কাজ শুরু হয়েছিল বেশ দ্রুত গতিতে। এখনও নানা জায়গায় ডাঁই করে পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কাটোয়া-আমোদপুর লাইনে ন্যারোগেজ থেকে ব্রডগেজ হওয়ার কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাস দু’য়েক আগে রেলের তরফে চিঠি দিয়ে কাজের ‘গতি কমিয়ে’ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার পর আগস্ট মাস থেকেই ওই লাইনের কাজ বন্ধ। তবে সরকারি ভাবে ওই কাজের ‘গতি কমানোর’ নির্দেশ এসেছে গত ১১ নভেম্বর। পূর্ব রেলের ডেপুটি মুখ্য বাস্তুকারের (৩) সই করা চিঠিতে জানানো হয়েছে, নতুন আর্থিক বছর প্রায় চলে এসেছে। এই মুহূর্তে ওই লাইনের গেজ পরিবর্তনের জন্য কোনও টাকার সংস্থান নেই। পর্যাপ্ত টাকার সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত ছোটখাট নির্মাণ করতে পারে ঠিকাদার সংস্থা। রেলের এক বাস্তুকার বলেন, “মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে টাকার টানাটানি শুরু হয়। অগস্ট মাস পর্যন্ত কোনওরকমে চলে। তারপরে আর টানতে পারেনি ঠিকাদার সংস্থা। রেলের কাছে ইতিমধ্যেই ওই ঠিকাদারের কয়েক কোটি টাকা পাওনা আছে।” |
২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৫২ কিলোমিটার কাটোয়া-আমোদপুর লাইনের টেন্ডার ডাকে রেল দফতর। ওই পথকে ৬টি ভাগে ভাগ করে টেন্ডার ডাকা হয়। আমোদপুর থেকে লাউঘাটা ব্রিজ (এ ও বি সেকশন) পর্যন্ত ৬৫ কোটি টাকা, লাভপুর থেকে কীর্ণাহার (সি সেকশন) ২০ কোটি, কীর্ণাহার থেকে কান্দরা (ডি সেকশন) ২০.৫৭ কোটি, কান্দরা থেকে পাঁচুন্দি (ই সেকশন), ও পাঁচুন্দি থেকে নবগ্রাম হল্ট (এফ সেকশন) ২৪.৭৩ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় মানুষজনের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন মিলিয়ে ওই লাইনের প্রাথমিক খরচ ধরা হয় আনুমানিক ১৬০ কোটি। রেল সূত্রে জানা যায়, তিন বছরের মধ্যে ওই লাইনে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল রেল দফতর। প্রাথমিক কাজ ১৮ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারদের জানিয়েও দিয়েছিল রেল। কিন্তু কাজ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের আশ্বাস, “এপ্রিল মাস থেকে আবার ওই লাইনের গেজ পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে।”
ভাল-মন্দের স্মৃতি বিজড়িত কাটোয়া আমোদপুর ছোট লাইন দিয়ে শেষ বারের মতো ট্রেন ছুটেছিল ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। তখন তার বয়স শতায়ু হওয়া থেকে চার বছর দূরে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গেজ পরিবর্তনের কাজ শুরু করে রেল। ওই দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫২ কিলোমিটারেই মাটির প্রথম স্তরের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় দ্বিতীয় স্তরে মাটির কাজ শেষ করে লাইন পাতার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু কালভার্টের কাজ করা হয়েছে। লাউঘাটা ব্রিজ সম্প্রসারণেরও কাজ চলছে। বর্ধমানের কেতুগ্রামের নিরোল গ্রামের বাসিন্দা আশিস রায় সম্প্রতি আরটিআইয়ের মাধ্যমে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। আশিসবাবুর দাবি, “ওই লাইনটিকে বৈদ্যুতিকরণ করার প্রস্তাবও রয়েছে। অথচ টাকার অভাবে প্রাথমিক কাজটুকুও শেষ করতে পারছে না রেল।” |