|
|
|
|
শঙ্করের পরের স্টেপ |
এ বার নতুন পাহাড়। নতুন চ্যালেঞ্জ। ছোট পর্দায় দেব। মহাগুরুর বদলে। শ্যুটিং দেখলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হয়েছে?
প্রশ্নটা যে একেবারেই আশা করেননি দেব, তা নয়। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’য়ের সেট। জি বাংলা-র রিয়্যালিটি শো সিজন ৮-এর প্রথম দিনের শ্যুটিং। যা দেখানো হবে বৃহস্পতিবার প্রাইমটাইমে।
কিন্তু সেখানে মহাগুরু অনুপস্থিত।
রয়েছেন ক্যাপ্টেন দেব।
সিলিং থেকে টাঙানো ‘ডি’ লেখা ‘প্রপ’ ধরে ঝুলছেন তিনি। চারপাশ থেকে ঝলসে উঠছে রংমশালের রোশনাই।
দর্শকদের উত্তেজনা তুঙ্গে।
পরিচালক বলছেন, “মোর এনার্জি।”
আর সঙ্গে সঙ্গে স্লোগানে ফেটে পড়ছে সেট: ‘ডি’ ফর ডান্স। ‘ডি’ ফর দেব।
প্রথম টেকেই ওকে।
স্টেজ থেকে নেমে এসেই একগাল হাসি। ‘শুভ নববর্ষ’ জানিয়ে হেঁটে চলে গেলেন নিজের মেকআপ রুমে।
প্রশ্নটা আবার মনে করিয়ে দেওয়াতে কোনও অস্বস্তি চোখে পড়ল না। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
“এখনও ফোন করা হয়নি। এত দিন ‘চাঁদের পাহাড়’ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আজ তো প্রথম দিনের শ্যুট। এর পর মিঠুনদাকে ফোন করব,” বলেন দেব।
তা ‘চাঁদের পাহাড়’ মুক্তির আগে তো বলেছিলেন যে, সিনেমাটা নিজের প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড আর নাতি-পুতিদের দেখাতে চান...
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই বলেন, “আরে, এক্স-গার্লফ্রেন্ড ছবিটা দেখে ফোন করেছিল। জিজ্ঞেস করল জাতীয় পুরস্কারে ছবিটা পাঠানো হচ্ছে কি না? আমি বললাম হচ্ছে।”
নতুন গার্লফ্রেন্ডকে? “উফ্! না... সবাইকে দেখাতে চাই। গোটা বাংলা যেন দেখে এই প্রোগ্রামটা। এই অনুষ্ঠানটাও আমার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে কোনও দিন টেলিভিশনে কাজ করিনি। অফার এসেছিল। ‘বিগ বস বাংলা’ আর ‘কোটি টাকার বাজি’র জন্য আমার কাছে অফার ছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। ‘দাদাগিরি’তে এসেছিলাম। তবে সে তো অন্য ভূমিকায়। এটা একদম আলাদা। ফিল্মের শ্যুটিং আর টিভিতে কাজ করার ধরনটাও অন্য রকম। আমি আস্তে আস্তে রপ্ত করছি। আসল কথা হল, এগোতে তো হবেই। না হলে আমি তো একটা সমতল জায়গায়ই থেকে যাব,” বলেন দেব।
কোন অবতারে রিস্ক বেশি? ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের শঙ্কর? নাকি ক্যাপ্টেন দেব? “‘চাঁদের পাহাড়’য়ের রিস্ক অনেক বেশি ছিল। ওটা কাজ না করলে লোকে আমাকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলত। আমি ‘না ঘর কা, না ঘাট কা’ হয়ে থাকতাম। এই প্রোগ্রামে তো আমার রোলটার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারি। সিনেমাতে লোকে বলে যে, দেবের ডায়ালগ ডেলিভারি নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু আমার নাচ নিয়ে তো কেউ খুঁত ধরে না। সুবিধা হল আমি নাচ জানি বলে টেকনিক্যালি কমেন্ট করতে পারব,” বলছেন দেব।
মনে হয় না এখন এমন সব কাজ নিচ্ছেন যাতে বারে বারে তুলনা চলে আসছে? যেখানে প্রত্যাশা তুঙ্গে? এই যেমন ‘ডিবিডি’-র অ্যাঙ্কর... “আমি কিন্তু শো-য়ের অ্যাঙ্কর নই। শো-য়ের অ্যাঙ্কর তো ভিকি। আমি হলাম মেন্টর। ২৩ জন প্রতিযোগী আছে। আমি তাদের ক্যাপ্টেন,” বলেন দেব। তবে মিঠুনের জুতোয় পা গলাচ্ছেন বলে অনেকেই এ বার তাঁর দিকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে তাক করে রয়েছেন। চলো দেব-য়ের ভুল ধরি গোছের একটা ভাব... “মিঠুনদার শো-য়ের ফরম্যাট আর আমার শোয়ের ফরম্যাট আলাদা। মিঠুনদা ছিলেন ম্যাজিসিয়ানের ভূমিকায়। আমি কিন্তু সে সব করছি না। ওই শোটা ছিল বাচ্চাদের জন্য। এখানে কিন্তু বড়রা অংশগ্রহণ করবে,” বলেন দেব।
আর সেই খাটিয়া কুমার? ওরফে কেকে? যার সঙ্গে মিঠুনের সব সময় ঝগড়া হত? যে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব সময় ‘রচু-রচু’ করে ডাকত?
