ্চায়েত রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ঘেরা। সে কারণে এটিকে হাওড়ার দ্বীপাঞ্চল বলা হয়। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখানে বসবাস করেন। স্থলপথে যোগাযোগ করতে তাঁদের ভরসা নৌকা। বাসিন্দাদের দাবি মেনে ২০০৬ সালে ওই ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্নান পঞ্চায়েতের কুলিয়া ঘাটে একটি পাকা সেতু নির্মাণের প্রকল্প করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। ওই বছরেই বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে রাজ্যের তত্কালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এই সেতুর শিলান্যাস করেন। ঠিক হয়, সেতুটি তৈরি করতে ঋণ দেবে নাবার্ড। এটি তৈরি হবে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে। ৫ কোটি টাকা ওই বছরেই অনুমোদন করা হয়। জেলা পরিষদ একটি ঠিকা সংস্থাকে কাজের বরাত দেয়। কিন্তু বরাদ্দ কম, সেই কারণ দেখিয়ে কোনও কাজ না করেই রণে ভঙ্গ দেয় ঠিকা সংস্থা। |
পাকা সেতুর অভাবে এ ভাবেই চলে পারাপার। —নিজস্ব চিত্র। |
তারপর থেকে প্রতি বছর টাকা বাড়িয়ে নতুন ডিপিআর করছে জেলা পরিষদ। ২০০৮ সালে সংশোধিত প্রকল্প হয় ৬ কোটি টাকার। কিন্তু এত কম টাকায় কাজ করতে রাজি হয়নি কোনও সংস্থা। ২০১১ সালে ৮ কোটি টাকার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়। তিন বার টেন্ডার দেওয়া হয়। কোনও ঠিকা সংস্থা আসেনি।
এর পরের বছরে ২০১২ সালে ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প করা হয়। নাবার্ড তা অনুমোদনও করে। জেলা পরিষদ টেন্ডার করলে দু’টি সংস্থা মাত্র অংশ নেয়। কিন্তু একটি সংস্থা এই বরাদ্দ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি টাকা দাবি করে। অন্য সংস্থাটি ৪৫ শতাংশ বেশি টাকা দাবি করে। ফলে এ বারেও ভেস্তে যায় সেতু তৈরির পরিকল্পনা। এর মধ্যে জেলা পরিষদে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ফের সেতুর ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির কাজ ফের শুরু হয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টচার্য বলেন, “সেতুটি তৈরি করতে ঠিক যত টাকা লাগবে, তার ভিত্তিতে আমরা বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করছি গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে। নাবার্ডের কাছে সংশোধিত প্রকল্পটি পাঠানো হবে।”
কেন বারবার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা বা নাবার্ডের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরেও কাজ হচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তরে জেলা পরিষদের আধিকারিকের একাংশ জানিয়েছেন, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির অন্তত বছরখানেক বাদে নাবার্ড প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এই সময়ের মধ্যে কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, যে টাকার প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানো হয়, তা থেকে নাবার্ড অন্তত ২০ শতাংশ কম বরাদ্দ দেয়। এই সমস্ত কারণে বরাদ্দ কমে যায় এবং ঠিকা সংস্থাগুলি কাজ করতে রাজি হয় না। আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “যে টাকা কম পড়ে, সেটা তো পঞ্চায়েত দফতর বা জেলা পরিষদ নিজেরাই জোগাড় করতে পারে। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত দফতর ও জেলা পরিষদে কথা বলেছি।”
অজয়বাবু বলেন, “সংশোধিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি চলছে, তারপরেও যদি টাকা কম পড়ে, সেচমন্ত্রী এবং জেলার সাংসদের সঙ্গে টাকার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলব।” |