হৃদরোগে আক্রান্ত প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। দেশদ্রোহের মামলায় বৃহস্পতিবার বিশেষ আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎই মুশারফের বুকে ব্যথা শুরু হয়। ৭০ বছরের প্রাক্তন সেনাশাসককে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতালে। তাঁকে রাখা হয়েছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ। তাঁর জ্ঞান রয়েছে। সন্ধেয় চিকিৎসকেরা জানান, পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনে তাঁকে বিদেশেও পাঠানো হতে পারে।
দেশদ্রোহ মামলায় গত কালই আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল মুশারফের। কিন্তু চাক শাহজাদে তাঁর খামারবাড়ির কাছ থেকে বোমা উদ্ধার হওয়ায় শেষমেশ আর আদালতে যেতে পারেননি তিনি। দীর্ঘ স্বেচ্ছা-নির্বাসন শেষে দেশে ফেরার পর থেকে ওই খামারবাড়িতেই গৃহবন্দি রয়েছেন মুশারফ। গত কাল হাজিরা দিতে না পারায় তিন বিচারকের বেঞ্চ আজ তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল। সেই মতো এ দিন চাক শাহজাদ থেকে আদালতে যাওয়ার রাস্তা কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয় সাময়িক ভাবে। মোতায়েন করা হয় এক হাজার পুলিশ। মোতায়েন ছিল বম্ব স্কোয়াডও। |
আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা সমর্থকের। ছবি: এ এফ পি। |
মুশারফের মুখপাত্র আসিয়া ইশাক জানান, বুধবার রাত থেকেই শরীরটা খারাপ ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের। খামারবাড়িতে এসে তাঁকে দেখে গিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু আজ আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথেই মুশারফ ঘামতে থাকেন, বুকে ব্যথার কথা জানান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিসকেরা জানিয়ে দেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রাক্তন সেনাশাসক। হাসপাতালে মুশারফের পাশে সর্বক্ষণ রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। দুবাই থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে মাকে। করাচি থেকে আসছেন মেয়ে। তবে মুশারফের সঙ্গে এখন কাউকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মুশারফের অসুস্থতায় আপাতত স্থগিত থাকল দেশদ্রোহের মামলার শুনানি। ২০০৭-এ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি ও সেই সূত্রে সংবিধান অবমাননার অভিযোগে মুশারফের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা শুরু করেছে পাক সরকার। এই প্রথম পাকিস্তানের কোনও সেনাশাসককে দেশদ্রোহের অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন জেল, এমনকী ফাঁসির সাজাও হতে পারে তাঁর। কারও কারও প্রশ্ন, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাতেই কি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন মুশারফ। এই প্রসঙ্গে মুশারফের আইনজীবী আহমেদ রাজা কাসুরি বলেন, ‘‘মুশারফ একজন কম্যান্ডো। কম্যান্ডোরা যুদ্ধ করেন। মুশারফ কখনওই ভীত নন। তিনি আদালতে আসতে চেয়েছিলেন, অসুস্থতার জন্য পারেননি।” আদালতে আইনজীবীরা আজ মুশারফকে সোমবার পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার আর্জি জানান। তা মঞ্জুর করেছেন বিচারক।
মুশারফের দুই আইনজীবী আবার আজ আদালতে দাবি করেন, গত কয়েক দিন ধরে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গাড়িতে হামলাও চালানো হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এতে মদত রয়েছে বর্তমান সরকারেরই। বিচারক বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিরোধী ‘পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি’-র কাছ থেকে অবশ্য কোনও সহানুভূতি পাননি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। বরং পিপিপি প্রধান বিলাবল ভুট্টো পৃথক মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে মুশারফের অসুস্থতা যাচাইয়ের দাবি জানিয়েছেন। দেশদ্রোহের মামলা এড়াতেই মুশারফ অসুস্থতার অজুহাত দেখাচ্ছেন বলে খোলাখুলি অভিযোগ বিলাবলের। এমনকী তিনি বলেছেন, “বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, এই কাপুরুষটা এককালে সেনার উর্দি গায়ে দিয়েছে।” |