গোয়েন্দাদের ডেরায় |
কিন্তু গোয়েন্দাদের প্রিয় গোয়েন্দা কে?
খোঁজ নিলেন সংযুক্তা বসু। |
আদি ফেলুদা বংশের প্রতিষ্ঠাতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম পছন্দ কিন্তু ব্যোমকেশ। ‘দূরবীন দ্য টেলিস্কোপ’ ছবিটা ফ্যান্টাসি হলেও সেখানে তিনি ব্যোমকেশই সেজেছেন। এই প্রথম তিনি ব্যোমকেশ। তবু ব্যোমকেশ-ফেলুদার দ্বন্দ্ব চিরকালের। |
ফেলুদা বনাম ব্যোমকেশ |
ব্যোমকেশ যদি হয় ধুতি পাঞ্জাবি। ফেলুদা পাঞ্জাবি-প্যান্ট। বাইরে গেলে জ্যাকেট-জিনসের প্যান্ট।
ব্যোমকেশ সুশ্রী, পেলব বাঙালি। কিছুটা রোম্যান্টিকও। ফেলুদা আবার রাফটাফ। সঙ্গে থাকে পয়েন্ট ৩২ কোল্ট রিভলভার। আর আছে মগজাস্ত্রের খেল। সারা পৃথিবীর খবর তার মাথার মধ্যে কিলবিল করছে।
ব্যোমকেশেরও বুদ্ধি প্রখর। কিন্তু কিছুটা অলস। কোনও অস্ত্রপাতি সে রাখে না। বিরলে বসে বিশ্লেষণটাই চাবিকাঠি। অন্য দিকে হাইপার অ্যাকটিভ ফেলুদা। সব সময়ই কিছু না কিছু করে। কোনও কাজ না থাকলে বেরিয়ে পড়ে কলকাতা শহরের রাস্তায়।
ব্যোমকেশ যদি হয় ঘরকুনো ও মধ্যবিত্ত, ফেলুদা যেন কৌতূহলী পর্যটক। সব দিকে তার নজর। বেপরোয়া হয়েও ডিসিপ্লিনড।
যখন হাতে কোনও কেস থাকে না ব্যোমকেশ পত্রপত্রিকা, খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়ে। আর ফেলুদা খবরের কাগজ তো পড়েই, তার সঙ্গে আধুনিক বিদেশি জার্নাল থেকে জিম করবেট, আকু আকুর মতো অ্যাডভেঞ্চার বই থেকে বিজ্ঞান, অ্যাস্ট্রোলজিসবেতেই তার কৌতূহল। ব্যোমকেশ মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ করে রহস্যের কিনারা করে। ফেলুদা রহস্যের কিনারা করে ‘ডিডাকশন’ দিয়ে। সবাই থাকে তার সন্দেহের তালিকায়। তার পর যুক্তি দিয়ে বিচার করে একে একে বাদ দেয় চরিত্রদের। বাঙালির এই দুই গোয়েন্দার জনপ্রিয়তার মধ্যে যুদ্ধ অনেক দিনের। বেস্ট সেলার তালিকাতেও সেই যুদ্ধ চোখে পড়ে কাগজে। |
গোয়েন্দারা কী বলছেন |
ফেলুদা চরিত্রে প্রথম অভিনয় করার পরও কেন ব্যোমকেশকে পছন্দ করেন সৌমিত্র? উত্তরে তিনি বললেন, “আসলে ব্যোমকেশের মধ্যে একটা বাঙালি বুদ্ধির দীপ্তি আছে। বাঙালিরা ব্যোমকেশের সঙ্গে অনেক বেশি নিজেদের রিলেট করতে পারে। আমি ফেলুদা করলেও খুব অল্প বয়স থেকে ব্যোমকেশের কাণ্ডকারখানার নিয়মিত পাঠক ছিলাম। ভাল লাগত ব্যোমকেশের জটিল মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ।” অন্য দিকে আর এক ফেলু মিত্তির, সব্যসাচী চক্রবর্তীর পছন্দের গোয়েন্দা কিন্তু ফেলুদাই। “ফেলুদাকে গ্রামগঞ্জ কি জঙ্গলে তদন্ত করতে গেলেও মানায়। বলশালী, পেটানো গড়ন, শরীর চর্চা করে। মার্শাল আর্টও জানে। পৃথিবীর সব ঘটনার খবর রাখে। ওর একটা আন্তর্জাতিক অ্যাপিল আছে,” বলছেন সব্যসাচী।
