আগে সতর্ক-বার্তা জারি করেও বিশেষ কাজ হয়নি। লোকসভা ভোটের বছরে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব ছাত্র সংগঠনের জন্য ফের শৃঙ্খলার দাওয়াই দিলেন।
আগে দলের নেতৃত্বের সতর্কতা সত্ত্বেও শিক্ষা ক্ষেত্রে একের পর এক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি)। এ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরুর মুখে ফের টিএমসিপি-কে বিশৃঙ্খলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষ। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। লোকসভা ভোটের আগে যাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোনও ভুল পদক্ষেপ দলীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় না ফেলে, তার জন্য তাদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিনদুয়েক আগে পার্থবাবু টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কোনও ‘প্ররোচনা’য় পা দেওয়া যাবে না। গণতান্ত্রিক ভাবে যাতে সব পক্ষই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ পায়, সে দিকে খেয়াল রাখতেও বলা হয়েছে টিএমসিপি-কে। লোকসভা ভোটের আগে গায়ের জোরে নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ছাত্র সংসদ দখলের মধ্য দিয়ে ছাত্র-যুবদের মধ্যে তৃণমূলের উন্নয়ন-বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পার্থবাবু।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন পর্ব তো বটেই, তা ছাড়াও কোনও ভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার আবহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে দিকেও ছাত্র সংগঠনকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পার্থবাবুর বক্তব্য, “বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাইরের দাদাদের এনে গোলমালের চেষ্টা বা কোনও রকম উস্কানিমূলক আচরণ করতে পারে। সেই প্ররোচনায় কোনও ভাবেই পা না দিতে আমাদের ছাত্র সংগঠনকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে।” গত কয়েক দিনেই মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজ, বহরমপুর কলেজ বা মালদহের চাঁচল কলেজে গোলমালে ছাত্র পরিষদের পাশাপাশি টিএমসিপি-রও নাম জড়িয়ে গিয়েছে। এগুলিকে অবশ্য ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কোথাও কোথাও আবার টিএমসিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, টিএমসিপির মধ্যে এসএফআই অন্তর্দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা করছে! টিএমসিপি-র সভাপতি শঙ্কুর দাবি, “শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্যের কোনও শিক্ষায়তনে কোনও গোলমাল হচ্ছে না।”
এ বার আলাদা আলাদা দিনে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শিক্ষকেরা যাতে নির্বাচনের দিন কোনও ভাবে হামলার শিকার না হন, তার জন্য সাধারণ নির্বাচনের কায়দায় পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করতে প্রশাসনিক স্তরের এই উদ্যোগে এ বার ছাত্র সংসদ দখলের লড়াইয়ে গোলমাল কমবে বলে মনে করেন টিএমসিপি-র উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “গণতান্ত্রিক ভাবে ও নির্বিঘ্নে ভোট করতে প্রশাসনিক পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলি বিশৃঙ্খলা না করলে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট সম্ভব।” এর পরেও টিএমসিপি-র কোনও পদক্ষেপে যদি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তা তৃণমূল বরদাস্ত করবে না বলে সাফ জানানো হয়েছে। বৈশ্বানরের বক্তব্য, “টিএমসিপি-র কোনও ইউনিটের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা বা ভুল পদক্ষেপের অভিযোগ উঠলে সেই ইউনিটকে জবাবদিহি করতে হবে।”
আগে এমন বার্তাতেও বিশৃঙ্খলা এবং অশান্তি এড়ানো যায়নি। এ বার তৃণমূল নেতৃত্ব কড়া হাতে রাশ ধরতে চাওয়ার পরে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয় কি না, কলেজ-ভোটেই তার পরীক্ষা! |