|
|
|
|
আপ-ঝড় ভোট না কাটে, চিন্তায় মোদী
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ১ জানুয়ারি |
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জনমুখী পদক্ষেপ কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর।
চিন্তার কারণ এই নয় যে, লোকসভা ভোটে অরবিন্দের আম আদমি পার্টি (আপ) দেশে বিজেপির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দিল্লি বিধানসভা ভোটের হিসেব থেকে দু’টি বিষয় পরিষ্কার।
এক, বেশ কিছু আসনে বিজেপির ভোটে থাবা বসাতে পারে আপ। ফলে জেতা আসনও মোদীর দলের হাতছাড়া হতে পারে। এবং
দুই, প্রচারের প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়ে যে শহরাঞ্চলে, সেখানেই মোদীর প্রতি তিলে তিলে গড়ে তোলা সমর্থন কেড়ে নিয়ে যেতে পারেন অরবিন্দ। সরকার গড়তে প্রতিটি আসন যখন মোদীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আপ।
দিল্লি বিধানসভা ভোটের আগে লোকসভা ভোটে দেশে ১০০টির মতো আসনে লড়ার কথা ভাবেন অরবিন্দ। দিল্লির নির্বাচনে বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরে প্রায় ৩০০টি আসনে লড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তিনি। দিন পনেরোর মধ্যে প্রার্থীদের প্রথম তালিকাটিও ঘোষণা করে দিতে চাইছেন অরবিন্দ। রাজ্যে-রাজ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও শুরু করে দিয়েছেন তাঁর দল।
মাস কয়েক আগে নরেন্দ্র মোদী এ ভাবেই দেশজুড়ে নতুন সদস্য সংগ্রহের অভিযান শুরু করেছিলেন। যুবকদের মধ্যে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা দেখে সঙ্ঘ পরিবারও মোদীর হয়ে ময়দানে নেমেছে। কিন্তু দিল্লিতে আপ-এর উত্থানের পর, বিশেষ করে অরবিন্দ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার তিন দিনের মাথায় যে ভাবে বিনামূল্যে জল ও বিদ্যুতের মাসুল অর্ধেক করারঘোষণা করে দিয়েছেন, তাতে আমজনতার মধ্যে সদর্থক বার্তা গিয়েছে। |
দিল্লি বিধানসভার অধিবেশনের প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন
জানাচ্ছেন
বিধানসভা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি বিধায়ক হষর্বধন। ছবি: পিটিআই। |
মোদীর এক শীর্ষ সেনাপতির কথায়, “রাজনীতি চলে ধারণা ও ভাবমূর্তির ভিত্তিতে। মোদীর সুশাসন সকলের কাছে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু একটি নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া কেজরিওয়ালের উত্থান ও তিন দিনের মাথায় প্রতিশ্রুতি পালনও নজর কাড়ছে সাধারণ মানুষের। দীর্ঘমেয়াদে দিল্লির অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, সেটা পরের কথা। কিন্তু অরবিন্দ বিধানসভায় এক বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে ফেলার পর লোকসভা ভোট পর্যন্ত এই গতিবেগ ধরে রাখলে অন্য দলকে নয়া কৌশল রচনার কথা ভাবতে হবে। অরবিন্দের ধাক্কাতেই মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস সরকারকে বিদ্যুৎ মাসুল কমাতে হচ্ছে। কেজরিওয়ালের চাপেই যে রাজস্থানে বিজেপির নতুন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি কমানোর যে ঘোষণা করেছেন, মানুষ তা বিলক্ষণ বোঝেন।”
অরবিন্দের এই জনমুখী পদক্ষেপের কৌশলকে সমূলে বিনাশ করার জন্যই আসরে নেমেছেন মোদীর কৌশল রচনার রূপকার অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি আপ সরকার জলের দাম আদৌ কমাতে পারেনি, শুধু ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়েছে। এর ফলে রাজ্যের অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। ধার বাড়বে। সব থেকে বড় কথা, দিল্লির সিংহভাগ মানুষই এই হ্রাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে। কারণ, দিল্লিতে ১৮ লক্ষ জলের সংযোগ রয়েছে। বাকিদের নেই। যার মধ্যে বস্তি থেকে বহুতল বাড়ি, সবই রয়েছে। ১৮ লক্ষের মধ্যে মাত্র ৮.৫ লক্ষ মিটার কাজ করে। বাকিগুলি অচল। এক দিকে দিল্লির অর্থনীতির উপরে যেমন বোঝা বাড়ছে, তেমনই জনমুখিতা নিয়ে প্রচার হলেও আখেরে সেটি নিছকই চমক।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, আম আদমি পার্টিকে সামনে রেখে আসলে নরেন্দ্র মোদীকে যতটা সম্ভব দুর্বল করার লক্ষ্য নিয়েছে কংগ্রেসই। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের আর কেন্দ্রে ফিরে আসা সম্ভব নয়। মোদী কংগ্রেস-বিরোধিতার পরিসরটি দখল করে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় কংগ্রেস নিজে না জিতুক, মোদীকে ঠেকাতেই আপ-কে শিখণ্ডি খাড়া করার কৌশল নিয়েছে।” বিজেপির মতে, কংগ্রেস নিজের ক্ষতিটা বুঝতে পারছে না। দিল্লি বিধানসভাতেও একই কৌশল নিয়েছিল তারা। আখেরে বিজেপির ভোটের পাশাপাশি কংগ্রেসের ভোটেও থাবা বসিয়েছেন কেজরিওয়াল। ফলে সরকার গড়তে না পারলেও মোদীর দাপটে বিজেপি অন্তত একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে, আর কংগ্রেস মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিজেপি-র কথায়, লোকসভাতেও এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে কংগ্রেস একই
অবস্থার মুখে পড়বে। তাঁদের দাবি, জানুয়ারির পর থেকে মোদী দেশজুড়ে প্রচারের ঝড় তুললে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি উভয়েরই অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
কিন্তু তাঁদের এই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণার মধ্যেও কোথায় যেন মাথাব্যথারই লক্ষণ! |
|
|
|
|
|