মরসুমে এই প্রথম শীতের দুপুরে রোদে পিঠ দিয়ে ছুটির দিন কাটালেন মহানগরীর মানুষ।
ডিসেম্বরের গোড়া থেকে কলকাতায় এ বার শীত ছিল অধরা। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমেছে মাত্র তিন দিন। এ দিন তাপমাত্রা ১২.৪ ডিগ্রিতে নামতেই শীতের দুপুরে রাস্তায় নেমে পড়েছে পুরো কলকাতা। শনিবারই প্রথম বারের জন্য ১৩ ডিগ্রির নীচে নেমেছিল তাপমাত্রা। বেড়েছিল উত্তুরে হাওয়ার দাপট। রবিবার তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামতেই পিকনিকের মেজাজ মহানগরী জুড়ে।
যে ভাবে ঘন ঘন হাওয়ার বদল হচ্ছে তাতে কলকাতা এ বার আর শীতের মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে আবহবিদেরা যেমন দোলাচলে রয়েছেন, তেমনই সংশয় রয়েছে মানুষের মনে। তাই ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম রবিবারটার মজা ছাড়তে চাননি কেউই। বেলা সাড়ে এগারোটাতেই চিড়িয়াখানার সামনে ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। সারদামণি সেতুর উপরে লাইন শহর বেড়াতে আসা মানুষের সারি। একের পর এক গাড়ি হাজির হওয়ায় ছুটির দিনেও লেগে গিয়েছে যানজট।
আট থেকে আশির ভিড়ে দুপুরের ময়দান চত্বর জমজমাট। চিড়িয়াখানা বা ভিক্টোরিয়ায় ঢুকতে না পেরে ময়দানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গিয়েছেন অনেকে। বছরের প্রথম রবিবারটা কেমন যাবে তা বুঝিয়ে দিয়েছিল সকালটাই। কলকাতা ম্যারাথনে যোগ দিতে আসা ভিড়টাই বুঝিয়ে দিয়েছিল সারা দিনটা কেমন যাবে। ছুটির কলকাতার এদিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল গঙ্গার তীরে এসে ঘাঁটি গেঁড়ে বসা সাধুরা। গঙ্গাসাগরের মেলা আর সপ্তাহ খানেক দূরে। এর মধ্যেই আসতে শুরু করেছেন সাধুরা। গঙ্গার তীর তাই জমজমাট। গাঁজা বাবা, হুঁকো বাবাদের দেখতে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ।
সন্ধ্যার মুখে কালো মাথা গঙ্গার তীরে। রংবেরঙের আলোর মালায় সেজে উঠেছে গঙ্গার তীর। নতুন বছরের প্রথম রবিবারের সূর্যাস্ত দেখতে মানুষের ঠাসা ভিড় সেখানে। উত্তর, দক্ষিণ বা পূর্ব শহরতলির কোনও বাগানেই এ দিন জায়গা ছিল না। লম্বা লাইন নিকো পার্কে, ওয়াটার পার্কে। নিউ টাউনের ইকো পার্কেও মানুষের ভিড়। যাঁরা কোথাও জায়গা পাননি তাঁদের গন্তব্য রেস্তোরাঁ। দমদম পার্কের সাধন রায়চৌধুরী দুটি গাড়িতে চেপে পরিবারের ১৪ জনকে নিয়ে সকাল থেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন দক্ষিণ থেকে পূর্বে। কোথাও জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কোলাঘাটের ধাবায় গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন শেষ বিকেলে।
তবে রবিবারের এই আনন্দে কিছুটা বাধ সেধেছে পরিবহণ। সকাল থেকেই শহরে বাস কম। অটো বেশি ভাড়া হেঁকেছে। ট্যাক্সি চলেছে নিজের মর্জিমতো। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার জন্য অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বাসস্ট্যান্ডগুলিতে। আজ, সোমবার বাস-মিনিবাস ধর্মঘট। তাই সকালে যে ক’টি হাতে গোনা বাস রাস্তায় নেমেছিল দুপুরের পরেই তারা ফিরে গিয়েছে গ্যারাজে। ভরসা বলতে ছিল মেট্রো।
তবে সকাল ১০টার আগে মেট্রো না চলায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক বিপদে পড়েছেন মা-বাবারা। আর মেট্রো চালু হতেই মানুষ আছড়ে পড়েছে দমদম কিংবা কালীঘাটে। অফিস টাইমের ভিড়টা ছিল সারা দিনই। রবিবার কেন সকাল সাতটা থেকে মেট্রো চলবে না দুর্ভোগে পড়া মানুষ তুলে দিলেন সেই প্রশ্নটাই। |