সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা ফের অপরাধের তকমা পেয়েছে। এর প্রভাব সিনেমার উপরে কতটা পড়বে, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশের। কিন্তু ছবি করা থেমে থাকছে না।
রায় বেরনোর পরে পরিচালক ওনির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এর পরে সেন্সর বোর্ড সমকামিতা নিয়ে সিনেমার কোনও দৃশ্যতেও আপত্তি জানাতে পারে। কিন্তু সেই ভয়ে এখনই হাত গুটিয়ে বসে থাকছে না টালিগঞ্জ।
সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে রাতুল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘১০ জুলাই’। ২০১১ সালে যখন শু্যটিং হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি ছিল আলাদা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সিনেমাটা রিলিজ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি? পরিচালক রাতুল জানাচ্ছেন, আপাতত ঠিক আছে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে ফিল্মটা রিলিজ করা হবে। “এই ধরনের মানুষের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তবে ফিল্মে আমি প্রশ্ন তুলেছি ফসলহীন সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়?’’ |
‘১০ জুলাই’ ছবিতে চিরঞ্জিৎ। |
এই ছবিতে সমকামী চরিত্রে রয়েছেন চিরঞ্জিৎ। বহু তারকা তো সমকামী চরিত্রে অভিনয় করতেই চান না। তার উপরে চিরঞ্জিত বিধায়কও। বিধায়ক হলে তো অনেক সময় ইমেজ নিয়ে স্পর্শকাতর হতে হয়। তা হলে? চিরঞ্জিৎ জানাচ্ছেন, “বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করাটাই আমার কাজ। তা ছাড়া মানুষ হিসেবে আমি মনে করি না যে, সমকামিতা কোনও অপরাধ। তাই ছবিটি এখন রিলিজ করাতে আমার কোনও আপত্তি নেই।” সিনেমার এক দৃশ্যে চিরঞ্জিত সমকামিতা বিষয়টি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত একটি চরিত্রের কাছে ব্যাখ্যা করেন। বলেন, সমকামের উল্লেখ ‘অথর্ব বেদে’ও রয়েছে। চিরঞ্জিত দাবি করছেন, এ রকম চরিত্র করলেই তাঁর ইমেজ নষ্ট হবে, এমনটা মনে করেন না তিনি। ছবিতে এক উভকামী মহিলার চরিত্রে রয়েছেন রূপা ভট্টাচার্য। তিনিও বলছেন, “আমি পেশাদার অভিনেত্রী। মানুষের যৌন চেতনাকে আমি তার গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মনে করি।” |
তিস্তা দাসের সঙ্গে উষসী চক্রবর্তী। |
‘১০ জুলাই’-এর তো না-হয় শ্যুটিং আগে হয়ে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এই মাসেই কিন্তু শু্যটিং শুরু হতে যাচ্ছে হৃষীকেশ মণ্ডলের ছবি ‘অচেনা বন্ধু’র। সেখানে অভিনয় করছেন উষসী চক্রবর্তী, প্রিয়ম এবং তিস্তা দাস। “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও এই ধরনের বিষয় নিয়ে যে কেউ সিনেমা বানাতে রাজি হয়েছেন, সেটাই একটা সাহসী পদক্ষেপ,” বলছেন উষসী।
তিস্তা নিজে এগারো বছর হল লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রযোজনায় সোহিনী দাশগুপ্ত তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছিলেন। তখন সেন্সর বোর্ডে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। পরে সে ঝামেলা মিটে যায়। তিস্তাও উষসীর মতোই বলছেন, “এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন একটা সিনেমা তৈরির প্রচেষ্টাকেই সাধুবাদ জানাচ্ছি।”
এই ছবিতে তিস্তা রয়েছেন এক কাউন্সেলরের ভূমিকায়। বাস্তবে নিজেও কাউন্সেলিং করে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অনেক সমকামীই তাঁর কাছে এসে বলেছেন, আত্মহননের কথা ভাবছেন তাঁরা। তিস্তা তাঁদের সাহস জুগিয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখানো হবে প্রিয়দর্শী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরেকটি জীবনের গল্প’। ৫০ মিনিটের এই শর্ট ফিল্মেও মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন তিস্তা। “গল্পটা এমন এক মানুষকে নিয়ে, যিনি সব কিছু অবজ্ঞা করে লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও আমরা এটা দেখাতে চাইছি, যাতে লোকে আসল বিষয়টা জানতে পারে,” বলছেন পরিচালক প্রিয়দর্শী।
তিস্তারা এখন এককাট্টা। ওঁরা বলছেন, “রাষ্ট্র যত বেশি অনুশাসন চালাবে, আমরা তত বেশি অনুপ্রেরণা পাব আরও কিছু করে দেখানোর!” |