|
|
|
|
হঠাৎ নেতাদের তলব প্রিয়ঙ্কার, শুরু জল্পনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৭ জানুয়ারি |
প্রশ্নটা শুনে ক’দিন আগে রাহুল গাঁধী হেসে বলেছিলেন, “এটা ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন না!” রাজীব-তনয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সক্রিয় রাজনীতিতে কবে নামছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা? শেষ পর্যন্ত সরাসরি প্রিয়ঙ্কাকে সেই প্রশ্ন করার ঝক্কি আর পোহাতে হল না কাউকে। লোকসভা ভোটের আগে রাহুলের নেতৃত্বকে তুলে ধরার জন্য ১৭ তারিখ কংগ্রেসের মহা অধিবেশনে বড় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগেই আজ কংগ্রেসের কৌশল কক্ষে সহসা আবির্ভাব ঘটল প্রিয়ঙ্কার! ১২ নম্বর তুঘলক লেনে রাহুলের সরকারি বাসভবনে আজ দুপুর থেকে একে একে ডেকে পাঠানো হল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের। অথচ রাহুল সেখানে ছিলেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতেই সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল থেকে শুরু করে জনার্দন দ্বিবেদী, দিগ্বিজয় সিংহ, অজয় মাকেন, মধুসূদন মিস্ত্রি, জয়রাম রমেশদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করলেন প্রিয়ঙ্কা।
কী আলোচনা করলেন তিনি? যে হেতু প্রত্যেকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন রাজীব-কন্যা, তাই আলোচনার বিষয়বস্তু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বাইরে প্রকাশের ঝুঁকি নেননি কেউই। তবে দলের একাধিক শীর্ষ নেতার কথায়, আলোচনা কী হল সেটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এটাই যে, ভোটের আগে কংগ্রেসের কৌশল রচনায় শেষমেশ প্রবেশ ঘটল প্রিয়ঙ্কার। লোকসভা ভোটে রাহুল যখন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বৃহত্তম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন, তখন দাদার পাশে এসে দাঁড়ালেন বোন। এমনিতেই প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম নেই। অনেকে তাঁর মধ্যে ইন্দিরা গাঁধীর ছায়া দেখেন। কংগ্রেসের কারও কারও মতে, ভোটে সেই বিষয়টিও কংগ্রেসের পক্ষে ইতিবাচক হতে পারে।
গাঁধী পরিবার ঘনিষ্ঠ এক কংগ্রেস নেতার যদিও ব্যাখ্যা রাহুলের এখন এমন এক জনকে প্রয়োজন, যাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা রয়েছে। যিনি স্পষ্ট সাদাকে সাদা বলবেন, কালোকে কালো। কোনও ভাবেই বিভ্রান্ত করবেন না রাহুলকে। সেই কাজটাই করবেন প্রিয়ঙ্কা। তা ছাড়া সনিয়া-রাহুল যখন প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন, তখন দিল্লিতে বসে ব্যবস্থাপনার গুরুদায়িত্ব সামলাবেন তিনি। রাজীব-সনিয়ার এই মেয়ে যে ভয়ঙ্কর টাস্ক-মাস্টার, তা দলের অনেকেই জানেন।
বস্তুত, রাহুলকে পরামর্শ দেওয়ার কাজটি প্রিয়ঙ্কা বহুদিন ধরেই করছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। লোকসভায় রাহুল যত বার বক্তৃতা দিয়েছেন, তত বার দর্শকাসনে বসে থেকেছেন প্রিয়ঙ্কা। এমনকী সেখান থেকে রাহুলকে চোখের ইশারায় তাঁর ইঙ্গিত দেওয়ার মতো ঘটনাও সাংবাদিকদের নজর এড়ায়নি। তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এতটা সক্রিয় ভূমিকায় এর আগে দেখা যায়নি প্রিয়ঙ্কাকে।
যদিও এর পরেও প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে প্রধান কৌতূহলটা রয়েই যাচ্ছে। এ বার কি তিনি লোকসভা ভোটে প্রার্থী হবেন? এই প্রশ্ন ওঠার সঙ্গত কারণ রয়েছে। একে তো উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে রায়বরেলীর মাটি আঁকড়ে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানকার ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন। তার একটা কারণ হতে পারে যে, গত বিধানসভা ভোটে রায়বরেলী লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস হেরেছিল।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অনেক নেতার দাবি, ১৭ তারিখে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করে দলীয় সভাপতি করে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আসন্ন ভোটে সনিয়া ?হয়তো আর প্রার্থীই হবেন না। তখন মায়ের কেন্দ্র, রায়বরেলীতে প্রিয়ঙ্কার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। যদিও সেই সম্ভাবনা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। তাঁদের যুক্তি, প্রিয়ঙ্কা যদি দিল্লিতে রাহুলের কৌশল রচনায় সাহায্য করেন, তা হলে ভোটে লড়বেন কী ভাবে? তা ছাড়া, প্রিয়ঙ্কা প্রার্থী হলে পরিস্থিতির কথা ভেবেই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারি খুঁচিয়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি।
এর পাশাপাশি রয়ে যাচ্ছে আরও একটি আশঙ্কাও। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের বক্তব্য, প্রিয়ঙ্কা ভোটে লড়লে তাঁর সঙ্গে রাহুলের তুলনা টানার সুযোগও ছাড়বে না নরেন্দ্র মোদীর দল। এই ভাবেই ভোটারদের বিভ্রান্ত করে তুলতে চাইবে তারা। এবং এটাই রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে প্রিয়ঙ্কার ইতস্তত করার সবথেকে বড় কারণ বলে জানাচ্ছেন দশ জনপথের ঘনিষ্ঠরা। সেই কারণেই আজ প্রিয়ঙ্কার ডাকা বৈঠক নিয়ে হইচই শুরু হতেই কংগ্রেসের তরফে তা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। এমনকী পরে তাদের তরফ থেকে এমন বোঝানোরও চেষ্টা হয়েছে যে, রাহুলও ওই বৈঠকে ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রিয়ঙ্কার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ধন্দ এখনও কাটেনি।
কংগ্রেস সূত্রের দাবি, ১৭ তারিখের মহা অধিবেশনের আগে সংগঠনে কিছু রদবদল হবে। সে বিষয়েই আজ আলোচনা হয়েছে। দিগ্বিজয় সিংহ, মুকুল ওয়াসনিক, শাকিল আহমেদ, মধুসূদন মিস্ত্রি এঁরা সকলেই ভোটে লড়বেন। তাই সংগঠনের দায়িত্ব থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। কাজেই তখন পরিবর্তে কাকে কাকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে বা বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েই আজ আলোচনা হয়েছে। মুখপাত্র পদে নতুন মুখ বাছার বিষয়টিও বৈঠকে উঠেছে। যদিও পরে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ হেসে বলেন, “রায়বরেলী-অমেঠির গ্রামীণ সড়ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” অজয় মাকেনের বক্তব্য, সনিয়া-রাহুলের প্রচারসূচি স্থির করার জন্য বৈঠক ডেকেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। আবার জনার্দন দ্বিবেদীর কথায়, “প্রিয়ঙ্কা অনেক দিন ধরেই কংগ্রেসের সদস্য। তিনি রায়বরেলীতে কাজও করছেন। তিনি যদি কংগ্রেসের কিছু নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, তাতে ক্ষতি কী?”
কিন্তু এ সব গোল গোল জবাব আর কে শুনতে চেয়েছে! আসল কথা হল, নেতাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। রাহুল নন! |
|
|
|
|
|