স্থানাভাবের কারণে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রায় ৯০ শতাংশ দ্রষ্টব্যই এত দিন ছিল সাধারণ দর্শকের চোখের আড়ালে। দর্শকদের সব দ্রষ্টব্য দেখার সুযোগ করে দিতে অবশেষে ভিক্টোরিয়ার সংগ্রহশালায় শুরু হয়েছে সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ। নয়া প্রযুক্তি এনে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর অনুষ্ঠানটিকেও।
স্থানাভাবের সমস্যা কমাতে ও বিভিন্ন দ্রষ্টব্য রক্ষণাবেক্ষণে ‘ক্যালকাটা টারসেন্টেনারি ট্রাস্ট’ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে একটি পৃথক ভবন তৈরিতে উদ্যোগী হয়। একটি জনস্বার্থের মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তা হলে কী ভাবে এত দ্রষ্টব্যের জন্য জায়গার সঙ্কুলান হবে? সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যাই বা মিটবে কী ভাবে? কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, “২০১০ সালে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিলেও আমরা নতুন ভবন তৈরি করছি না। চত্বরের মধ্যেই একটি একতলা বাড়িতে ক্যান্টিন ছিল। সেটি অন্যত্র সরিয়ে সংস্কার হচ্ছে। শীঘ্রই মূল ভবন থেকে ওই ভবনে প্রশাসন এবং হিসেব বিভাগ স্থানান্তরিত হবে। ফলে প্রদর্শনীর জন্য বাড়তি জায়গা মিলবে।” |
স্থানাভাবে সংগ্রহশালার মাত্র ১০ শতাংশ দ্রষ্টব্য প্রকাশ্যে দেখানো হচ্ছে এ কথা স্বীকার করে জয়ন্তবাবু বলেন, “এটা যে কোনও বড় সংগ্রহশালার সমস্যা। এ কারণে বিভিন্ন গ্যালারিতে দ্রষ্টব্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখানো হয়।” তিনি জানান, আকর্ষণ বাড়াতে পর্যায়ক্রমে ভিক্টোরিয়ার গ্যালারি সংস্কার শুরু হয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তৈলচিত্র ‘দি অ্যাক্সেশন অব প্রিন্স এডওয়ার্ড’ এঁকেছিলেন এক রুশ শিল্পী। ১৮৭৬ সালের এই শিল্পকর্ম ছাড়াও কিছু মূল্যবান দ্রষ্টব্য আছে ‘রয়্যাল হল’-এ। সংস্কারের জন্য গ্যালারিটি আপাতত বন্ধ। বছরখানেক লাগবে এই কাজে। এর পরে ক্যালকাটা গ্যালারি, দরবার হল, সেন্ট্রাল হল, প্রিন্স হল, এন্ট্রান্স হল এ সবের সঙ্গেই মানোন্নয়ন হবে শিল্পসম্ভারের মজুতখানা অর্থাৎ স্টোরের। এ সব কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক বরাদ্দ করেছেন ৮৭ কোটি টাকা।
আমূল বদলাচ্ছে প্রায় ২১ বছরের পুরনো লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর প্রযুক্তিও। দেশের অন্য যে সব সংগ্রহশালায় এমন প্রদর্শনী হয়, সবক’টিতেই আছে ‘ডিজিটাল’ প্রযুক্তি।
মেমোরিয়ালের এক আধিকারিক বলেন, “নয়া প্রযুক্তিতে আলো-শব্দ প্রভৃতির গুণগত মান অনেক উন্নত হবে। কমবে বিদ্যুৎ-মাসুল।” এখন কেবল বাংলা ও ইংরেজিতে এই অনুষ্ঠান হয়। এ বার শুরু হচ্ছে হিন্দি অনুষ্ঠানও। জয়ন্তবাবু বলেন, “পুরনো লাইট অ্যান্ড সাউন্ড অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্টের পরিবর্তন হবে কি না, হিন্দি ভাষ্যে কে কণ্ঠ দেবেন-- তা এখনও ঠিক হয়নি।”
ভিক্টোরিয়ার প্রবেশমূল্য হিসেবে মাথাপিছু ৪ টাকার টিকিট কাটতে হয়। বাগান ও সংগ্রহশালা দেখতে কাটতে হয় ১০ টাকার টিকিট। গত বছর এই দুই পর্যায়ে দর্শক সংখ্যা ছিল যথাক্রমে সাড়ে ১৩ লক্ষ ও সাড়ে ১৭ লক্ষ। কর্তৃপক্ষের আশা, এ বার সংখ্যাটা গত বারের চেয়ে অনেকটাই বেশি হবে। |