বারবার আক্রান্ত পুলিশ, উঠছে প্রশ্ন
পুলিশের প্রতি কি মানুষের সমীহ কমে যাচ্ছে? নাকি, পুলিশ নিজেকে ‘দুর্বল’ মনে করছে? শহরে পুলিশের উপরে একের পর এক আক্রমণের ঘটনা থেকে বার বার উঠে আসছে এই প্রশ্নই।
শহরে রাতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। সে কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাঁদের হাতে, তাঁদের নিরাপত্তাই এ বার প্রশ্নের মুখে। শহরে ঘটে যাওয়া পরপর কয়েকটি ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশেষত রাতের দিকে আইনভঙ্গকারীদের সামলাতে গিয়ে বার বার প্রহৃত হতে হয়েছে পুলিশকে।
যেমন, গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে তিন যুবকের বচসা থামাতে গিয়ে তাদের হাতেই প্রহৃত হন কর্তব্যরত দুই পুলিশকর্মী। ডিসেম্বর মাসে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ ওঠে পাঁচটি ঘটনায়। প্রথমটি ঘটে ৩ ডিসেম্বর। এক সিপিএম নেতার দুই নাতির হাতে প্রহৃত হন এক পুলিশকর্মী। দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৪ ডিসেম্বরের। বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে এক মত্ত মহিলার হাতে হেনস্থা হতে হয় পুলিশকে। ১৬ ডিসেম্বর হাজরায় দুই যুবকের বচসা থামাতে গিয়ে মার খেয়ে জখম হন এক পুলিশকর্মী। বর্ষবরণের রাতেও পুলিশকে মারধরের দু’টি ঘটনা ঘটে। একটি কালীঘাট থানা ও অন্যটি শেক্সপিয়র থানা এলাকায়।
এর আগে, সেপ্টেম্বর মাসে হেয়ার স্ট্রিট থানার এজরা স্ট্রিটে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া মেটাতে গিয়ে ঘুষি খেতে হয় এক পুলিশকর্মীকে। ঘুষির চোটে তাঁর দাঁত ভেঙে যায়। নভেম্বর মাসেও একটি ঘটনায় প্রহৃত হতে হয় পুলিশকর্মীদের। উপলক্ষ ছিল, কালীপুজোয় শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত। তবে বার বার পুলিশকে মারধরের ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনই প্রতি ক্ষেত্রেই গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্তেরা। তা সত্ত্বেও কেন পুলিশের সঙ্গে বার বার এমন ঘটছে, তা নিয়ে এ বার খোঁজখবর শুরু করেছেন খোদ লালবাজারের কর্তারা।
পুলিশকর্তাদের মতে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের বোঝাপড়ার অভাবই এর অন্যতম কারণ। তাঁদের মতে, সাধারণ মানুষের তুলনায় পুলিশকর্মীর সংখ্যা অনেক কম। তাই দুই তরফে যে জনসংযোগ থাকা উচিত, তা তৈরি হয় না। ফলে, সাধারণের সঙ্গে পুলিশের সুসম্পর্কও গড়ে ওঠে না। অন্য দিকে, আইন বাস্তবায়িত করার উপরেও এই ঘটনায় দায়ভার চাপিয়েছেন এক পুলিশকর্তা। তাঁর কথায়, “নিয়ম রয়েছে, তবে তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত করা হয় না। সাধারণ মানুষ জানে, আইন ভাঙলে তাঁদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। তাঁরা হয় জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবেন অথবা কয়েক দিন বা বড়জোর কয়েক সপ্তাহ জেল হেফাজতের পরে মুক্তি পাবেন। তাই তাঁদের মনে আইন ভাঙার ভয়টা নেই।”
তা হলে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য পুলিশকর্তারা কী চিন্তা করছেন? এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “এ রকম ঘটনা শহরে খুবই কম ঘটে। আর যদি কখনও এমন কিছু ঘটে, তা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাতে পরবর্তীকালে তাঁরা এই ধরনের অপরাধ করার আগে দশ বার ভাবেন। তাতেই এমন ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে।” সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের আচার-ব্যবহারে মানুষ তাঁদের উপরে আস্থা হারিয়েছেন। তারই প্রতিফলন ঘটছে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায়। অভিজিৎবাবু বলেন, “পুলিশকর্মীরা নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারছেন না। যদিও সমাজে তাঁদের সততার ভাবমূর্তি ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। কোনও অবকাশও তাঁরা পান না। তবুও, দিনের পর দিন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার যে উদাহরণ তাঁরা নিজেরাই তৈরি করছেন, তারই প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.