অনিল কুম্বলে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভবিষ্যৎ যুগ্ম সচিব। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল।
২০১৪-র জুলাই-শেষে লেখার দ্বিতীয় প্যারাটাও কি সত্যি হয়ে যাবে? এই মুহূর্তে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, বছরের প্রথম দিন স্থানীয় ক্রিকেটমহলের কোনও কোনও অংশ আলোড়িত থাকল এই বছরই প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আবির্ভাব নিয়ে।
এ বার জুলাইয়ে সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভার সময় যদি নির্বাচন না-ও হয়, যুগ্ম-সচিব পদে একজনকে বেছে নিতে হবে। একটা পদ খালি হচ্ছে। যেহেতু বর্তমান যুগ্ম সচিব সুজন মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অতীতে এ সব ক্ষেত্রে সহ-সচিব বা কোষাধ্যক্ষ প্রোমোশন পেয়েছেন সচিব পদে। বর্তমান কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র ইতিমধ্যেই সচিব পদে পুরো মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর ফেরার প্রশ্ন নেই। খাতায়-কলমে যুগ্ম সচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন জন। বর্তমান দুই সহ-সচিব প্রবীর চক্রবর্তী ও জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রাক্তন সহ-সচিব নরেশ ওঝা।
কিন্তু বছরের প্রথম দিনের কানাঘুষোয় পরিষ্কার, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্প হিসেবে আচম্বিতে উঠে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বাবা প্রয়াত চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি-র সঙ্গেই দীর্ঘ দিন জড়িয়ে ছিলেন। দাদা স্নেহাশিস ছিলেন সহ-সচিব। সুতরাং ক্রিকেট প্রশাসন তাঁদের রক্তে। শোনা যাচ্ছে, ভোটহীন নির্বাচনে তাঁকে মনোনীত করা হলে তাতে সৌরভেরও আপত্তি নেই। ভোট সংগ্রহের নির্বাচনে নামতে এখনও তাঁর মন সায় দিচ্ছে না। সত্যি কি সিএবি প্রশাসনে আসতে পারেন? এ দিন সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, “ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে পারলে তো ভালই হয়। তবে জুলাই এখনও অনেক দেরি। এখনই কথা বলার মানে হয় না।” |
অথচ জনশ্রুতি এই যে, সৌরভের সঙ্গে ইতিমধ্যে সিএবি-র কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্তা কথা বলেছেন। বিস্তারিত না হলেও সামান্য আলাপ-আলোচনা হয়েছে। একটা সময় শোনা যাচ্ছিল যে, কুম্বলে যেমন কর্নাটকের প্রেসিডেন্ট পদে এসেছিলেন, তেমনই সৌরভকে সরাসরি ভাবা উচিত ডালমিয়ার উত্তরাধিকারী হিসেবে।
নতুন চিন্তা হল, সরাসরি শীর্ষপদে না এনে তাঁকে শিক্ষানবিশি করানো হোক। যাতে ভবিষ্যতে অনেক স্বচ্ছন্দে শীর্ষ পদে যেতে পারেন।
শিক্ষানবিশি মানে কি সহ-সচিব পদ থেকেও শুরু করতে পারেন সৌরভ? শুনে হাঁ হাঁ করে উঠলেন কিছু কর্তা। বললেন, “না, না। সৌরভকে আনলে একেবারে সেক্রেটারি করে। তার নীচে নয়।” শোনা গেল, সৌরভ নিজেও নাকি আভাস দিয়েছেন তিনি একটা সিস্টেমে ঢুকে জিনিসটা বুঝতে চান। রাতারাতি টঙে চড়তে রাজি নন। তবে সচিব পদের নীচ থেকে শুরু করতে রাজি না-ও হতে পারেন।
ইস্টবেঙ্গলের মুখ্য কর্তা দেবব্রত সরকার বুধবার রাতে বললেন, “সৌরভকে পুরো জিনিসটা জানার জন্য একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতেই হবে। প্রশাসনের পার্টটাও প্রচুর শেখার আছে। তবে ও এলে আমরা স্বাগত জানাব। আর ওকে যতটুকু দেখেছি কাজটা শিখে নিতে একটুও অসুবিধে হবে না।”
সিএবি-তে কেউ কেউ এ দিন বলছিলেন, জুলাইয়ের আগে পরিস্থিতি অনেক বদল হবে। মধ্যিখানে দেশে নির্বাচন আছে। তবে সৌরভের ক্ষেত্রে মনে হয় না কোনও পরিবর্তন হবে বলে। ও যদি আসতে চায়, হয়তো বিরাট কোনও বিতর্ক না তৈরি করেই ঢুকে পড়তে পারে।
ভারতীয় বোর্ডে যেমন প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থীকে যেতে হয় সিএবি সংবিধানে তেমন কিছু নেই। কেউ প্রথম বার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে সরাসরি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও সচিব বা প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন।
রাজ্যের বর্তমান শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক সৌরভকে অবশ্যই দৌড়ে সাহায্য করবে। সৌরভকে যাঁরা আনতে চান, তাঁদের ধারণা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রকম কোনও উদ্যোগের কথা শুনলে খুব খুশিই হবেন।
জগমোহন ডালমিয়া তিনি কী ভাবছেন? সিএবি প্রশাসনে সৌরভ আসতে চাইলে ডালমিয়ার মনোভাব কী হবে, তা নিয়ে সংস্থার অন্দরমহলে বেশ কিছু দিন মিলিয়ন ডলারের জিজ্ঞাসা। কোচিং কমিটির প্রধান হিসেবে এ বছর খুব অ্যাকটিভ ভূমিকা নিয়েছেন সৌরভ। নিয়মিত ডালমিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইডেনের উইকেট তৈরি থেকে বিভিন্ন ক্রিকেট-মডেল তৈরিতে তাঁর পারফরম্যান্সে সিএবি প্রধান খুব খুশিও। কিন্তু মূল ধারার প্রশাসনে তা বলে কি স্বাগত জানাবেন? তাঁর ব্যক্তিত্ব তো ডালমিয়ার কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে?
তা, রাতে আনন্দবাজারকে ডালমিয়া বললেন, “সৌরভ এলে তো ভালই হয়। তবে জুলাই এখনও অনেক দেরি। অনেক কিছু এর মধ্যে ঘটতে পারে।” সৌরভও বারবার তা-ই বলছেন যে জুলাই দেরি। কিন্তু যোগ করছেন, এ বছর ক্রিকেটের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকা তাঁর অন্যতম লক্ষ্য।
সাংসদ এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব আপাতত অন্য ‘ড্রাইভে’ সরিয়ে রাখা। বিজেপিকে ‘না’ করেছেন সরাসরি বলতে চান না। কিন্তু ইঙ্গিতটা সে দিকেই।
আর ভাবভঙ্গিতে মনোভাবও যেন পরিষ্কার যদি নেমে পড়তেই হয়, সেন্ট্রাল হল নয়। ইডেন গার্ডেন্স। |