গাড়ির এলপিজি-র দাম বাড়ার প্রতিবাদে পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেললেন একদল অটোচালক।
দু’দিনের মধ্যে অটোর গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। এলপিজি গ্যাসের এই লাগামহীন দাম বৃদ্ধির জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রতিবাদে নামেন দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতার অটোচালকেরা। সে কারণে বন্ধ রাখা হয় বিভিন্ন রুটের অটো। যার জেরে সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
সকালের দিকে শহরের রাস্তায় অল্পবিস্তর অটো বেরোলেও সাড়ে ন’টার পর থেকে অধিকাংশ চালক অটো বসিয়ে দেন। তাঁদের দাবি, গ্যাসের দাম অবিলম্বে কমাতে হবে। যতক্ষণ না সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ কোনও অটো চালানো হবে না। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ একই দাবি তুলে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন অটোচালকেরা। এলপিজি-র মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে স্লোগানও দেন তাঁরা।
এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ে রাস্তার ধারে সার দিয়ে অটো দাঁড়ানো। কোনওটার মধ্যে চালকেরা নিজের মতো বসে গল্পগুজব করছেন। কোথাও বা একাধিক চালকেরা মিলে জটলা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করছেন। হাজরা-পার্ক সার্কাস রুটের রাকেশ সিংহ নামে এক চালক এ দিন বলেন, “হঠাৎ করে গ্যাসের দাম বেড়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, যাত্রীদের ভাড়াও বাড়ানো হচ্ছে না। গত কাল সারাদিন অটো চালানোর পরে প্রায় ৬০ টাকার লোকসান হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে রোজ লোকসান করে গাড়ি চালানো যায়? তাই এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও রুটেই অটো চালাব না বলে ঠিক করেছি।” |
এ দিকে, সকালেই রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ডাকা অটোচালকদের অবস্থান বিক্ষোভের ফলে বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অটোচালকেরা রাস্তা জুড়ে প্রতিবাদে নামার ফলে আটকে যায় অন্যান্য গাড়িও। তৈরি হয় আংশিক যানজটও। দাবি একটাই, অবিলম্বে গ্যাসের দাম কমাতে হবে। যাত্রীদের অভিযোগ, এর আগেও মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। তবে কোথায় কখন বিক্ষোভ দেখানো হবে, তা আগের থেকে ঘোষণা করে অবরোধ ডাকা হলে তাঁরা সেই মতো গন্তব্যে পৌঁছনোর বাবস্থা করে নিতেন।
এ দিন দুপুর ১২টা থেকে দেশপ্রিয় পার্কে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিটিং ডেকেছিল সিটু এবং আইএনটিইউসি। সিটু-র অটো ইউনিয়ন নেতা বাবুন ঘোষ বলেন, “গত দেড় মাসে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১২ টাকা ১৩ পয়সা। এই দাম বাড়ে চুপিসাড়ে। তার বিরুদ্ধেই অটোচালকেরা প্রতিবাদ করেছে।” আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বাস এবং অটোর ভাড়া বৃদ্ধি করে মানুষের উপরে চাপ বাড়াতে চাননি। আমরাও তাঁর সঙ্গে সহমত। কিন্তু কিছু অটোচালক নিজেদের মতো করে ভাড়া বৃদ্ধি করছেন। এটা আমরা সমর্থন করি না।”
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার সিলিন্ডারের যে দাম বাড়াচ্ছেন তার কড়া সমালোচনা করে দোলা বলেন, “বুধবারও গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ১২ টাকা করে বেড়েছে। এর ফলে অটোচালকদের অসুবিধা হচ্ছে।” তিনি আশা করেন, রাজ্য সরকার এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। তাঁর হুঁশিয়ারি, কেন্দ্রীয় সরকার যদি সিলিন্ডারের দাম না কমায়, তা হলে পরবর্তীকালে তাঁরা তীব্র আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। |