ছ’বছর পেরোলেও একচুলও এগোল না দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটকপুকুরে মুসলিম ছাত্রী নিবাস তৈরির কাজ। কেন এখনও কাজ থমকে রয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
২০০৮ সালের ৩ জানুয়ারি ঘটকপুকুরের ২ বিঘা সরকারি খাস জমিতে ছাত্রী নিবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আবদুস সাত্তার। কিন্তু হামিদ আলি মোল্লা নামে এক জন চাষি ওই জমিতে চাষ করতেন। তিনি পুনর্বাসন দাবি করায় কাজ আর এগোয়নি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, হামিদ মোল্লাকে ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে তৃণমূল এলাকায় ক্ষমতায় আসার পরে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আবার তাঁকে ওই জমিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। হামিদ মোল্লার দাবি, “আমি ওই জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করি। ওই জমির পরিবর্তে আমাকে দেড় কাঠা জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি তা পাইনি। জমি পেলে সরে যাব।” যদিও প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লার বক্তব্য, “ওই জমি আমরা সংখ্যালঘু দফতরকে দিয়েছিলাম হস্টেল তৈরির জন্য। যেহেতু সরকারি জমি অধিগ্রহণের কোনও প্রশ্নই নেই, তাই পুনর্বাসন দেওয়ার কোনও কথা ছিল বলে আমি জানি না। ” |
ঘটকপুকুরের ওই ছাত্রী নিবাস তৈরি হলে যেমন উপকৃত হবেন ভাঙড়ের সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েরা, তেমনই উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া, মালঞ্চ, মিনাখাঁ-সহ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা ওই নিবাসে থেকে ভাঙড় কলেজ-সহ কলকাতার বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।
তৎকালীন ভাঙড় ১ জোনাল কমিটির সম্পাদক সাত্তার মোল্লা বলেন, “সংখ্যালঘু মেয়েদের কথা ভেবে ছাত্রী নিবাস তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেই মতো মাদ্রাসা শিক্ষা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর প্রায় দেড় কোটি টাকা অনুমোদনও করেছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়েই তা বন্ধ হয়ে যায়।” তৎকালীন সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী আবদুস সাত্তারও বলেন, “সংখ্যালঘু মেয়েদের অসুবিধার কথা ভেবে ওই হস্টেলের জন্য টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার এসে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে।” যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য কাইজার আহমেদের বক্তব্য, “হামিদ মোল্লার কোনও রকম কোনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি সিপিএম। আমরা ওঁর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। যত দ্রুত সম্ভব ওই হস্টেল তৈরির কাজ শুরু করব আমরা।” বর্তমান সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বলেন, “ওই এলাকায় ছাত্রী নিবাস তৈরির কাজ কেন বন্ধ রয়েছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত যাতে কাজ শুরু করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।” বারুইপুর মহকুমাশাসক পার্থ আচার্যও বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” |