ঢাকার পাশেই নয়াদিল্লি

৫ জানুয়ারি
জিরবিহীন অশাম্তির মধ্যে রবিবার ভোট পর্ব সাঙ্গ হল। কিন্তু নয়াদিল্লি মনে করছে, শেষ নয়, আসল লড়াইটা এ বার শুরু হল বাংলাদেশের। পাশাপাশি প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া দীর্ঘ সীমান্ত-নিরাপত্তার প্রশ্নটিও যে বাংলাদেশের এই ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যাবে এমনও মনে করছে না দিল্লি।
বিদেশ মন্ত্রকের অনুমান, এই নির্বাচনের পরে সরকার গড়া মাত্রই পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ এবং সংগঠন প্রবল চাপ দেবে হাসিনা সরকারের উপর। সরকারকে অগণতান্ত্রিক অ্যাখ্যা দিয়ে ঢাকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করাটাও অস্বাভাবিক নয়। এই প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ প্রতিহত করার জন্য মুজিব-কন্যার পাশেই থাকতে চাইছে নয়াদিল্লি। ভোট ঘোষণা হওয়ার সময় থেকেই আমেরিকার সঙ্গে ধারাবাহিক দৌত্য চালিয়ে এসেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু জামাতে ইসলামিকে মূল স্রোতে প্রতিষ্ঠার পক্ষেই সওয়াল করে গিয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নিরপেক্ষতার বদলে বিএনপি-ঘেঁষা অবস্থানই বরাবর নিয়ে এসেছে তারা। ভারতের পাল্টা যুক্তি, যাবতীয় জঙ্গি কার্যকলাপের মাথা কট্টর মৌলবাদী এই জামাতকে সমাজের সর্বস্তরে ডালপালা ছাড়ানোর সুযোগ দিলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংস হবে। শুধু ঢাকা নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়বে। এমনিতেই এ বছর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেই আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছে গোটা অঞ্চল। তার উপর বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্র ইসলামিক উগ্রপন্থার হাতে চলে গেলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হয়ে উঠেতে পারে এটাই পশ্চিম বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে নয়াদিল্লি। দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সাউথ ব্লকের আশঙ্কা, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে শুধু হিন্দুই নয়, সে দেশ থেকে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ঢল নামবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে।
ফলে বাংলাদেশের নতুন এই সরকারকে আপাতত স্থিতিশীল রাখতে কূটনৈতিক দৌত্যের প্রক্রিয়া কাল থেকেই বাড়াচ্ছে দিল্লি। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি কমনওয়েলথ-এর মঞ্চকে কাজে লাগিয়েও হাসিনা সরকারের সমর্থনে স্বর তুলতে চায় ভারত। এই মুহূর্তে ‘কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ’-এর সদস্য ভারত। বর্তমান নির্বাচনকে অগণতান্ত্রিক অ্যাখ্যা দিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত কোনও দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর্থিক বা অন্য কোনও নিষেধাজ্ঞা জারির চেষ্টা করলে হস্তক্ষেপ করবে দিল্লি।
আওয়ামি লিগের জমানায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে যথেষ্ট এগিয়েছে এ কথা মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করেছে বিদেশ মন্ত্রক। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করা সব কিছুতেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে হাসিনা সরকার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ প্রতিশ্রুতি দিলেও ঘরোয়া ঐকমত্যের অভাবে তিস্তা চুক্তি অথবা স্থলসীমান্ত চুক্তি ভারত সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু নানা ভাবে হাসিনার পাশে থেকেছে। সেই অবস্থান হাসিনা সরকারের পরের মেয়াদের জন্যও জারি রাখতে চায় দিল্লি।
কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য কোমর বেঁধে দাঁড়ানোর প্রশ্নে একটা বড় সমস্যাও রয়েছে হলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। কেন না ভারত নিজেই লোকসভা নির্বাচনের দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। লোকসভার পর প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নেবেন বলে দু’দিন আগেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সমস্ত দলই এখন ব্যস্ত নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে। ফলে বিদেশনীতির প্রশ্নে এককাট্টা হওয়া যেমন দেশের রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে কষ্টকর তেমনই এই মুহূর্তে দেশের কোনও কূটনৈতিক দৌত্যও রাজনৈতিক শক্তির অভাবে তেমন জোর পাওয়া কঠিন।
তবে এই এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যতটা সম্ভব প্রয়াস চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকরা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, হাসিনা সরকারের নেতাদের মতো সাউথ ব্লকও একটি কথা জোরের সঙ্গে বিশ্বাস করে। তা হল তাণ্ডবের আবহে সমাপ্ত হওয়া এ বারের নির্বাচনের মুখ্য বিষয়টি নিছকই ব্যালট-যুদ্ধ ছিল না। এটা ছিল, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে ধর্মভিত্তিক ইসলামিক রাষ্ট্রগঠনের লড়াই।
নির্বাচনের পরেও এই লড়াই চলবে বলেই মনে করছে ভারত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.