তিন বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে সিআইআইয়ের জাতীয় পরিষদের (ন্যাশনাল কাউন্সিল) বৈঠক বসতে চলেছে রাজ্যে। আগামী ১৭ জানুয়ারির ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনও বণিকসভার মঞ্চে উপস্থিত হবেন তিনি।
ওই বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহ আগে রাজ্যে লগ্নি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পা রাখছেন অনাবাসী ভারতীয় বাঙালিরাও। ৯ ও ১০ জানুয়ারি তাঁদের নিয়ে কলকাতায় আলোচনাসভার আয়োজন করছে অনাবাসী ভারতীয় বাঙালিদের সংগঠন নন-রেসিডেন্ট ওভারসিজ অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (এনআরওএবি) এবং বণিকসভা বিসিসিআই। এনআরওএবি সভাপতি নীলাংশু দে-র দাবি, “দোহা ও দুবাইয়ের সম্মেলনে তেমন সাফল্য আসেনি। তৃতীয়টি হওয়ার কথা ছিল লন্ডনে। কিন্তু রাজ্য আগ্রহ দেখানোয় তা বাতিল করে দিয়ে কলকাতায় আয়োজনের এই সিদ্ধান্ত।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ ক্ষেত্রেও আয়োজকদের দাবি, সম্মেলনে মুখমন্ত্রীর উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিসিসিআই সভাপতি কল্লোল দত্ত বলেন, “সম্মেলন নিয়ে রাজ্য আগ্রহ দেখিয়েছে। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র নিজে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে পাব।”
অনেকের মতে, সিআইআইয়ের সভা, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি ও অনাবাসী বাঙালিদের লগ্নির ইচ্ছায় ‘ঘরে ফেরা’র ঘোষণা আগামী দিনে রাজ্যের শিল্প-গতিপথ ঠিক করে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বস্তুত মমতা যে সিআইআই -এর সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল বণিকসভাটির নভেম্বর-সম্মেলনেই। এর পর জাতীয় পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য গত মাসে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে যান সিআইআই কর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, তাতে সাড়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত তাঁর ইচ্ছাতেই এই প্রথম কোনও পাঁচতারা হোটেলের বদলে টাউন হলে ওই বৈঠক হবে।
সিআইআই সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে থাকার কথা বণিকসভার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তথা ইনফোসিস-কর্তা এস গোপালকৃষ্ণন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় শ্রীরাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমিত মজুমদার, আদি গোদরেজ, আইটিসি-র যোগী দেবেশ্বর, টাটা স্টিলের ভাইস চেয়ারম্যান বি মুথুরামন, রাহুল বজাজ, এয়ারটেলের সুনীল ভারতী মিত্তল, হিরো গোষ্ঠীর পবন ও সুনীল মুঞ্জল, ফিডব্যাক ইনফ্রা-র বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়-সহ তাবড় শিল্প-কর্তাদের। এ ছাড়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, সন্দীপন চক্রবর্তী-সহ এ রাজ্যের শিল্পপতি ও শিল্পকর্তারাও সেখানে থাকবেন।
সুমিতবাবু বলেন, “যে কোনও নতুন সরকারেরই কিছুটা সময় লাগে। এ রাজ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। অবস্থা বদলাচ্ছে। তা নিয়ে শিল্পমহলে আগ্রহও রয়েছে। আমরা সেই সুযোগই কাজে লাগাতে চাই। শিল্প সম্ভাবনা ও রাজ্যের নীতি তুলে ধরতে চাই সকলের কাছে।”
উল্লেখ্য, এ রাজ্যে শেষ বার সিআইআইয়ের জাতীয় পরিষদের বৈঠক হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে। উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথা অনুযায়ী এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকাটা রেওয়াজ। যে কারণে এর আগে মমতার উপস্থিতি নিশ্চিত না-হওয়ায় প্রাথমিক প্রস্তাব সত্ত্বেও বৈঠকের জায়গা হিসেবে কলকাতার নাম বাতিল হয়েছিল। ১৭ জানুয়ারির বৈঠক ফলপ্রসূ হলে, সিআইআইয়ের ১২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবিদার হিসেবেও এগিয়ে থাকবে রাজ্য।
শিল্পমহলের মতে, জমি-নীতি সহ কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। কিন্তু শিল্প-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর এই উপস্থিতি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিশেষত যেখানে লগ্নি টানতে শিল্প নীতি ঘোষণা-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সচেষ্ট হয়েছে রাজ্য। |