প্রথম দু’বার ব্যর্থ হয়েছিল উৎক্ষেপণ। তৃতীয় বারে উৎক্ষেপণের সোয়া ঘণ্টা আগে জ্বালানি ট্যাঙ্কে ধরা পড়েছিল ফুটো! অবশেষে চার বারের চেষ্টায় সফল হল ইসরো। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযানের প্রাথমিক পরীক্ষাতেও পাশ করে গেল তারা।
ব্যাপারটা কী? রবিবার বিকেল ৪টে ১৮ মিনিটে ‘জিএসএলভি-ডি৫’ রকেট ব্যবহার করে ‘জিস্যাট-১৪’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কৃত্রিম উপগ্রহটিকে মহাকাশে নির্ধারিত কক্ষপথে স্থাপন করে রকেটটি। এই উপগ্রহটিকে টেলিযোগাযোগ ছাড়াও টেলি-মাধ্যমে চিকিৎসা এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো হবে। এ দিনের উৎক্ষেপণের সঙ্গে সফল হয়েছে ইসরোর তৈরি অতিশীতল তরল জ্বালানির (ক্রায়োজেনিক) ইঞ্জিনও। ইসরোর একটি সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় চন্দ্রযান অভিযানেও এই ইঞ্জিন-সহ জিএসএলভি রকেটকেই ব্যবহার করা হবে। তাই এ দিনের সাফল্য সেই অভিযানের মহড়াও বলা যেতে পারে। |
উৎক্ষেপণের মুহূর্তে। রবিবার শ্রীহরিকোটায়। ছবি: পিটিআই। |
ইসরো সূত্রের খবর, জিএসএলভি রকেটে অতিশীতল তরল (ক্রায়োজেনিক) জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। বছর কয়েক আগে থেকেই ইসরো নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অতিশীতল তরল জ্বালানির ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করে। ২০১০ সালে দু’বার জিএসএলভি রকেটে সেই ইঞ্জিন লাগিয়ে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। দু’বারই ব্যর্থ হন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। প্রথম বার উৎক্ষেপণে রকেটের ইঞ্জিনে গোলযোগ হয়েছিল।
দ্বিতীয় বার উৎক্ষেপণের পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল ইসরো। মাঝপথেই ধ্বংস হয়েছিল রকেট।
দু’বারের ব্যর্থতার পর এ বিষয়ে ফের গবেষণা শুরু করেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। ইঞ্জিনে কিছু অদলবদলও করা হয়। তার পরেই ঘোষণা করা হয়েছিল, ২০১৩ সালের ১৯ অগস্ট নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করে উৎক্ষেপণ করা হবে ‘জিএসএলভি-ডি৫’ রকেটকে। কিন্তু ১৯ অগস্ট উৎক্ষেপণের ৭৫
মিনিট আগে রকেটের জ্বালানি ট্যাঙ্কে ফুটো ধরা পড়ে। ফলে যাত্রা পিছিয়ে দেয় ইসরো।
ইসরো সূত্রের খবর, ১৯ অগস্টের ঘটনার পর রকেটের নক্শাতেও কিছুটা অদলবদল করেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। তার পর মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটি রকেটটিকে ফের ছাড়পত্র দেয়। গত ডিসেম্বর মাসে ‘জিএসএলভি-ডি৫’ রকেটের ফের নতুন যাত্রার দিন ঘোষণা করা হয়।
গত বছরের ৫ নভেম্বর শ্রীহরিকোটার এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র পিএসএলভি রকেট দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল মঙ্গলযানের। ১ ডিসেম্বর পাকাপাকি ভাবে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তা মঙ্গলের দিকে রওনা দিয়েছে। সেই অভিযানের সাফল্য ইতিমধ্যেই ভারতকে বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা এবং এরোস্পেস প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে এনে দিয়েছে। এ দিন সাফল্য সেই কৃতিত্বকে আরও কিছুটা বাড়াল।
ইসরো সূত্রের খবর, অতিশীতল জ্বালানির (ক্রায়োজেনিক) ইঞ্জিনে মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার তরল অক্সিজেন এবং মাইনাস ২৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক বিজ্ঞানীর কথায়, “এই ধরনের ইঞ্জিনের প্রযুক্তি খুবই জটিল। সেই পরীক্ষায় আমরা পাশ করেছি।” |