সম্পাদকীয় ১...
ভুল সক্রিয়তা
বিচারবিভাগীয় অতিসক্রিয়তার আরও একটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত তৈরি হইল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রদত্ত ‘কোচিং সেন্টার’ মামলার রায়ে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ: উল্লিখিত জনস্বার্থ মামলায় উত্থাপিত অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতে যাহাতে এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ হইতে সমাধানের প্রয়াস হয়। অভিযোগগুলি কী প্রকার? দেশ জুড়িয়া এই সব কোচিং সেন্টার, অধিকাংশই অবৈধ, ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত করিয়া ঠকাইতেছে, ও অনৈতিক ভাবে একটি সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করিতেছে, যাহা সামগ্রিক শিক্ষা-কাঠামোর পক্ষে অতিশয় বিপজ্জনক। কোনও স্বীকৃত বা গ্রহণযোগ্য মানদণ্ডের অনুপস্থিতিতে, অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার ফাঁদে ছেলেমেয়েদের উপর এমন মানসিক চাপ তৈরি হইতেছে, যাহা মানসিকতা সুস্থতার অন্তরায়, এমনকী আত্মহত্যারও কারণ। বেসরকারি ও অবৈধ ‘কোচিং’-এর এই রমরমা ঠেকাইবার পথ হিসাবে বাম ছাত্র গোষ্ঠী এস এফ আই আদালতে মামলাটি দায়ের করিয়াছিল। প্রশ্ন এখানেই। অভিযোগগুলি যথার্থ তো বটেই, অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিক্ষাক্ষেত্রে এক দিকে অতি-প্রতিযোগিতা অন্য দিকে আর্থিক অনাচারের কুফল বহু পরিমাণে বাড়াইয়া তুলিতেছে এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলি। ছাত্রসমাজ তথা বৃহত্তর সমাজের উপর ইহার কুপ্রভাব সময় থাকিতে ঠেকানো দরকার। কিন্তু ঠেকানোর পথ কি একটিই, আদালতে মামলা ঠোকা? ইহা একটি সমাজ-অর্থনৈতিক সমস্যা, যাহার মূলে রহিয়াছে বাজারের ভবিতব্যতা: আদালতের উপর এই সমস্যা সমাধানের ভার কেন অর্পিত হইবে? কোনও গণতান্ত্রিক দেশের বিচারবিভাগের কাজ সাংবিধানিক আইনবিধির ভিত্তিতে ঠিক-ভুল বিচার করা। বৈধতা থাকিলে কোচিং সেন্টারের বিষয়টি বিচারবিভাগের দ্বারস্থ হয় কোন যুক্তিতে। বিচারবিভাগের হাতে যথেষ্ট-রও অধিককাজ, তবু কেন এই অকাজ-বিলাস?
ভারতীয় বিচারবিভাগের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান রাখিয়াই বলা যায়, এই প্রশ্ন কিন্তু বহু-আলোচিত। যে কাজ শাসনবিভাগের করিবার কথা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাধনযোগ্য, সে কাজ শেষ পর্যন্ত বিচারকরা হাতে তুলিয়া লইলেন। ক্ষতি দ্বিমুখী। শাসনবিভাগের অকর্মণ্যতা ইহাতে বাড়িয়া চলে, ও বিচারবিভাগের অমূল্য সময় নষ্টে দেশের সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়া যায়। গণতন্ত্রের অবমাননাও ঘটে: শাসন-আইন-বিচার তিন বিভাগের পারস্পরিক ক্ষেত্রভেদের উপরই তাহার কার্যকারিতা নির্ভরশীল।
এ বার প্রশ্ন, তবে কোচিং সেন্টারের কুপ্রভাবের এই রমরমা আটকাইবার পথ কী? ইহাদের নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করার কাজে কি তবে প্রশাসনেরই কোমর বাঁধিয়া নামিবার কথা? উত্তর: না, তাহাও বাঞ্ছিত পথ নহে। সংস্থাগুলি বৈধ অনুমতিক্রমে চলিতেছে কি না, বৈধতার ছাড়পত্র পাইতে গেলে যে প্রয়োজনীয় মানদণ্ড, তাহা মান্য হইতেছে কি না, ইহা দেখা ভিন্ন প্রশাসনের তরফেও কিছু করার নাই। একটি মুক্ত সমাজে মূলস্রোতের পাশাপাশি কোনও সহায়ক-স্রোত যদি গড়িয়া ওঠে, তাহা ঘটে বাজারের অমোঘ নিয়মেই। সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্ষতিকারক বা অবাঞ্ছিত মনে করিলে ইহাদের আইন করিয়া নিষিদ্ধ না করিয়া বরং ইহাদের উপর নির্ভরশীলতা কমানো দরকার, ইহাদের কার্যকারিতা হ্রাস করা দরকার। প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন বা মুখস্থভিত্তিক পরীক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ প্রয়োজন। বাহির হইতে লৌহমুষ্টির প্রয়োগে এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী করা সম্ভব বা সঙ্গত নয়। বিচার কিংবা শাসন, রাষ্ট্রের যে কোনও হাতই অতি-নিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হইয়া গেলে তাহার বিপদ ঠেকানো কঠিন হইতে পারে। সংস্কার কিংবা নির্মাণের কাজগুলি ঠিক ভাবে না করিয়া রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হইবার প্রবণতাটিও আত্মঘাতী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.