তৃণমূলের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত পাত্রসায়র
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ফের তেতে উঠল পাত্রসায়রের বালসি ১ পঞ্চায়েত এলাকা। রবিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় মারামারি হয়। এক মহিলার শ্লীলতাহানি ও বামিরা গ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে দলেরই এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জখম হয়েছেন ছ’জন। দু’পক্ষই সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ কাউকে ধরেনি।
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে সিপিএমের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন তৃণমূলের সংঘর্ষ লেগে থাকত পাত্রসায়রে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে কিছুটা শান্তি ফিরলেও ইদানীং ফের সেই অশান্তি ফিরে এসেছে। তবে এখন তৃণমূলের নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষ হচ্ছে। দল সূত্রে খবর, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পাত্রসায়রের যে দুই তৃণমূল নেতা একসঙ্গে থাকতেন, সেই স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় ও নব পালের মধ্যে এখন সদ্ভাব নেই। ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রভাব বেড়েছে। অন্য দিকে, নিজের সীমিত ক্ষমতা দখলে রাখতে চান দলের জেলা কমিটির সদস্য নব পাল।
আর এই নতুন সমীকরণেই দু’পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই মারপিট বাধছে। বামিরা গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা নববাবুর অভিযোগ, “রবিবার রাতে দলের অঞ্চল কার্যালয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় এলাকার কিছু দুষ্কৃতী। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বিশ্বজিৎ সাহা, সাগর বাগদী, মহেশ্বর বাগদীরা। সেই সময় ওই কার্যালয়ে থাকা দলের কিছু কর্মীকে ওরা মারধর করে তিনটি মোটরবাইক, ১২টি সাইকেল ভেঙে দেয়। কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে টেলিভিশন-সহ কিছু আসবাব সামগ্রী তারা ভেঙে তছনছ করে। তার আগে ঠাকুরহাটি গ্রামের বাসিন্দা দলের সমর্থক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধর করে তাঁর বোনের শ্লীলতাহানি করে ওরা।” তাঁর আরও অভিযোগ, দলের সক্রিয় কর্মী মৌকুচি গ্রামের বাসিন্দা সমীর বাগদী, হাঁসিপুকুর গ্রামের শীতল বাউরিকেও সে দিন সন্ধ্যায় বেধড়ক মারধর করে ওই বাহিনী। তিনি জানান, ওই দুই আহত কর্মীকে পাত্রসায়র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁদের কলকাতায় পাঠানো হয়।
এলাকায় স্নেহেশবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত বিশ্বজিৎ সাহা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমি কোনও গণ্ডগোলে ছিলাম না। কারও শ্লীলতাহানিও করিনি। নব পালের লোকেরাই বরং আমাদের দলের নিরীহ দুই সমর্থককে প্রথমে মারধর করে। দলীয় কার্যালয়ে হামলা বা ভাঙচুর আমরা কেন করতে যাব?’’ তাঁর অভিযোগ, নববাবুর অনুগামীরা ওসব করে এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। তৃণমূল কর্মী সাগর বাগদীর অভিযোগ, “এলাকায় বহু মানুষের উপরে অত্যাচার করে মোটা টাকা জরিমানা আদায় করেছেন নব পাল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা। আমাকেও মারধর করেছে ওরা। দিন দিন নব পালের জনসমর্থন কমছে দেখে এখন আমাদের নামে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা। এলাকার মানুষ সব জানেন।” স্নেহেশবাবুর মন্তব্য, “দলের কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ ঠিক নয়। আর গোষ্ঠী রাজনীতির দোহাই দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষের উপরে যাঁরা অত্যাচার করছেন তাঁদের কার্যকলাপ সম্পর্কে দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তাঁরাই নেবেন।”
পাত্রসায়রের ১০টি পঞ্চায়েতের সবক’টিই তৃণমূলের দখলে। তৃণমূল সূত্রের খবর, স্নেহেশবাবুর অনুগামীরা পরিচালনা করছেন সাতটি পঞ্চায়েত। বাকি তিনটির মধ্যে বালসি ১ পঞ্চায়েতে রয়েছেন নববাবুর ঘনিষ্ঠেরা এবং হামিরপুর ও নারায়ণপুর পঞ্চায়েত অন্য এক ব্লক নেতার অনুগামীদের দখলে রয়েছে। এখন ওই তিনটি পঞ্চায়েত দখলে আনতে চাইছেন স্নেহেশবাবুর অনুগামীরা। দলেরই এক জেলা নেতার মন্তব্য, “স্নেহেশ নিজেই পুরো ব্লকের ক্ষমতা নিতে চাইছে। জেলার অন্যত্র দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ তেমন না হলেও পাত্রসায়রে তাই মারপিট চলছেই।”
দলের জেলা সভাপতি অরূপ খান বলেন, “দলীয় কার্যালয় ভেঙে কেউ থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর জেলার মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “মারপিটের ঘটনার কথা শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব।” তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের মতে, ওই দুই নেতা পছন্দের জেলা নেতাদের ধরে রেখেছেন। তাই জেলা শীর্ষ নেতৃত্বও তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন না। অন্য দিকে, সিপিএমের বিরুদ্ধে এতদিন লড়াই চালানো দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে এখনও সেই লড়াকু মনোভাব রয়ে গিয়েছে। ফলে সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলছেন। স্নেহেশবাবুর পাল্টা দাবি, “ জনপ্রতিনিধিদের দিয়েই স্বচ্ছ ভাবে কাজ করাচ্ছি। তাই দলেরই কিছু লোক প্রতিহিংসা বশত আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.