সাইবেরিয়াকে কালই হারিয়ে দিয়েছিল শিকাগো। তাপমাত্রার রেকর্ড পতন জারি থাকল মঙ্গলবারও। মেরু-ঘূর্ণাবর্ত বা ‘পোলার ভর্টেক্স’-এর তাণ্ডবে আমেরিকার নানা প্রান্তে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২১ জনের।
প্রত্যাশা মতোই গত কাল মেরু-ঘূর্ণাবর্ত এগিয়েছে আমেরিকার দক্ষিণ আর পূর্ব দিকে। তার ফলে তাপমাত্রার রেকর্ড পতন দেখেছে নিউ ইয়র্ক, আটলান্টা, আলাবামা, ন্যাশভিল, বার্মিংহামের মতো এলাকা। কোথাও ফুটন্ত জল নিমেষে জমে যাচ্ছে। কোথাও আবার প্রচণ্ড ঠান্ডায় ফ্রাইং প্যানেই জমে যাচ্ছে সদ্য তৈরি পোচ। এর মধ্যেই জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা দফতর জানিয়েছে, ডাকোটার মধ্য ও উত্তর অংশে বুধবার তাপমাত্রা নামতে পারে শূন্যের থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়ার নীচে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, শিকাগোর চিড়িয়াখানায় মেরু ভালুকদেরও নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হচ্ছে না।
গোটা আমেরিকা জুড়ে এই রেকর্ড তাপমাত্রা পতনের ঠিক কারণটা কী? এ বিষয়ে স্পষ্ট দু’টি শিবির তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পরিবেশবিদেরা ‘পোলার ভর্টিক্স’-এর জন্য মূলত বিশ্ব উষ্ণায়নকেই দুষছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীদের একাংশ আবার এই মতের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, শীতের এই সময়টায় প্রতি বছরই উত্তর মেরুতে মেরু-ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। এটা নতুন কোনও পরিস্থিতি নয়। বিজ্ঞানীদের আরও প্রশ্ন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য কোনও এলাকার তাপমাত্রা কমার কী সম্পর্ক? উষ্ণায়নের ফলে বরং তাপমাত্রা বাড়তে পারে। কমবে কী করে? সদুত্তর দিতে পারেননি পরিবেশবিদেরা। ফলে বিভিন্ন সায়েন্স জার্নালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। |
হাড় হিম করা ঠান্ডায় বন্ধ গাড়ি। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন
এক জরুরি পরিষেবা কর্মী। নিউ ইয়র্কে। ছবি: রয়টার্স। |
সোমবারের মতো কালও ভীষণ ভাবে ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবা। গোটা দেশে হাজার হাজার উড়ান বাতিল হচ্ছে। শুধু শিকাগোর দু’টো বিমানবন্দরেই মোট ১২০০টি উড়ান বাতিল হয়েছে। বিমান সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, এত ঠান্ডায় জ্বালানি ভরতে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সেই সঙ্গে রয়েছে কুয়াশা আর তুষারপাতের জন্য দৃশ্যমানতার অভাবও। ফলস্বরূপ হাজার হাজার উড়ান বাতিল হচ্ছে দেশ জুড়ে। কোথাও কোথাও চলছে প্রচুর দেরিতে। বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে রয়েছেন প্রচুর যাত্রী। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, বলতে পারছেন না কেউই।
রেল ও সড়ক পথের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। বড় বড় সড়কগুলিতে দু’ফুট পুরু বরফ। রেল লাইনও জমে বরফ। প্রশাসন এমনিতেই খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করছে। কিন্তু তার মধ্যেও যাঁরা বেরোচ্ছেন, দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। শীতের দাপটে যে ক’জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে পথ দুর্ঘটনার মৃতের সংখ্যা নেহাত কম নয়। রেল পরিষেবার অবস্থাও একই রকম। শিকাগোগামী অ্যামট্র্যাকের তিনটি ট্রেন গত কাল থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বাস বা গাড়ি করে আটক যাত্রীদের শিকাগো পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে।
তবে এর মধ্যে আশার বাণী শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আগামী কাল থেকে শীতের ছোবল কমবে বলে জানাচ্ছে তারা। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এ সপ্তাহের শেষে।
|