|
|
ছবিতে ক’জন গোয়েন্দা বলুন তো? উত্তর নীচে। ছবি: কৌশিক সরকার। |
তফাত আরও আছে। সব থেকে বড় তফাত ব্যোমকেশ বিবাহিত। স্ত্রী সত্যবতী। তার জীবনে মান-অভিমান- প্রেম-বিরহ আছে। দাম্পত্য কলহ আছে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সে সব বর্ণনা করেছেন রসালো ভাবে। কিন্তু ফেলুদা চিরকুমার। তাই তার তেজস্বী ভাবটাও প্রখর।
আর আবির? খুব শিগগির তিনি সাজতে চলেছেন ফেলুদা। ‘বাদশাহী আংটি’র শ্যুটিং শুরু হবে আর মাসখানেকের মধ্যেই। কিন্তু ফেলু বা ব্যোমকেশকে পছন্দ করলেও সেরা গোয়েন্দার শিরোপা আবির দিতে চান শার্লক হোমসকেই। কারণ শার্লক বেপরোয়া, কখনও বা অ্যারোগেন্ট। স্বাভাবিক হিরোর মধ্যে যে সর্বাঙ্গসুন্দর স্বভাব দেখা যায়, সৌজন্যবোধ দেখা যায় তা শার্লকের মধ্যে অনেক সময়ই হারিয়ে যায়। এই জন্যই সে আবিরের কাছে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে।
এই তিন গোয়েন্দার পাশেই রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। প্রথম জীবনে তিনি তোপসে সেজেছেন। আবার ব্যোমকেশের সহকারী অজিত সেজেও প্রশংসিত। তিনি বলছেন, “ছোটবেলা থেকে ফেলুদা পড়ে বড় হয়েছি। ফেলুদা হল ফিল গুড, মন ভাল করার টনিক। কিন্তু ব্যোমকেশ কঠোর বাস্তব। ব্যোমকেশ পাঠ কখনও বা বিষণ্ণও করতে পারে।” |
এক সিনেমায় বহু গোয়েন্দা |
‘দূরবীনদ্য টেলিস্কোপ’ ছবিতে ব্যোমকেশ-ফেলুদা-লালমোহন-অজিত-তোপসে সবাই একসঙ্গে। সৌমিত্র-ব্যোমকেশের পাশে আছেন সব্যসাচী-ফেলুদা। থাকে তারা এক বাড়িতেই। দু’জনের মধ্যে প্রচণ্ড টক্কর। ফেলুদা, ব্যোমকেশের ক্লায়েন্ট ভাগিয়ে নিয়ে যায়। তাই নিয়ে বেজায় ঝগড়া হয় দুই গোয়েন্দার। খুব মজাদার এই লড়াই। তবে শেষমেশ পাড়ার দত্তবাবুর খুনের কিনারা করতে নামতে হয় ফেলু-ব্যোমকেশ দু’জনকেই। ছবিতে গোয়েন্দাদের নিয়ে পরিচালক যে রসিকতা করেছেন তা দর্শকদের ভাল লাগতে পারে।
এক সিনেমায় বাংলার তাবড় তাবড় গোয়েন্দা, সেটাই চমক। পরিচালক স্বাগত চৌধুরীর ভাবনায় অভিনবত্ব অবশ্যই আছে। গল্পের বুনোটে কৌতূহল বজায় থাকে। যদিও প্রথম পর্বে চিত্রনাট্য আরও টানটান হতে পারত।
তিন কিশোর-কিশোরীর অভিনয় আর একটু শিশুসুলভ হলে ভাল হত। সৈকত মিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা ছবিতে সুন্দর মেজাজ তৈরি করেছে।
|
মোট পাঁচ জন: দু’জন ব্যোমকেশ, তিন জন ফেলুদা,
দু’জন হাফ গোয়েন্দা। একজন অজিত। তিনিই আবার তোপসে। |
|