সম্পাদক সমীপেষু ...
বিদেশি উপাচার্য?
বাজারে গরম খবর যে, কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষের শিখরে তুলতে বিদেশ থেকে উপাচার্য আমদানির তোড়জোড় চলছে। সংকেত পরিষ্কার যে, কর্তৃপক্ষ মনে করেন এই বিশাল দেশে দিশি মানুষের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে না। দেশি মানুষকে যদি এমনই অবজ্ঞা করা হয়, তা হলে এ দেশের ছেলেমেয়েদের এ বিশ্ববিদ্যালয়, আশা করি, তাদের জন্যই মাথায় গুঁজে দেওয়া হচ্ছে যে, এখানে সে রকম মাপের লোকই নেই, বিদেশি দিয়েই চালাতে হবে। এই সংকেতও বোঝা যাচ্ছে যে, বিদেশি মানুষ এলেই বিশ্ববিদ্যালয় এক ঝলকে উৎকর্ষের শিখরে লাফিয়ে চলে যাবে।
এই দুর্ভাগ্যগ্রস্ত চিন্তাধারা দেশ স্বাধীন হওয়ার ৬৭ বছর পরে। যে কলেজে পড়াশোনা করেছি, যৌবনে যেখান থেকে বিজ্ঞানের তথা সাহিত্যের অপূর্ব স্বাদ পেয়েছি, সেই প্রতিষ্ঠানে আজ আত্মবিশ্বাসের ও আত্মনির্ভরতার এই মাপের হাহাকার হতে পারে, ভাবলেই দুঃখে, হতাশায় মন-প্রাণ ভারাক্রান্ত হয়।
ছিলেন সারদা গুপ্তও
শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) রচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় গান ‘কলকাতার ভুল’ (রেকর্ড নং ge 2008,1933)-এর প্রথম কথাগুলি ‘কলকাতা যে কেবল ভুলে ভরা’ (‘হাসির গান’, কলকাতার কড়চা, ৯-১২) নয়। প্রকৃতপক্ষে গানটি শুরু হয় এই ভাবে, ‘মরি হায়রে/কলকাতা কেবল ভুলে ভরা/সেথায় বুদ্ধিমানে চুরি করে বোকায় পড়ে ধরা...’।
কড়চার প্রতিবেদনে সে কালের হাসির গানের শিল্পীদের কথায় অনুচ্চারিত থেকে গেল দা’ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহভাজন সারদা গুপ্তর নাম। এখানে বলা দরকার, পরবর্তী কালে ‘কলকাতার ভুল’ গানের জবাবে দাদাঠাকুরের ছদ্মনামে (আত্মঘাতী দেবশর্মা) রচিত ‘কলকাতার খেদ’ (রেকর্ড নং qs-191, may 1937) গানটি গেয়েছেন সারদা গুপ্ত। গানটি ছিল এই রকম, ‘মনের দুঃখে কলকাতা কেঁদে বলে ভাই/আমার মধ্যে ভুল পেলে, ভুল কি আর কোথাও নাই?’ গত শতকের ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশকে সারদা গুপ্তের কণ্ঠে বেশ কিছু হাসির গানের গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশ পায়। কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। এখানে সে সময় একক ভাবে নিয়মিত হাসির গানের অনুষ্ঠান করতেন। সারদা গুপ্ত হাসির গানের অনুপ্রেরণা ও পরবর্তী কালে তালিম পেয়েছিলেন নলিনীকান্ত সরকারের কাছে। নলিনীকান্ত সরকার সারদা তাঁর গায়কিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁর উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘হাসির গানের পথ নিয়েছ/হাস্যভরা জীবন হোক,/পূর্ণ থাকুক সদানন্দে/নিত্য-মধুর চিত্ত-লোক’ (২৮ কার্তিক ১৩৪৮)।
কলকাতা বেতারে থাকাকালীন দা’ঠাকুরের সঙ্গে তিনি বেশ কিছু ব্যঙ্গরসাত্মক গানের অনুষ্ঠান করেছেন। দা’ঠাকুরের গীতি-সহচর হয়ে সারদা গুপ্ত যে দিন প্রথম বেতারের অনুষ্ঠানে অবতীর্ণ হলেন, সে দিন শুরুতেই দা’ঠাকুর বললেন, “আজ আর শ্রোতারা শুধু আমার কচকচানি শুনবেন না। আমার সঙ্গে আমার গীতি-সহচর হয়ে উপস্থিত রয়েছে সকলের বিশেষ পরিচিত শিল্পী সারদা গুপ্ত। আমি কিছু বলব আর আমার হয়ে গান ধরবে সারদা। কারণ, আমি যেমন সুরকানা তেমনই তালকানা। সংগীতের ক্ষেত্রে আমি ধৃতরাষ্ট্রের মতোই অন্ধ। তাই বেতার কর্তৃপক্ষ আজ থেকে আমার একটি ‘গান-ধারী’ জুটিয়ে দিয়েছেন। তবে ধৃতরাষ্ট্রের ‘গান্ধারী’ ছিল ‘স্ত্রী’। আমার ‘গান-ধারী’ পুরুষ সারদা”। এক কালে কলকাতা বেতার কেন্দ্রের ব্যঙ্গরসাত্মক গানের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে ‘পঞ্চভূত’ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন সে কালের পাঁচ কিংবদন্তি শিল্পী শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (পণ্ডিত ভূত), বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (ভদ্র ভূত), হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (বিপ্র ভূত), নলিনীকান্ত সরকার (অদ্ভুত), সারদা গুপ্ত (গুপ্ত ভূত)। দা’ঠাকুর ও সারদা গুপ্তর সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে দা’ঠাকুরের একটি ছবির উপর কিছু লিখে দেওয়ার জন্য সারদা গুপ্ত অনুরোধ করলে তিনি লিখলেন ‘তুই মোর কেহ নস/আমি তোর নহি কেহ/পাতানো নাতির পরে/তবু কেন এত স্নেহ’।
(তথ্য ঋণ: রঙ্গরসের অবর্তনে, পুরানো সেই দিনের কথা, শ্যামলকুমার গুপ্ত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.