খেত জমির পাশে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ছিল বাজ পাখিটা। গোধুলি আলোয় তার পাশ দিয়ে একের পর পা হেঁটে গেলেও ফিরেও দেখছিল না কেউ। হঠাৎই বাজটির দিকে চোখ পড়ল মাসুন্দি গ্রামের অতনু সরকারের। বছর পঁচিশের যুবক পাখিটিকে তুলে এনে সারারাত শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তুললেন। পরে সোমবার দুপুরে অতনুর বাড়ির লোকেরা বাজটিকে বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের কর্মীদের হাতে বাজটিকে তুলে দিয়েছেন।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের কান্দরা থেকে মাসুন্দি যাওয়ার রাস্তায় সর্ষে খেতের পাশে এক টুকরো ফাঁকা জায়গাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল বাজ পাখিটি। ডানা কেটে, ঠোঁট ফেটে ছটফট করছিল সেটি। অতনুবাবু বলেন, “তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। মাসুন্দি ফিরছিলাম। পাখিটিকে দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে দেখি সে ছটফট করছে আর কাঁদছে। তখনই সেটিকে তুলে বাড়ি নিয়ে আসি।” বাড়িতে রাতভর নিজের কাছে রেখে নানা রকম ওষুধ দিয়ে পাখিটির শুশ্রূষা করেন অতনু। তাঁর দাবি, “পাখিটির ওড়ার ক্ষমতা ছিল না। ঠোঁটে আঘাত লাগায় কিছু খেতেও পারছিল না। তাই আমি সারারাত পাখিটিকে ওআরএস খাইয়েছি। আর ক্ষত স্থানে ওষুধ দিয়েছি।” |
সোমবার সকালে অবশ্য বাজ পাখিটি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠায় কোনওরকমে অতনুবাবুদের বাড়ির কাছের তাল গাছে উড়ে গিয়ে বসে। তখনই ঝাঁকে ঝাঁকে কাক বাজ পাখিটির ধেয়ে আসে। বাজটি চিৎকার শুরু করে দেয়। ওই অবস্থাতেই তাল গাছে উঠে অতনুবাবু পাখিটিকে উদ্ধার করেন। তখন ওই বাড়িতেই ছিলেন পাশের রাজুর গ্রামের বিভু আচার্য। তিনি বলেন, “বাজ পাখি অত তেজি। কিন্তু সুযোগ পেয়ে কাকের দল আক্রমণ করতে চেয়েছিল। ওই অবস্থায় অতনু পড়িমড়ি করে তাল গাছ থেকে উদ্ধার না করলে বাজপাখিকে বাঁচানো যেত না।” তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও অতনু জখম পাখিদের তুলে এনে সেবা শুশ্রূষা করে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছে। এ দিনও সেই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পাখিটি উড়তে পারছে না দেখে পরিচিতদের মাধ্যমে বন দফতরে খবর দেন। অবশ্য বাড়ি থেকে পাখির বিদায় দেখতে পাননি অতনুবাবু। বন দফতরের কর্মীরা মাসুন্দি গ্রামে যাওয়ার আগে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে কলকাতার পথ ধরেন অতনু। তাঁর মা বাণী সরকার বলেন, “প্রথমে ছেলের উপর রাগ হয়েছিল। পরে যখন পাখিটা কিছুটা হলেও সুস্থ হয়ে উঠল তখন মনটা ভাল হয়ে গেল।” বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের আধিকারিক পরমানন্দ মাহাতো বলেন, “পাখিটিকে নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার পর বর্ধমানের রমলাবাগানের হাতে তুলে দেওয়া হবে পাখিটিকে।” |