না, এই শো-তে কোনও ভূত নেই। তাই ভূতের ভবিষ্যৎ-ও নেই।
ওদিকে প্রথম পারফর্ম্যান্সও শেষ। হারনেস থেকে ঝুলে নাচছেন দুই প্রতিযোগী।
দেব নিজের সিট ছেড়ে উঠে এসে প্রশ্ন করলেন জুটিকে।
বিচারক নৃত্যশিল্পী মধুবনী, বলিউড কোরিওগ্রাফার যোগেশ আর অভিনেত্রী নুসরত জাহান একে একে নিজেদের মতামত দিলেন। |
দেবের পছন্দ |
অমিতাভ বচ্চন
ব্যক্তিত্বটা
দারুণ লাগে। |
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
সফিস্টিকেটেড
ও চার্মিং! |
শাহরুখ খান
রসবোধ আর
এক্স-ফ্যাক্টর। |
সলমন খান
ওর মতো কেওড়ামিটা
করতে পারলে
মন্দ হবে না। |
মিঠুন চক্রবর্তী
জানেন দর্শককে কী
ভাবে মাতানো যায়। |
|
শট শেষের পর দেব বললেন, “নাচ তো আর শুধু টেকনিক্যাল ব্যাপার নয়। উপর থেকে নীচে ও ভাবে ঝুলে পড়তে গেলে নিজেদের মধ্যে একটা কেমিস্ট্রি দরকার। একজন ডান্সার তখনই আর এক জনের ওপর নিজের জীবনকে তুলে দিতে পারে, যখন সেই কেমিস্ট্রি আর বিশ্বাসটা থাকে। হারনেস নিয়ে ও ভাবে ঝুলে পড়তে গেলে সেই কেমিস্ট্রি দরকার। আমি নিজে এটা বুঝি। যখন আমি ডেট করতাম, তখন এই ধরনের গানের দৃশ্যে শ্যুট করে আমি সেটা বুঝেছি। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানি যে কতটা প্র্যাকটিস আর পরিশ্রম করলে তবে এই রকম একটা নাচে পারফেকশন আনা যায়।”
তবে এমন তো হতেই পারে যে বিচারকরা বেশ কঠোর কোনও মন্তব্য করলেন? হয়তো পারফর্ম্যান্সটা দেবের ভাল লাগল, কিন্তু নুসরতরা অন্য কথা বললেন? তখন দেবের ভূমিকা কী হবে? কোমর বেঁধে ঝগড়া করবেন? “না, না, আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। আমি ওদের মেন্টর। স্ট্রিক্ট হতে পারব না। তবে আমি চাইব যে, যা বলব তাতে যেন ওদের উন্নতি হয়। কারও সঙ্গে মতের মিল না হলে আমি শুধু এক গাল হেসে দেব... ব্যস!”
হাসির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কথা উঠল, দেবের পাঞ্চলাইন নিয়ে। সেগুলো লেখাও হয়েছে দেবের সিনেমার মতো। ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা’ বলছেন না কাউকে, কিন্তু কারও পারফর্ম্যান্স ভাল লাগলে বলছেন, “ফাটাফাটি জমে ক্ষীর/ পারফর্ম্যান্স চৌচির।”
আবার শ্যুটিং শুরু। ১৮টা ক্যামেরা চারিদিকে। একদিনে শ্যুটিং হবে দু’টো এপিসোড। সেটে প্রপ হিসেবে ব্যবহার করা হল এক ঝাড়বাতি। কিন্তু নাচের শেষে কাচের একটা বাতি ভেঙে চৌচির। স্টেজ থেকে তা পরিষ্কার করার সময় ছোট একটা ব্রেক।
দর্শকদের মধ্যে এক ঝাঁক কচিকাঁচাও এসেছিল শ্যুটিং দেখতে। তারা নাকি দেব-য়ের ‘বড়’ ফ্যান। বড়জোর পাঁচ কী ছ’বছর বয়স।
কিন্তু দেবকে দেখে কোমর দুলিয়ে সে কী নাচ!
