|
|
|
|
রাস্তা তৈরি নিয়ে সংঘর্ষ কেশপুরে, হেনস্থা পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নতুন রাস্তা তৈরি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায় কেশপুরের মুগবাসান এলাকায়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সামান্য সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। কেশপুর থানার ওসি’ও হেনস্তার শিকার হন। রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর লোকজন মেদিনীপুর-ঘাটাল, ভায়া চন্দ্রকোনা সড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলায় বহু বাস-লরি সারি দিয়ে এই রাজ্য সড়কের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে। দুপুরে কেশপুরের বিডিও’র হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। ফের ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ অবশ্য হেনস্তার কথা মানতে চায়নি। |
|
কেশপুরের মুগবসানে বিক্ষুব্ধদের একাংশের অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র। |
সম্প্রতি রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচটি করে রাস্তার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রত্যন্ত গ্রাম ও কৃষিক্ষেত্র থেকে মূল রাস্তা সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ দিন আমলাশোলে এসে প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী যখন আমলাশোলে আসেন, তার আগেই ওই প্রকল্পে নতুন রাস্তা নির্মাণ ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় কেশপুরে। কেশপুরে সব মিলিয়ে ৭৫টি নতুন রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। তার অন্যতম মুগবাসান গ্রাম পঞ্চায়েতের রোলারপাট থেকে মুণ্ডুলিকা রাস্তা। গ্রামবাসীর একাংশের বক্তব্য, নতুন এই রাস্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ, অদূরে একটি রাস্তা রয়েছে। জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হলে এলাকার প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তা ছাড়া, যাঁদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা, তাঁদের অনেকের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। রাস্তার কাজ বন্ধ রাখার দাবিতে সকালে এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। একাংশ গ্রামবাসী বিক্ষোভে সামিল হন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী নতুন রাস্তার পক্ষে রয়েছে। অন্য একটি গোষ্ঠী তার বিপক্ষে। বিপক্ষের দিকেই অধিকাংশ গ্রামবাসী রয়েছেন। এর জেরেই বাধে গণ্ডগোল। তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “রাস্তার কাজে বাধা দেওয়া উচিত হয়নি। যাঁদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা, তাঁরা আগে নো অবজেকশন দিয়েছেন।” অবশ্য তাঁর দাবি, “এটা দ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নয়। রাস্তা নির্মাণ নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। পরে তা মিটেও যায়!”
অন্য দিকে, তৃণমূলেরই জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “চাষের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছিল। তাই গ্রামবাসী বাধা দিয়েছেন। গ্রামবাসীর ক্ষোভ স্বাভাবিক। রাস্তা তৈরির আগে জমির মালিকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল।” তাঁর কথায়, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, ওই রাস্তা তৈরির কোনও দরকার নেই। কারণ, অদূরে একটি রাস্তা রয়েছে। অন্য দিকে আরও একটি রাস্তা রয়েছে।” একই মত দলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি অরুণ পাল-এর। তাঁর কথায়, “রাস্তা তৈরির আগে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল।”
পুলিশ কী হেনস্তার শিকার হয়েছে? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির মন্তব্য, “বড়বাবুর গায়ে হাত পড়েছে বলে শুনেছি।” কেশপুর থানার ওসি দয়াময় মাঝি অবশ্য হেনস্তার কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। ওই এলাকায় একটা গোলমাল হয়েছিল। তাই গিয়েছিলাম। পরে সব মিটে গিয়েছে। পরিস্থিতি ঠিকঠাকই আছে।”
একই মত কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতারের। তাঁর কথায়, “নতুন রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ওই এলাকায় একটা গোলমাল হয়। পরে অবশ্য সব মিটে গিয়েছে।” গোলমালের পর অবশ্য রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘনঘন গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীও। গত রবিবারই কেশপুরের দামোদরচকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। দু’জন গুরুতর জখম হন। গত আড়াই বছরে চার-চারবার ব্লক সভাপতি বদল হয়েছে কেশপুরে। তা-ও গোষ্ঠী সংঘর্ষে দাঁড়ি টানা যায়নি। এ সবের ফলে কী মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছচ্ছে না? তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “ঠিক কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।” |
|
|
|
|
|