প্রাথমিক স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না, শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করেন। এ নিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন তাঁরা। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তদন্তে প্রমাণিত হয়, এ সমস্ত অভিযোগ ছাড়াও ওই শিক্ষক ছাত্র ভর্তি করাতে বা ট্রান্সফারের শংসাপত্র দিতেও টাকা নেন। শুক্রবার শুনানির পরে ওই শিক্ষককে ওই চক্রেরই অন্য একটি স্কুলে বদলির নির্দেশ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তবে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শকদের একাংশের দাবি, ওই শিক্ষকের আরও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ অবশ্য বলেন, “ওই শিক্ষক ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তাই তাঁকে অন্য একটি স্কুলে বদলি করানো হয়েছে।” তবে এর আগে ওই শিক্ষককে মন্তেশ্বর চক্রের কামনাড়া-তাজপুর স্কুলে বদলি করানোর সুপারিশ এলেও, ওই শিক্ষককে যে মেমারি চক্রেরই তাহেরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করানো হয়েছে, তা কবুল করেছেন দেবাশিসবাবু।
মেমারি চক্রের ছালারপুর কদমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুহৃদ সিংহের বিরুদ্ধে গত ২০ মে প্রায় ৫৫জন গ্রামবাসী মেমারির বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডলের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁদের দাবি, ওই শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন না। ফলে স্কুলে ঢুকতে গিয়ে শিশুদের রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করেন তিনি। এছাড়া প্রায়ই এসআই অফিসে যাচ্ছি বলে ব্যক্তিগত কাজে চলে যান। মিড ডে মিলের খাবারও ছাত্রছাত্রীরা সময়ে ও ঠিক পরিমাণে পায় না। কোনও কোনও দিন তো মিড-ডে মিল জোটেই না বলেও তাঁদের অভিযোগ। বিধায়ক ওই অভিযোগ হাতে পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন মেমারি ১ ব্লকের প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শককে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে বর্ধমানের মহকুমাশাসকও (দক্ষিণ) জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)কে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন গত ১ জুলাই।
গত ১৯ অগস্ট অভিযোগের তদন্ত করতে ওই স্কুলে যান জেলা সহ-বিদ্যালয় পরিদর্শক (অ্যাকাডেমিক) সুকদেব নন্দী। তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, শিক্ষক সুহৃদ সিংহ সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে ছাত্র ভর্তির জন্য টাকা নিয়েছেন। এমনকী চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠা ছাত্রছাত্রীদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিতেও টাকা নিচ্ছেন তিনি। এই অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও সরকারি নিয়ম বহির্ভূত। সুকদেববাবু তাঁর রিপোর্টে আরও উল্লেখ করেন, স্কুলের লেখাপড়ার মান অত্যন্ত খারাপ। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রেরা সামান্য বাক্য পড়তে বা বিদ্যালয়ের নাম বলতে পারছে না। এছাড়া রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশ ছিল, ১৫ অগস্ট সমস্ত প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রদের মিড-ডে মিল খাওয়াতে হবে। তা সত্ত্বেও ছাত্রেরা তা পায়নি। এরপরেই ওই শিক্ষকে শো-কজ করেন তিনি।
এরপরেই ওই শিক্ষককে মন্তেশ্বর চক্রের কামনাড়া-তাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করানোর সুপারিশ করা হয় সহ-বিদ্যালয় পরিদর্শকের তরফে। কিন্তু শুক্রবার ওই শিক্ষককে ডেকে ফের একদফা শুনানি হয়। অভিযোগ, শুনানিতে অভিযোগকারী গ্রামবাসীদের কাউকে ডাকা হয়নি। তবে ছিলেন তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের নেতারা ও ওই প্রধান শিক্ষক। শুনানির পরে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ জানিয়ে দেন, শিক্ষক তাঁর সমস্ত কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করেছেন। মেমারি চক্রের একটি স্কুলে ওই শিক্ষককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকদের একাংশের দাবি, ওই শিক্ষককে লঘু দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) মৃণালকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁকে বদলি করা হয়েছে। কোথায় হয়েছে তা জানি না। খোঁজ নিতে হবে।”
মেমারি চক্রের অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষকের বদলির খবর পেয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরাও। তাঁদের মধ্যে বাপি রানা, ভক্তিপদ বোলেন, কাকলি বোলেন, নেপাল সরেন, বিজয় মুর্মুরা বলেন, “ওই শিক্ষক খারাপ কাজ করেও পার পেয়ে গেলেন। এটা মানতে পারছি না।”
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক সুহৃদ সিংহের দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল। গ্রামের কিছু লোক আর প্রাথমিক শিক্ষক সংসদের কয়েকজন অফিসারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমাকে বদলি হতে হয়েছে।” |