সম্পাদকীয় ১...
ইতিহাস নির্মম
নসভা এবং সাংবাদিক বৈঠক এক নহে। লোকসভা নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সেনাপতি নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে মনমোহন সিংহের মন্তব্য এবং তাহার ভাষা ও ভঙ্গি লইয়া প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। মোদী বিবিধ জনসভায় যাহাই বলিয়া বেড়ান, তাহার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়া এই আক্রমণ করা সংগত হয় নাই, এমন সমালোচনার যুক্তি অবশ্যই আছে। কিন্তু ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের নায়কনায়িকারা তাঁহাদের অবস্থান ও সুযোগ অনুসারে বিভিন্ন অস্ত্র প্রয়োগ করিয়াই থাকেন। তাহা উচিত কি না, সেই বিচার অপেক্ষা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন: তাহা কার্যকর কি না। যে অস্ত্র মনমোহন সিংহ প্রয়োগ করিয়াছেন, তাহা লইয়া দুইটি সমস্যা আছে। প্রথমত, এই আক্রমণ নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে সমর্থন এবং সহানুভূতিকে আরও জোরদার করিতে পারে। সনিয়া গাঁধী অতীতে তাঁহাকে ‘মৃত্যুর সওদাগর’ আখ্যা দিয়া আপন দলের উপকার করেন নাই। সত্য বটে, ভারত গুজরাত নয়, প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্টভাষণ হয়তো অনেককেই সন্তুষ্ট এবং উদ্দীপ্তও করিবে। কিন্তু সেখানেই দ্বিতীয় সমস্যা। গুজরাতে ২০০২ সালের হত্যাকাণ্ডের জন্য যদি নরেন্দ্র মোদী নিন্দনীয় হন, তবে দিল্লিতে ১৯৮৪ সালের হত্যাকাণ্ডের জন্য কি ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দায়ী ছিল না? কাচের ঘরে বাস করিয়া অন্যের প্রতি ঢিল ছোড়া বুদ্ধির পরিচায়ক নয়।
অনুমান করা যায়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিপক্ষকে তোপ দাগিয়া আপন শৌর্য বা পৌরুষ প্রদর্শন করিতে চাহিয়াছেন। সে দিনের বৈঠকটিতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরেই তিনি এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন যে, তিনি যথেষ্ট সবল এবং সতেজ তৎপরতার সহিত সরকার চালনা করিয়াছেন, তাঁহাকে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী বলিয়া যে সমালোচনা ক্রমাগত করা হইয়া আসিতেছে, তাহা তিনি মোটেও মানেন না। ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সেনাপতিরা অবসন্ন হইয়া পড়িলে মাঝে মধ্যে তাঁহাদের চাঙ্গা করিবার নানা চেষ্টা হইত এবং তাঁহারা জাগিয়া উঠিতেন। মনমোহন সিংহের যুদ্ধের অবশ্য বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নাই, তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের (নিতান্ত আনুষ্ঠানিক) সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করিয়া দিয়াছেন। স্পষ্টতই, তিনি চাহেন, ইতিহাস তাঁহাকে তাঁহার প্রাপ্য মর্যাদা দিক।
ইতিহাস বলিতেছে, ইউ পি এ সরকারের প্রথম দফায় মনমোহন সিংহ নেতৃত্বের পরীক্ষায় স্মরণীয় সাফল্য অর্জন করিয়াছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে বামপন্থী প্রতিরোধের সামনে তাঁহার আপসহীন বলিষ্ঠতা আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক। কিন্তু দ্বিতীয় ইউ পি এ জমানায় দেখা গেল, সেই বলিষ্ঠতা সম্পূর্ণ অন্তর্হিত। গত সাড়ে চার বছরে বিদেশ নীতির দুই একটি উদ্যোগ বাদ দিলে প্রধানমন্ত্রী কার্যত কোনও বিষয়েই উচিত সিদ্ধান্ত লইতে পারেন নাই, সব ব্যাপারেই অনুচিত চাপের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছেন। কমনওয়েলথ গেমস হইতে স্পেকট্রাম বণ্টন, কয়লা কেলেঙ্কারি হইতে রেল মন্ত্রকের দুর্নীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁহার আচরণে দুর্ভাগ্যজনক এবং লজ্জাকর নিষ্ক্রিয়তা ও দোলাচল দেখা গিয়াছে। অন্য দিকে, দলনেত্রী সনিয়া গাঁধী তথা নূতন নেতা রাহুল গাঁধীর চাপে জনকল্যাণের নামে সরকারি কোষাগার হইতে খয়রাতির প্লাবন উত্তরোত্তর বাড়িয়াছে, প্রধানমন্ত্রী যেন নীরব দর্শক। সমালোচনার জবাবে তিনি বিভিন্ন ‘বাধ্যবাধকতা’র ইঙ্গিত দিয়াছেন, কিন্তু সেই অজুহাতের মূল্য কানাকড়িও নয়। তিনি সরকারের প্রধান, সুতরাং সরকারের সার্বিক অকর্মণ্যতা এবং অমিতব্যয়ের দায়িত্ব তাঁহাকেই লইতে হইবে। ইতিহাস স্বভাবত নির্মম। বিচার করিতে বসিয়া সে হিসাব বুঝিয়া লয়। কাজের হিসাব, সাহসের হিসাব, স্বাধীন সামর্থ্যের হিসাব। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে দুই একটি কঠোর বাক্য নিক্ষেপ করিয়া সেই হিসাব বদলানো যায় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.