|
|
|
|
বনাঞ্চলে স্বশাসিত সংস্থা ছাড়পত্র দেবে: সুপ্রিম কোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দেশের কোনও অরণ্য এলাকায় শিল্প গড়তে হলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আর পরিবেশের ছাড়পত্র দিতে পারবে না বলে নির্দেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। একটি স্বশাসিত নজরদার সংস্থা ওই ছাড়পত্র দেবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন বেঞ্চ। বেঞ্চের নির্দেশ, ওই সংস্থা গড়া হল কি না, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কাছে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে।
২০১১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারকে ওই ধরনের একটি সংস্থা গড়তে নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার মানেনি। উল্টে নির্দেশটি খারিজ করার জন্য তারা গ্রিন বেঞ্চের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে বলে, বনাঞ্চলে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ আইন মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বর্তমান ব্যবস্থাই যথেষ্ট। কিন্তু এই যুক্তি মানেনি তিন সদস্যের গ্রিন বেঞ্চ। কেন্দ্রের দাবিতে অনাস্থা প্রকাশ করে সোমবার তারা জানিয়েছে, অরণ্য এলাকায় শিল্প স্থাপন করতে গিয়ে কোনও সংস্থা পরিবেশ আইন ভাঙছে কি না, তা এ বার থেকে আর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দেখবে না। দেখবে নজরদার সংস্থা।
ওই নজরদার সংস্থা কী কী করবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে রয়েছে
(ক) অরণ্য রক্ষা আইনের আওতায় প্রস্তাবিত শিল্পের পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া
(খ) অরণ্য এলাকায় ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পসংস্থাগুলি পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়মকানুন মানছে কি না, তার নজরদারি করা এবং
(গ) যে সমস্ত শিল্পসংস্থা অরণ্য এলাকায় প্রয়োজনীয় পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানছে না, তাদের জরিমানা করা। বিভিন্ন রাজ্যে ওই নজরদার সংস্থার শাখা খোলা প্রয়োজন বলেও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদই এই বিষয়টি দেখে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী শিল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রক এবং রাজ্যের পরিবেশ দফতর। এই নিয়মে অনেক সময়েই ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাব কাজ করে বলে অভিযোগ একাধিক পরিবেশকর্মী ও সংগঠনের। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নতুন এই স্বশাসিত সংস্থা তৈরি হলে ওই ধরনের প্রভাব অনেকটাই কমবে বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেকের মতে, এই সংস্থা যে হেতু কেন্দ্রের অধীনে স্বশাসিত হবে, তাই তার বার্ষিক রিপোর্ট সংসদে পেশ করা হবে। ওই সংস্থার উপরে সংসদও নজরদারি করতে পারবে।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দাবি, ওই নজরদার সংস্থাকে নির্বাচন কমিশনের মতো ক্ষমতা দেওয়া উচিত। থাকা উচিত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীও। না হলে ওই সংস্থাকে কেউ আমল দেবে না বলেই মনে করেন তিনি। রাজ্য বন দফতরের মুখ্য বনপাল বিনোদ যাদবের মতে, “ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, গোয়া, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে ইতিমধ্যেই পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। তাই দেশে সবুজ এলাকা বাড়িয়ে তোলার জন্য এমন সংস্থা তৈরি খুবই প্রয়োজন।”
বিনোদবাবুর কথায়, “দেশে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা টেলিফোন নিয়ন্ত্রণ কমিশন গড়ে আখেরে লাভই হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও একই রকম উপকার হবে বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত।” সুভাষবাবু বলেন, “এই বাহিনীতে পরিবেশ সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পরিবেশকর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ারও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ এই কাজে উৎসাহ রয়েছে, এমন মানুষই তা ঠিকঠাক ওই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।” |
|
|
|
|
|