বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরবাইক আরোহী এক মহিলার মৃত্যুতে রবিবার সকালে তেতে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার গাঙ্গুলিয়া মোড়। কয়েকশো মানুষ বাসটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। কার্যত দু’ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই এলাকা। বিক্ষোভকারীরা বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাস্তার বেহাল অংশ সারানোর দাবি তোলেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই দুর্ঘটনায় মৃতের নাম আমেনা দফাদার (৪০)। বাড়ি বাগদার নওদাপাড়ায়। তিনি স্বামী জামিরুল দফাদারের সঙ্গে মোটরবাইকে মালিদা-বনগাঁ সড়ক ধরে বনগাঁর দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালিদা-বনগাঁ রুটের বাসটি আসছিল জামিরুলের মোটরবাইকের পিছনে। রাস্তাটি ততটা চওড়া নয়। গাঙ্গুলিয়া মোড়ের কাছে বাসটি হর্ন দিলে জায়গা দেওয়ার জন্য জামিরুল বাইকের গতি কমিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে দাঁড়াতে যান। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি মোটরবাইক থেকে পড়ে যান। পড়ে যান তাঁর স্ত্রীও। বাসের পিছনের চাকা আমেনার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এর পরেই কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়ে যান। চালক-কন্ডাক্টর বাস ফেলে পালান। জনতা যাত্রীদের নামিয়ে বাসটিকে কাছের একটি সর্ষে খেতে ঠেলে নিয়ে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। তার পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বনগাঁ থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। |
পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বনগাঁ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মোটরবাইক চালক পড়ে যাওয়াতেই ওই দুর্ঘটনা। জামিরুল অবশ্য বলেন, “আমি বাসটিকে পাশ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কী ভাবে যে কী হল বুঝতে পারলাম না। রাস্তার ধারের মাটির জায়গাটি কিছুটা নিচু ছিল। পা ফেলতে গিয়েই বাইকটা উল্টে গেল।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সঙ্কীর্ণ রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে বাস চলে। তার জেরে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে। বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাস্তার বেহাল অংশ সারানোর দাবি তোলেন তাঁরা। একই সঙ্গে ওই বাসটির চালক-কন্ডাক্টরকে গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। পুলিশ দাবিগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে, এই ঘটনার জেরে ওই রাস্তায় প্রায় দু’ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন বেপরোয়া গতিতে বাস চলার অভিযোগ তুললেও তা মানতে চাননি মালিদা-বনগাঁ রুটের বাস-মালিক সংগঠনের সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। তাঁর দাবি, “ওই রাস্তায় বাস নির্দিষ্ট গতিতেই চলে। এ দিনও বাসটি বেপরোয়া ভাবে যাচ্ছিল না। চালক নির্দোষ। মোটরবাইক আরোহী পড়ে যাওয়াতেই ওই দুর্ঘটনা।” |