বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই বলতেন, সব পুলিশ খারাপ নয়। যাঁরা সৎ ভাবে কাজ করছেন, তাঁরা বামফ্রন্টের অপশাসনে সামিল হবেন না! বাম সরকারের কুকাজে নিজেদের জড়াবেন না। বিরোধী আসনে গিয়ে সিপিএম-ও এ বার মমতার সরকারের বিরুদ্ধে একই কৌশল প্রয়োগ করল। সরাসরি কোনও আহ্বান না-জানালেও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দিল তারা।
ধর্মতলায় বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএমের সমাবেশ-মঞ্চ থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব প্রশাসনিক আধিকারিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান জমানায় প্রশাসনিক কর্তাদের হেনস্থা হচ্ছে। এ ভাবে সরকার চলে না। আইনের পথে থেকে রাজ্যে প্রশাসন চালানো যাচ্ছে না বলেও সরব হয়েছেন তাঁরা।
আমলাশোলে তাঁর অনুষ্ঠানের মঞ্চ বাঁধার জন্য মঙ্গলবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ওই তিরস্কারকেই নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন সিপিএম নেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবু বলেন, “আমরা ৩৪ বছর পুলিশ-প্রশাসন চালিয়েছি। যে ভাবে মুখ্যসচিব-সহ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে ব্যবহার করছেন, যেন বাড়ির আর্দালি! এ ভাবে প্রকাশ্যে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে ব্যবহার করলে সরকার চালাতে পারবেন?”
পরে পুলিশের প্রতি তাঁর বার্তা, “পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে ছেলেখেলা চলছে! যে পুলিশ অফিসারেরা শুনছেন, তাঁদের বলছি, এ ভাবে কাজ চলে না। প্রশাসনকে ধ্বংস করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে!” আর বুদ্ধবাবু বলেছেন, “প্রশাসনের অবস্থা দেখে খারাপ লাগে! আইনের কোনও শাসন নেই, বলার কেউ নেই!”
আমলা মহলে অবশ্য বিরোধী দলের এই বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে দু’রকম প্রতিক্রিয়া আছে। এক শ্রেণির আধিকারিকেরা মনে করছেন, গৌতমবাবুরা কী বললেন না বললেন, তাতে কিছুই যায় আসে না। আর এক দল এই আলোচনায় ঢুকতেই নারাজ। তবে প্রত্যাশিত ভাবে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
সরকারি উৎসবে দেদার খরচ, হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর নিয়ে তীব্র আক্রমণ (বুদ্ধবাবুর কথায়, “সব হিসাব দিতে হবে এক দিন”) শানালেও সিপিএম এ দিন পূর্বঘোষণা মতোই নবান্নের দিকে যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ছিলেন না, শেষ মুহূর্তে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে দাবিপত্র দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু গৌতমবাবুরা সে পথেও না গিয়ে সমাবেশ-স্থলেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি বিতরণ করেছেন। তবে পাছে সিপিএমের কেউ এসে পড়ে, এই আশঙ্কায় এ দিন দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে নবান্ন, তার আশেপাশের সব রাস্তায় থিকথিকে পুলিশ মোতায়েন ছিল। সাদা পোশাকের পুলিশ, বাহিনীর বড় কর্তা থেকে কম্যান্ডো বাহিনী পর্যন্ত মজুত ছিল! |