জেলার তিন জনপ্রিয় মিষ্টি সীতাভোগ, মিহিদানা ও ল্যাংচার মান বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের উদ্যোগে আজ, সোমবার সার্কিট হাউসে শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কর্মশালা শুরু হচ্ছে।
ওই কর্মশালায় তাঁদের হাতে কলমে শেখানো হবে, কী করে ওই মিষ্টিগুলি সংরক্ষণ ও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে রফতানি করা যায়। জেলা শিল্প কেন্দ্রের মার্কেটিং ম্যানেজার বিশ্বজিত্ মণ্ডল জানান, সোম ও মঙ্গলবার, পরপর দু’দিন ধরে বর্ধমানের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের সাহায্যে কাজটি করবে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এক্সপোর্ট প্রোমোশন সোসাইটি। মুম্বই থেকে আসা ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব প্যাকিং নামে একটি সরকারি সংস্থা এই প্যাকিং হাতে কলমে শেখাবে।
বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানার ইতিহাস বহু পুরনো। ১৯০৫ সালে তত্কালীন বড়লাট লর্ড কার্জনের বর্ধমান সফর উপলক্ষে রাজা বিজয়চন্দের নির্দেশে ওই মিষ্টিদুটি তৈরি হয়েছিল। ল্যাংচার সৃষ্টির পিছনেও জড়িয়ে রয়েছেন রাজা বিজয়চন্দ। কথিত আছে, রাজার নতুন ধরণের মিষ্টি চেখে দেখার ইচ্ছে হওয়ায় শক্তিগড়ের এক ল্যাংড়া বা প্রতিবন্ধী মিষ্টি প্রস্তুতকারক ওই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন। |
কিন্তু এখন ঐতিহ্যের ওই তিন মিষ্টির গুণগত মান অনেকটাই কমেছে। নিত্য নতুন সন্দেশ এবং আরও নানা মিষ্টির বাজারে সীতাভোগ, মিহিদানায় মানুষের টানও কমছে। তবে জেলার মিষ্টি ব্যবসায়ীদেরও দাবি, আজও সীতাভোগ, মিহিদানা, ল্যাংচার বাজার রয়েছে। ল্যাংচা তৈরি ও বিক্রি করেই বর্ধমানের শক্তিগড়ের কাছে প্যামড়াতে বেঁচে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে এই মিষ্টিগুলির সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো, বেশিদিন রাখা যায় না। গরমকালে তো একেবারেই রাখা যায় না। ফলে অনেকেই আত্মীয়ের বাড়ি বা দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চান না। এ বার সেই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতেই প্যাকেজিংয়ের ওই কর্মশালাকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির বর্ধমান শাখা। সংগঠনের সদস্য সৌমেন দাস বলেন, “বর্ধমানে ২৫৫টির মতো প্রতিষ্ঠিত ও চালু মিষ্টির দোকান রয়েছে। আমরা চাই সবক’টির মালিকেরাই এই কর্মশালায় যোগ দিন। কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আমাদের একটি বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। আমাদের সংস্থার ৬১ জন সদস্য ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন মিষ্টি ব্যবসায়ী ওই বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য রাখেন।” সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ ভকত বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় মিষ্টি বিক্রি করি। যদি সেই মিষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে যায় তাতে তো আমাদেরই লাভ।”
তবে প্রদীপবাবু বা সৌমেনবাবুর দাবি সত্ত্বেও শহরের অনেক ছোট মিষ্টান্ন ব্যাবসায়ীই এই কর্মশালার খবর পাননি। শহরের রথতলার এক ব্যবসায়ী উত্তম বিদের দাবি, “খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এই কর্মশালার খবর আমাদের কাছে পৌঁছোয় নি। আমরা কিছুই জানিনা”। একসময় সীতাভোগ, মিহিদানা তৈরিতে জেলা জুড়ে নাম ছিল ভৈরবচন্দ্র নাগের। তাঁর বংশধরেররা আজও ওই মিষ্টি তৈরির কাজে জড়িত। তাঁদেরই অন্যতম প্রসেনজিত্ দত্ত ও অনিরুদ্ধ নাগ বলেন, “কর্মশালার খবর পেয়েছি। সাগ্রহে যোগ দেব। কারণ, অনেকেই বিদেশে মিহিদানা বা সীতাভোগ নিয়ে যেতে চাইছেন। মিষ্টিদু’টিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারলে আমরা বিদেশে ওই দুই ঐতিহ্যের মিষ্টি পাঠাতে পারব।” ল্যাংচা প্রস্তুতকারকদের অনেকেরই অবশ্য দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই ল্যাংচার আধুনিক প্যাকেজিং করতে শুরু করায় বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। |