এটিএমে জালিয়াতি, পুরুলিয়ায় ধৃত তিন
টিএমে জালিয়াতি করতে তাদের মূল হাতিয়ার ছিল এটিএম কার্ডই! আর তাদের ‘টার্গেট’ ছিলেন মূলত এটিএমে টাকা তুলতে আসা বয়স্ক মানুষ। এ ভাবে বহু জায়গায় সফল জালিয়াতি সেরে পুরুলিয়ায় শেষরক্ষা করতে পারল না তারা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল তিন যুবক। সঞ্জয় কুমার, অসিত সিংহ, রবি কুমার নামে ওই ধৃত তিন জনই ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার মধুবন থানা এলাকার বাসিন্দা। সঞ্জয় ও রবির বাড়ি সিনিডিকাট গ্রামে। অসিত নোয়াগড়ের বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী চক্রের এই তিন সদস্যই যথেষ্ট শিক্ষিত। ওই চক্রের মূল পান্ডা বিহারের বাসিন্দা। দলে রয়েছে আরও দু’জন। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিন যুবককে পুরুলিয়া শহরের জেলা স্কুল মোড়ের কাছে একটি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার থেকে ধরেছে সদর থানার পুলিশ। পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “ধৃতেরা এটিএম কার্ড নিয়ে জালিয়াতি করা-সহ অন্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত। তাদের কাছে থেকে পাইপগান, গুলি, অন্য কিছু অস্ত্র আর ৭টি এটিএম কার্ড উদ্ধার হয়েছে।” এ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে মিলেছে একটি গাড়ি। সেটি চোরাই কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে তাদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
উদ্ধার করা এটিএম কার্ড। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জেলায় বিভিন্ন এলাকায় এটিএম কাউন্টার থেকে টাকা জালিয়াতির অভিযোগ এসেছিল। বেশ কয়েক জন গ্রাহক পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছিলেন, তাঁরা এটিএম কাউন্টারে গিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করেও সফল হননি। অথচ পরে দেখেছেন, যে পরিমাণ টাকা তাঁরা তুলতে গিয়েছিলেন, সেই টাকা তাঁর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগ ছিল, তাঁরা আদৌও ওই দিন এটিএম থেকে টাকা তোলেননি। কিন্তু, মোবাইলে এসএমএস এসেছে, নির্দিষ্ট তারিখে তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকাতেই এই ধরনের অভিযোগ ওঠার পরে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। পুলিশের দাবি, একটি আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীচক্র এই জেলায় এটিএম কাউন্টারে জালিয়াতি করতে শুরু করেছে বলে বিশেষ সূত্রে খবর মিলেছিল। সেই সূ্ত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিন যুবককে পাকড়াও করা হয়।
বেশ অভিনব কায়দায় ধৃতেরা এটিএম থেকে জালিয়াতি করে টাকা তুলে নিত বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মূলত দু’টি উপায়ে দুষ্কৃতীরা এই জালিয়াতি করত। প্রথমত, ছোট দলে ভাগ হয়ে একাধিক এটিএম কাউন্টারে অপারেশন চালাত তারা। সেখানে গিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মতো আচরণ করে তারা নজর রাখত এটিএম কার্ড ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ নন, এমন গ্রাহকদের দিকে। বিশেষভাবে তাদের লক্ষ্য ছিলেন বয়স্ক ব্যক্তি বা মহিলারা। ওই পুলিশ কর্তার কথায়, “যাঁরা কার্ড ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁদের সাহায্য করার অছিলায় কাউন্টারে ঢুকে কৌশলে তাঁদের এটিএম কার্ডের পিন নম্বর জেনে নিত দুষ্কৃতীরা। কৌশলে ওই গ্রাহকদের এটিএম কার্ড বদলে নিজেদের কাছে থাকা অন্য একটি কার্ড দিত গ্রাহককে। পরে গ্রাহকের কার্ড ও পিন নম্বর ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিত।”
এই কৌশলের পাশাপাশি এটিএমের কি-বোর্ডের পাশে ধাতব পাতে সরু তার জাতীয় কিছু লাগিয়ে কি-বোর্ড অচল করে দিত ওই জালিয়াতরা। সে ক্ষেত্রে মেশিনের স্ক্রিনের কি-বোর্ডে পিন নম্বর টিপলেও কাজ করত না। ততক্ষণে বাইরে থাকা জালিয়াত ঢুকে পড়ে ভিতরে। সাহায্য করার নামে পিন নম্বর ফের টাইপ করতে বলে গ্রাহককে। তবু টাকা না পেয়ে বিরক্ত গ্রাহক বাইরে বেরিয়ে যেতেন। পিন নম্বর তখনও দেওয়া থাকত স্ক্রিনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেশিন ছাড়ার আগে ‘ক্যানসেল’ বা ‘ক্লিয়ার’ বোতামটি টেপার কথা খেয়াল থাকে না অনেক গ্রাহকেরই। সেই সুযোগ নিয়ে গ্রাহক বেরিয়ে যেতেই ওই তার সরিয়ে পিন নম্বর টিপে টাকা তুলে বেরিয়ে যেত দুষ্কৃতীরা। পুলিশ সুপারের কথায়, “অভিনব কায়দায় অপরাধ করত ধৃতেরা। তাদের জেরা করে পুরো চক্রের হদিস এবং কোন কোন এলাকায় তারা এই ধরনের জালিয়াতি করেছে, সেই সম্পর্কে বিশদে তথ্য পেতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.