|
|
|
|
বাস নেই, দুর্ভোগে গাড়ি ভাড়া যত ইচ্ছা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বাস নেই। যা আছে, সেই ট্রেকার, মেশিনভ্যান, ম্যাজিক গাড়ি, ট্যাক্সি চলল মর্জিমাফিক। যাত্রীদের অসহায়তার সুযোগে কেউ ভাড়া নিল দ্বিগুণ। কেউ আবার নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত খুশি যাত্রী তুলল গাড়িতে। সোমবার বাস ধর্মঘটের জেরে দুর্ভোগ চরমে উঠল দুই মেদিনীপুরে।
এদিন সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে ব্যস্ত রুট মেচেদা-হলদিয়া রাজ্য সড়ক, পাঁশকুড়া-ঘাটাল সড়কে বাস চলাচল করেনি। দিঘা-হাওড়া, হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে হাতে গোনা কিছু সরকারি বাস চললেও চিড়ে-চ্যাপ্টা ভিড়। তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে মেচেদা স্টেশন পর্যন্ত বাসে আসতে খরচ পড়ে ৮ থেকে ১০ টাকা। এ দিন একই রাস্তা যেতে ট্রেকার, ম্যাজিক গাড়িতে গুণতে হয়েছে ২০-২৫ টাকা ভাড়া। ট্যাক্সিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকাযে যেমন পেরেছে, নিয়েছে।
কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী তমলুক শহরের বাসিন্দা সীমন্ত মাইতি বলেন, ‘‘এদিন সকালে হাসপাতাল মোড়ে গিয়ে দেখি মেচেদা স্টেশনে যাওয়ার একটিও বাস নেই। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি ট্রেকার, মেশিন ভ্যান, ম্যাজিক গাড়ি। ম্যাজিক গাড়িতে মেচেদা যেতে ভাড়া চাইছে ২৫ টাকা। তা-ই দিলাম।” |
নাকাল নিত্যযাত্রীরা হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের মানিকতলায় মালবাহী গাড়িতেই সওয়ার। |
কোলাঘাটের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল প্রতিদিন পাঁশকুড়ায় নিজের বাড়ি থেকে যাতায়াত করেন। অর্পিতাদেবী বলেন, “এমনিতে পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত ট্রেকার ভাড়া নেয় ৭ টাকা। এদিন সেই একই রাস্তা ট্রেকারে যেতে আমাদের কাছ থেকে নিয়েছে ৪০ টাকা। ফিরে আসতেও একই ভাড়া দিতে হয়েছে। তার উপর ট্রেকারে এত লোক উঠে পড়েছিল যে দমবন্ধ হয়ে আসছিল। ভয়ও করছিল, দুর্ঘটনা না ঘটে।” খড়গপুর রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মী তমলুকের উত্তরচড়া শঙ্করআড়ার বাসিন্দা নারায়ণ দাস আবার সড়কপথের ঝামেলায় না গিয়ে ট্রেন ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমি অন্য দিন সকালে হাসপাতাল মোড় থেকে বাসে চেপে মেচেদা রেলস্টেশন হয়ে খড়গপুরে যাই। এদিন কিছু সময় আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তমলুক স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে পাঁশকুড়া পৌঁছই। সেখান থেকে খড়্গপুর এসেছি।”
যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, “আমাদের অন্য কোনও উপায় ছিল না। জেলার বিভিন্ন রুটে ১৪০০টি বাস চালানোর জন্য অনুমোদন থাকলেও যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি না যাওয়ায় লোকসানের কারণে প্রায় ৩০০টি বসে গিয়েছে। এখন সারা জেলায় ১১০০টি বাস চলে। এ ভাবে চলতে পারে না। তাই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে এদিন জেলার কোনও রুটেই বাস চলাচল করেনি। যাত্রীদের দুর্ভোগ হয়েছে মানছি। কিন্তু বাস মালিকদের সমস্যাও দেখতে হবে অন্যদের।”
পশ্চিম মেদিনীপুরেও পরিস্থিতি একই রকম ছিল। এই জেলায় প্রতিদিন ৮০০টিরও বেশি বেসরকারি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে জঙ্গলমহল এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করে ৫০০টিরও বেশি বেসরকারি বাস। সোমবার কোনও বাসই পথে নামেনি। অটোর দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। নিত্যযাত্রীরাও বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রুটে অটো-ট্রেকারে বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করেছেন। তবে, অটোর ভাড়া ছিল চড়া। রেলশহর খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর সদর শহর পৌঁছতে এ দিন খরচ হয়েছে গড়ে ৩০ টাকা। অটো মালিকদের অবশ্য বক্তব্য, এখন বেশি যাত্রী তোলা হলে ধরপাকড় চলে। তাই ৫-৬ জন করে যাত্রী তোলা হয়। ৮-১০ টাকা ভাড়ায় কোনও যাত্রীকে খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুরে পৌঁছলে মালিকদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। |
এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস। |
বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির কথায়, “যাত্রীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা বন্ধ করিনি। এই বন্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্যার কথাই বোঝাতে চেয়েছি। আশা করব, সরকার বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। তবে সরকার এ নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না-নিলে আগামী দিনে আমরা চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।” বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি যে যুক্তিসঙ্গত, তা মানছেন জেলা পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোৎ ঘোষ। তাঁর কথায়, “কিছু ভাড়া বাড়ানো দরকার।” তবে প্রদ্যোৎবাবুর বক্তব্য, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। এ ভাবে ধর্মঘট কেন? ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়। বাস মালিকদের এটা বোঝা উচিত।” |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|