সেটের মধ্যেই গুজবও ছড়িয়েছে যে, শো-টা করার জন্য তিনি নাকি প্রচুর অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। গোটা সিজনটা করতে প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার কাছাকাছি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে! টাকার কথা শুনে দেব শুধু বলেন, “হ্যাঁ, টাকাটা একটা বড় ফ্যাক্টর নিশ্চয়ই। কিন্তু কত পাচ্ছি, তার থেকেও আমার কাছে বড় রিওয়ার্ড যদি শো-টা হিট হয়, বাচ্চাদের উন্নতি হয়।”
এত রিয়্যালিটি শো-য়ের রমরমা চার দিকে। কী ভাবে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে প্রেজেন্ট করবেন তিনি? “আমি মহাগুরু নই। মিঠুনদা আমার রোল মডেল। তবে আমি কাউকে হুবহু কপি করব না। আই হ্যাভ মাই ওন থিং। মানুষ তখনই লোকেরটা চুরি করে যখন তার নতুন কিছু থাকে না। আমার তো সবে সাত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে হল। তার মধ্যেই নতুন নতুন কাজ করে যাচ্ছি। এর পর ‘বুনো হাঁস’-য়ে আরেকটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে ইলেকশনের পর ওখানে গিয়ে শ্যুটিংটা শেষ করব। তবে এর মাঝে ‘ডিবিডি’ শিডিউলটা এমন যে আমি শহরের বাইরে যেতেই পারব না,” বলছেন তিনি।
আরও একটা পারফর্ম্যান্সের শ্যুটিংয়ের জন্য আবার ডাক।
প্রতিযোগীর পছন্দের নাচ ‘শাড়ি কে ফল সা’ গানের সঙ্গে। শাহিদ কপূর আর সোনাক্ষীর সাম্প্রতিকতম হিট গান সেটা। শত্রুঘ্ন সিংহকে নকল করে দেব ‘খামোশ’ বলে উঠলেন। শুধু কমেন্ট নয়, মাঝেমধ্যে অ্যাঙ্কর ভিকির লেগ পুল করতেও ছাড়লেন না তিনি। অভিনয় করে দেখাতে বললেন কী ভাবে এক হাতে ফুল আর অন্য হাতে গুলতি নিয়ে প্রোপোজ করবেন তিনি! শেষে নিজেই তাল মিলিয়ে নাচলেন ‘শাড়ি কে ফল সা’-র তালে তালে।
টেলিভিশন শ্যুটিং করাটা বেশ ক্লান্তিকর। প্রথম দিনই তো সকাল ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শ্যুটিং চলল। তার পর আবার প্রায় দু’ঘণ্টা ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরা।
এ সব ছাড়াও আরও এক বড় সমস্যা হল সেটের ভেতরেও ফোনের কানেক্টিভিটি থাকে না। তার অর্থ হল ব্রেক থাকলেও সেটে বসে থাকলে বিশেষ কারও সঙ্গে মিনিটে মিনিটে কথা বলা যাবে না! কখন মেক আপ রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে পাবেন। তার পর তো পরিচিত গলা শোনা।
অসুবিধে হচ্ছে না? “না, একদম না। খুব শান্তিতে আছি।”
কিন্তু ব্রেকের মধ্যে ফোনে কুটকুট মেসেজ করার হিড়িক যাঁরা দেখেছিলেন তাঁরা সে কথা কি বিশ্বাস করবেন?
পুনশ্চ: শ্যুটিং শেষে মিঠুনকে ফোনটা করেছিলেন দেব।
তা কী ভাবে কথা শুরু হল? “প্রথমেই হ্যাপি নিউ ইয়ার বললাম। তার পর বললাম আগে তোমার আশীর্বাদ দাও। সেটা পেলে আমি জানি অনেক কিছুই জয় করতে পারব,” বলেন দেব।
মিঠুন কোনও উপদেশ দিলেন না তাঁকে? “আমার সঙ্গে মিঠুনদার খুব ভাল সম্পর্ক। ওঁকে বললাম, আমি তোমার জুতোয় পা গলাতে পারব না। সাতটা সিজন ধরে রাখা তো আর এমনি এমনিই সম্ভব নয়! মিঠুনদা আমাকে বললেন, ‘তুই মাটির ছেলে। সে ভাবেই থাক। মজা কর। তা হলেই দেখবি সব ঠিক থাকবে!’” |
দেবের চ্যালেঞ্জ |
• এমজি-র ক্যারিশমার সঙ্গে লড়াই।
• ছোট পর্দার শ্যুটিং স্টাইলে অভ্যস্ত হওয়া।
• টিআরপি পড়তে না দেওয়া।
• প্রতিযোগীদের ভাল টিম লিডার হওয়া।
• ডায়ালগ ডেলিভারিতে রসবোধের ছোঁয়া রেখে নতুনত্ব আনা। |
|
|
|
|
|
|