হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখার খরচ দেবে কে? এই নিয়ে টানাপোড়েনেই ক্রমশ আবর্জনায় ঢাকছে আর জি কর হাসপাতাল চত্বর। সাফাইয়ের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতর বলছে, বকেয়া টাকা না পেলে তাদের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব। এ দিকে, বকেয়া মেটাতে তাঁরা অপারগ বলে জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আর জি কর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গত আড়াই বছর ধরে চত্বর সাফাইয়ের কাজ করত পূর্ত দফতর। কর্মী নিয়োগ ও তদারকির দায়িত্ব ছিল তাদের। খরচ দিত হাসপাতাল। সম্প্রতি পূর্ত দফতর জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা না মেটালে তাদের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব। টেন্ডারও পুনর্নবীকরণ করবে না তারা। এ দিকে, বকেয়া ৩৫ লক্ষ টাকা মেটাতে অপারগ বলে জানাচ্ছে হাসপাতাল। গত জুলাই থেকে আবর্জনা সাফাই নিয়ে চলছে
এই টানাপোড়েন।
এ সবের মাঝেই কাগজ-প্লাস্টিকের কাপ-ডিশ, ঠান্ডা পানীয়ের বোতল, কাগজ, খাবারের প্যাকেট-সহ যাবতীয় সাধারণ বর্জ্যের স্তূপ জমছে হাসপাতালের এ দিক-ও দিক। ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়ছে আবর্জনা। নিয়মিত সাফাই দূর অস্ত্, বছরের প্রথম দিন থেকেই সম্পূর্ণ বন্ধ চত্বর সাফাই। রোগীর পরিজনদের তরফে স্বীকার করা হচ্ছে, খাওয়াদাওয়ার পর যত্রতত্র ফেলা হয় এ সব জিনিসপত্র। তাঁদের দাবি, দীর্ঘ অপেক্ষার পরে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা তাঁদের দেখা সম্ভব নয়। দূর-দূরান্ত থেকে বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগী আসেন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা যে অসম্ভব, তা মানছেন কর্তৃপক্ষও। |
হাসপাতাল সূত্রের খবর, জুলাই থেকে বন্ধ হওয়া সাফাই অভিযান পূর্ত দফতর ফের শুরু করে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের কথায়। ২৮ ডিসেম্বর পূর্ত দফতর কর্তৃপক্ষকে জানায়, বকেয়া টাকা না মেটানোয় নতুন বছর থেকে তারা বন্ধ করে দিচ্ছে কাজ। এ প্রসঙ্গে পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
এই বিপুল বকেয়া কোন খাত থেকে শোধ হবে, তা নিয়ে মাথায় হাত কর্তৃপক্ষের। রোগী কল্যাণ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের কাজে বেতন-সহ খরচ মাসিক দশ হাজার টাকার বেশি হতে পারবে না। আপাতত কর্তৃপক্ষ তিন জন কর্মী দিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই টাকা অনুমোদনের জন্য ও বকেয়া টাকার বিষয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসছেন আগামী ১৫ জানুয়ারি।
কিন্তু চত্বর সাফাইয়ের দায় হাসপাতালের নয় কেন? আর জি কর সূত্রের খবর, হাসপাতালের অনুমোদিত গ্রুপ-ডি সাফাইকর্মীর পদ প্রায় ৪৫০টি। তার মধ্যে খালি প্রায় ২০০টি। সুপার দিব্যেন্দু গৌতম বলছেন, “চত্বর পরিষ্কার পরের কথা। এই বিপুল ঘাটতি নিয়ে ওয়ার্ড পরিষ্কারের কাজ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল। চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত বিষয়টি সমাধানের”।
অন্য দিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, সাফাইকর্মীর প্রায় ২০০টি শূন্য পদ সেখানেও। তবু চত্বর পরিষ্কারের কাজ করেন হাসপাতালের সাফাইকর্মীরাই। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও এন আর এস কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, হাসপাতাল চত্বরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব তাঁদেরই। সাফাইকর্মীর ঘাটতি রয়েছে এই দুই হাসপাতালেই।
পূর্ত দফতরের প্রতি নির্ভরতা কাটাতে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বার্ষিক ১৫ লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠিয়েছেন আর জি কর কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, ওই টাকা মঞ্জুরের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। |