ওঠানামা সমানে চলেছে। বুধবার রাতের পরে শুক্রবার সুচিত্রা সেনের শারীরিক অবস্থা ফের সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা কমে যাওয়ায় এ দিন সকাল থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। দুপুরের পরে তাঁর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। হৃদ্রোগ এবং ফুসফুসের রোগের চিকিৎসকেরা দফায় দফায় তাঁকে দেখছেন।
নায়িকার খোঁজ নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে যান। তবে সুচিত্রার কেবিনে যাননি তিনি। বলেন, “উনি নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে যে-ভাবে অন্তরালে রেখেছেন, আমরা সেই ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে সম্মান করি। তাই কেবিনে যাইনি। তাঁর মেয়ে মুনমুন সেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডাক্তারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা জানান, এ দিন নায়িকার শারীরিক অবস্থা কিছুটা সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছিল। পরে অবশ্য স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।” রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতাল ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার রাতে নায়িকার অবস্থা কিছুটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল। বেড়ে গিয়েছিল শ্বাসকষ্ট এবং নাড়ির গতি। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে অবশ্য অবস্থার উন্নতি হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুক্রবার ভোর থেকে আবার প্রবল শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে শুরু করেন সুচিত্রা। এর আগে কয়েক রাত ভাল ঘুম না-হলেও বৃহস্পতিবার রাতে ভালই ঘুম হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ভোরের দিকে শ্বাসকষ্টেই ঘুম ভেঙে যায়। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে ডেকে আনেন।
পরীক্ষা করে দেখা যায়, নায়িকার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তড়িঘড়ি খবর যায় মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের কাছে। হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন শ্বাসকষ্ট কমাতে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর বা বাইপ্যাপ-এর সাহায্য নেওয়া হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করা হয়। সেই কারণেই মেডিক্যাল বোর্ডের বাইরে ফুসফুসের রোগের দুই চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় ও পবন অগ্রবালকে ডেকে তাঁদের পরামর্শ চাওয়া হয়। তাঁরাও বাইপ্যাপের পক্ষেই রায় দেন।
বাইপ্যাপ দেওয়ার পরে সুচিত্রার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। দুপুরের পর থেকে একটানা না-দিয়ে কিছু ক্ষণ অন্তর বাইপ্যাপ দেওয়া হতে থাকে। তিনি উঠে বসেন। বাড়ি থেকে আনা স্যুপ, টোস্ট, আলুসেদ্ধ খান।
নার্স ও চিকিৎসকেরা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় সুচিত্রাকে এ দিন একটু বেশিই কাহিল দেখিয়েছে। কথাবার্তা বলেছেন সামান্যই। অন্যান্য দিন নিজের থেকেই তাঁদের কুশল জানতে চাইতেন। এ দিন আর তা পারেননি। নায়িকার বয়স এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি বলেই তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বেগে আছেন। তা ছাড়া আইটিইউ-এ একটানা বেশি দিন থাকলে কিছু সংক্রমণের ভয় থাকে। এ ক্ষেত্রে সেটাও ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।
ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মধ্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন সুচিত্রা। হৃৎস্পন্দনের গতি ও শ্বাসকষ্ট অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় গত রবিবার রাতে তাঁকে জেনারেল কেবিন থেকে আইটিইউ-এ স্থানান্তরিত করা হয়। |