|
|
|
|
অষ্টম শ্রেণির স্কুল উন্নীত হবে মাধ্যমিকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ হওয়ার পর এলাকায় মাধ্যমিক স্কুলের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত বহু পড়ুয়ার। সেই সমস্যা মেটাতে কয়েক বছর আগে সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় চালু করা হয়েছিল আপার প্রাইমারি স্কুল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২০০৮-০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত চালু হওয়া ২৪৭টি আপার প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে অনেক স্কুলেই এখন ষষ্ঠ, সপ্তম এমনকী অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা হচ্ছে। আবার বেশ কিছু আপার প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা ইতিমধ্যে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে গিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির পর পড়ার সুযোগ না থাকায় তাদের অন্য হাইস্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে এ বার যে সব আপার প্রাইমারি স্কুল কমপক্ষে তিন বছর আগে চালু হয়েছে ও যথেষ্ট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, সেগুলিকে মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিল সর্বশিক্ষা মিশন।
এর ফলে ওই সব আপার প্রাইমারি স্কুলে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের অষ্টম শ্রেণির পরও পঠন-পাঠনের সুযোগ তৈরি হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে চিঠি দিয়ে জেলায় চালু থাকা আপার প্রাইমারি স্কুলগুলির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট-সহ যে সব স্কুলকে মাধ্যমিকে উন্নীত করা প্রয়োজন, তার প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল বলেন, “জেলার চালু হওয়া আপার প্রাইমারি স্কুলগুলির কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, বর্তমান পরিকাঠামোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। স্কুলগুলির কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য আসার পর তা পর্যালোচনার করে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”
মূলত যে সব এলাকায় এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানেই আপার প্রাইমারি স্কুল চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ব্যবহার করে এই সব আপার প্রাইমারি স্কুল চালু হয়। পড়ানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চুক্তির ভিত্তিতে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা রাজ্যে মোট ৬০৯১টি আপার প্রাইমারি স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৩৯৬২টি আপার প্রাইমারি স্কুল চালু হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৩৪০টি আপার প্রাইমারি স্কুল চালুর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ২০০৮-০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ২৬৩টি আপার প্রাইমারি স্কুল চালুর অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ২৪৭টি আপার প্রাইমারি স্কুল চালু হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের দান করা জমিতে সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক সাহায্যে ওই সব আপার প্রাইমারি স্কুলের ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই সব আপার প্রাইমারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ শুরু হয়েছে। এ দিকে, এই সব আপার প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। কিন্তু স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে একটি মাত্র ঘরে একাধিক ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে হচ্ছে। রয়েছে পরিকাঠামোগত আরও নানা সমস্যা। আবার বেশ কিছু স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছে। তাদের দূরবর্তী এলাকায় অন্য হাইস্কুলে পড়াশোনা করতে যেতে সমস্যা হচ্ছে। যেমন, পটাশপুর -১ ব্লকের কাকুরিয়াডাঙা জুনিয়র হাইস্কুল চালু হয়েছে ২০১০ সালে। ইতিমধ্যে ওই আপার প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছে। শিক্ষক কালীপদ সামন্ত বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ না থাকায় ওই সব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে অমর্ষি হাইস্কুলে যেতে হবে।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “জেলায় চালু হওয়া আপার প্রাইমারি স্কুলগুলির মধ্যে বেশ কিছু স্কুল ইতিমধ্যে চার-পাঁচ বছর পার করেছে। ওই সব স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পর পড়ার সুযোগ না থাকায় ফের অন্যত্র পড়তে যেতে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। সর্বশিক্ষা মিশনের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই সমস্যা দূর হবে। সর্বশিক্ষা মিশনের নির্দেশিকা মেনে তাই আমরা ইতিমধ্যে জেলার আপার প্রাইমারি স্কুলগুলি কত দিন চলছে, কতজন ছাত্র-ছাত্রী সেখানে পড়াশোনা করছে ও বর্তমানে স্কুলের কতগুলি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি।” |
|
|
|
|
|