ত্রাতার ভূমিকায় অটো, ট্রেকার, মোটরভ্যান, ম্যাটাডর
বাস না থাকায় চরম ভোগান্তি
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে রাজ্যজুড়ে বেসরকারি বাস-মিনিবাস ধর্মঘটে সোমবার চূড়ান্ত নাকাল হতে হল শহর কলকাতা লাগোয়া দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষকে। বাস-মিনিবাস মালিকদের পাঁচটি সংগঠনের একযোগে ডাকা এই ধর্মঘটে দিনভর ভুগলেন পথে ব্রোনো মানুষজন।
রাস্তায় বেসরকারি বাস-মিনিবাসের দেখা নেই। দু’একটি সরকারি বাস অবশ্য ছিল। কিন্তু রাস্তায় বের হওয়া লোকসংখ্যার তুলনায় তা ছিল একেবারেই অপ্রতুল। দেখা গিয়েছে বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে ট্রেকার, অটোয় মানুষের বাদুড়ঝোলা যাতায়াত। উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যারাকপুর মহকুমা শিল্পাঞ্চলেও এ দিন বেসরকারি বাসের অভাবে চূড়ান্ত নাকাল হতে হয়েছে সপ্তাহের প্রথম দিন কাজে বের হওয়া মানুষজনকে। যদিও সাদারণ মানুষের সুবিধার্থে এ দিন মহকুমার ব্যারাকপুর ও টিটাগড় ডিপো থেকে অতিরিক্ত ৮০টু সরকারি বাস চালানো হয়েছে বলে ডিপো সূত্রে জানানো হয়েছে। এ দিন ব্যারাকপুর ও কল্যাণী দুই মহকুমাতেই রাস্তায় বেশি করে চোখে পড়েছে মোটরভ্যান। বাস-মিনিবাস না থাকায় কাজের জায়গায় পৌঁছতে এ দিন যাত্রীদের ভরসা ছিল এই যানই। এমনকী কাজের শেষে বাড়ি ফেরার পথেও। একই ভাবে অন্যদিনের তুলায় এ দিন রাস্তায় অটোর সংখ্যাও ছিল বেশি। ছিল রিকশাও। তবে অনেকেরই অভিযোগ, মওকা বুঝে এ দিন বহু রিকশাই গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিগুণ ভাড়া হেঁকেছে।
দিনভর ছিল এমনই ছবি। বনগাঁ-বাগদা বাসস্ট্যান্ডে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ-বাগদা রুটে এ দিন বাস চলেনি। বাগদার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম বাস। কিন্তু এ দিন তা না চলায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বাস না পেয়ে অটো, ট্রেকার, ম্যাটাডর যে যা হাতের কাছে পেয়েছেন তাতে চেপেই গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। অনেককে আবার যানের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বনগাঁ-দক্ষিণেশ্বর রুটেও এ দিন বাস বন্ধ থাকায় নাকাল হতে হয় মানুষকে। এই রুটের বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি তুহিন ঘোষ বলেন, “একটি বাস চালাতে এখন দৈনিক খরচ হয় ৫ হাজার ৭০০ টাকা। ২০০৯ সালে যা ছিল ৩ হাজার টাকা। এর উপর বাসকর্মীদের কমিশন রয়েছে। যা অবস্থা তাদতে বাস চালিয়ে ব্যাঙ্কঋণের কিস্তি শোধ করা যাচ্ছে না। ভাড়া না বাড়ানো হলে বাস চালানো সম্ভব নয়।”
তবে উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে বনগাঁ মহকুমারই বনগাঁ-চাকদহ রুটে। এই রুটে এ দিন বাস চলেছে। ভাড়া বৃদ্ধির দাবির সহমত হলেও জনগণ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন সে জন্যই এ দিন বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেন এই রুটের বাস মালিকেরা। এই রুটের বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক অনীপ মালাকারের বক্তব্য, “ভাড়া বাড়ুক তা আমরাও চাই। তাই বলে জনগণের অসুবিধা করে বাস না চালিয়ে নয়। অন্য কোনওভাবে আন্দোলন হলে তাতে আমরা অবশ্যই সামিল হব।” উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় বাস বন্ধ থাকলেও ট্রেকার, অটোয় যে যাঁর গন্তব্যে পৌঁছোনোর ব্যবস্থা করেন।
উত্তরে বনগাঁ থেকে বাগদা, দক্ষিণে ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীর, নামখানায় চোখে পড়েছে রাস্তায় বেসরকারি বাস না থাকার একই ছবি। ক্যানিং মহকুমায় অন্য দিনের মতো বাস চলাচল না করলেও ক্যানিং-বারুইপুর, চুনোখালি-বারুইপুর, গদখালি-বারুইপুর, ঝড়খালি-জামতলা রুটে অবশ্য অল্প হলেও বাস চলেছে। ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ, জেলার অন্য দুই মহকুমায় অবশ্য ভোর থেকেই রাস্তায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস অদৃশ্য হয়ে যায়। বেলা হতেই চোখে পড়ে অটো, ট্রেকার উপচে লোকজনের যাতায়াত। এমনকী প্রাইভেট গানি ভানা করেও অনেকে গন্তব্যে রওনা হন। নামখানা থেকে হাওড়া, কাকদ্বীপ থেকে ধর্মতলা, বিষ্ণুপুর থেকে ধর্মতলা এবং ডায়মন্ড হারবার থেকে ধর্মতলাগামী সমস্ত বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার থেকে রায়দিঘি, নুরপুর থেকে রামগঙ্গা, কাকদ্বীপ, ফলতা থেকে বিজয়গঞ্জ এবং বুড়ুল থেকে রাধানগর কোনও মিনিবাসের দেখা মেলেনি। সরকারি বাস চললেও তা একেবারেই হাতেগোনা কয়েকটি, যা রাস্তায় বের হওয়া মানুষজনের যাতায়াতের জন্য ছিল খুবই অপ্রতুল।
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র যদিও বলেছিলেন বিকেল তিনটের পর রাস্তায় বাস-মিনিবাস না নামালে তিনি বাস মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি তেমন পাল্টায়নি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.