স্বামীবিচ্ছিন্না এক মহিলাকে গণধর্ষণের পরে, মাথা থেঁতলে খুনের অভিযোগ উঠল মালদহের সুজাপুরে। এলাকায় মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিক্ষোভ হল দু’দফায়।
শনিবার সকালে সুজাপুরের চাষপাড়ায় একটি তুঁতের জমির পাশের গর্তে ক্ষতবিক্ষত, অর্ধনগ্ন দেহটি দেখেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিহতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ধর্ষণকারীদের মধ্যে কাউকে চিনে ফেলায় ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে।” পুলিশ জানায়, মহিলার দেহটি যে জমিতে পড়ে ছিল সেখান থেকে ব্যবহৃত কন্ডোম, একটি বিদেশি মদের বোতল ও দু’টি প্লাস্টিকের গ্লাস উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থলে রক্তমাখা একটি ইট ও সজনে গাছের একটি মোটা ডালও মিলেছে। |
এ দিন সকালে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের সামনেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বছর ছাব্বিশের ওই মহিলার দেহটি আটকে রেখে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। সুজাপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের জিবু বিবির ক্ষোভ, “এক বছরে সুজাপুরে চার জন মহিলা খুন হলেন। এক জন অপরাধীকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এমন চলতে থাকলে এই এলাকায় সন্ধ্যার পরে কোনও মহিলা একা বাইরে বেরোতে সাহস পাবেন না।” পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
এ দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। সন্ধ্যায় গ্রামে আনার পথে সুজাপুর বাজারের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দেহ রেখে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ফের ঘণ্টা দু’য়েক বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুরেই নিহত মহিলার বাপেরবাড়ি। ২০১০-এ তাঁর বিয়ে হয়। তিনি মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন, এই অভিযোগে বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে ওই মহিলা বাবা-মা-দাদার কাছেই থাকতেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘পড়শির বাড়ি যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বার হয়ে ওই মহিলা আর ফেরেননি। তাঁর বাবা জানান, মেয়ে রাতে না ফেরায় আশপাশের বাড়িতে অনেক খোঁজাখুজি করা হয়। তিনি বলেন, “রাতে কোথাও মেয়ের খোঁজ পাইনি। শনিবার সকালে থানায় বেরোচ্ছিলাম। তখনই গ্রামের কয়েকজন বাড়িতে খারাপ খবরটা দেয়।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের দাবি, “মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। ধর্ষণ রোধ করতে ব্যর্থ পুলিশ। পুলিশি ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস এ বার আন্দোলনের পথে নামবে।” মালদহের জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র অবশ্য বলেন, “যারা এই জঘন্য কাজ করেছে, তাদের ছাড়া হবে না। পুলিশ সুপারকে বলেছি, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে হবে।” |